অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান
সিভিল মোকদ্দমাকে প্রধানত চারটি সিস্টেমে ভাগ করা যায়, আর তাহল-
(১) প্রতিযোগিতা মূলক পদ্ধতি (Adversarial Process) : আমাদের বাংলাদেশে দেওয়ানি মোকদ্দমার প্রকৃতি Adversarial Process বা accusatorial ধরনের। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটিই দুটি পক্ষের মাঝে একধরনের প্রতিযোগিতা। দেওয়ানি মোকদ্দমার এই দুটি পক্ষের একটিকে বলা হয় বাদি এবং অন্যটিকে বলা হয় বিবাদি। এখানে আদালত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।মামলার গঠনে প্রক্রিয়ার (Preparation of the case) আদালতের কোন ভূমিকা নেই।পুরো trial বা বিচার কার্যক্রমকে আদালত কর্তৃক একধরনের inquiry বা তদন্ত বলা যাবেনা।বরং বিচার কার্যক্রম হল এক ধরনের শুনানি যেখানে দুই পক্ষ যুক্তিতর্কের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ প্রমান বা খন্ডনের চেষ্টা করে। এখানে আদালত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে ।
(২) সম্ভাব্যতার ভারসাম্য (Balance of Probabilities): ফৌজদারি মামলার প্রমানের মানদন্ড হল Beyond reasonable doubt বা সন্দেহাতীত ভাবে মামলা প্রমান করা। অন্যদিকে দেওয়ানি মোকদ্দমায় প্রমানের মান (standard of proof) হল Balance of Probabilities অর্থাৎ মিথ্যার চেয়ে সত্যের পরিমান বেশী (more probably true than false)। সুতরাং বাদি যদি prima facie case তার পক্ষে দেখাতে পারে এবং বিবাদি যদি বাদির দাবির বিপক্ষে কোন সাক্ষ্য উপস্থাপন না করে তাহলে আদালত বাদির পক্ষে রায় দিবে। বাদির জন্য prima facie case উপস্থাপন করাই যথেষ্ট (more than 50% truth) এবং এটাই দেওয়ানি মোকদ্দমা প্রমানের মানদন্ড (civil standard of proof) অন্যদিকে বাদি যদি prima facie case উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে বিবাদি No case to answer যুক্তি দেখাতে পারে।
(৩) দেওয়ানি পদ্ধতি (Civil Proceedings) বলতে বোঝায় সব ধরনের দেওয়ানি মামলা যাতে দেওয়ানি আইনে প্রদত্ত দেওয়ানি অধিকার সমূহ বলবৎ করা হয়। দেওয়ানি বিচার বলতে বোঝায় দেওয়ানি অধিকার বলবৎকরন ।অন্যদিকে ফৌজদারি বিচারে অপরাধীকে সাজা দেওয়া হয়। দেওয়ানি মোকদ্দমায় বাদি কোন অধিকার প্রতিষ্টা করার আবেদন করে না বরং অপরাধীকে সাজা দেওয়ার জন্য আবেদন জানায়।
(৪) সমন্বিত আইনী প্রক্রিয়াঃ সাধারণত দেওয়ানি মোকদ্দমা পরিচালিত হয় তিন ধরনের আইনের সমন্বয়ে। দেওয়ানি কার্যবিধি,Civil Rules and Order(CRO) এবং Civil Suits Instruction Manual.
দেওয়ানি মোকদ্দমার বিভিন্ন ধাপ সমূহঃ
(১) মামলা-পূর্ব ধাপ (Pre-Proceeding Stage)
(২) মামলা শুরু (Proceeding stage)
(৩) বিচার কার্যক্রম (trial Stage)
(৪) রায় (Judgment) এবং
(৫) জারি ও বাস্তবায়ন (Enforcement and Execution)
উপরোক্ত বিষয়গুলি পর্যায়ক্রমে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
মামলা-পূর্ব ধাপ (Pre-Proceeding Stage)
এই পর্যায়ে সাধারনত পক্ষদ্বয়ের মাঝে সমঝোতা বা শালিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে যাওয়ার পুর্বেই বিবাদের মীমাংসা করার চেষ্টা করা হয়।অবশ্য আমাদের দেশে মামলা-পূর্ব ধাপ হিসেবে আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় কোন সমঝোতার বিধান খুবই কম। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ এবং পারিবারিক আদালত অদ্যাদেশ-১৯৮৫ এর অধীনে এক ধরনের সমঝোতার বিধান আইনগত করা হয়েছে।১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের ১০ ধারার বিধান করা হয়েছে যে, জবাব দাখিলের পর ৩০ দিনের মধ্যে আদালত বিচার-পুর্বে একটি শুনানির দিন ধার্য করবে। উক্ত শুনানিতে আদালত পক্ষদ্বয়ের মাঝে সমঝোতার চেষ্টা করবে। অবশ্য এধরনের সমঝোতা মামলা-পুর্ব সমঝোতা নয়; কারন মামলা দায়েরের পরেই আসছে সমঝোতার বিষয়টি। বৃটেন ও আমেরিকাতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা-পুর্ব অবস্থাতেই সমঝোতামূলক প্রক্রিয়ার অংশগ্রহন বাধ্যতামূলক। উদাহরনস্বরুপ,বৃটেনে personal injury বিষয়ে মামলা দায়েরের পুর্বে pre-action protocol অনুযায়ী step নেয়া বাধ্যতামূলক।
মামলা শুরু (Proceeding stage)
১) মোকদ্দমা দায়ের (institution of suit) দেওয়ানি কার্যবিধির ২৬ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক মোকদ্দমা আরজি উপস্থাপনের দ্বারা কিংবা নির্ধারিত হতে পারে এরকম অপর কোন পদ্ধতিতে রুজু করতে হবে। আরজি প্রস্তুত করার পর আরজি উহার সঠিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে জমা দিতে হবে। দেওয়ানি কার্যবিধির ১৫ ধারা মতে প্রত্যেক মোকদ্দমা সঠিক এখতিয়ার সম্পন্ন নিম্নতম কোর্টে দাখিলের মাধ্যমে দায়ের করতে হবে। আরজি দাখিল হলে সেরেস্তাদার আরজি পরীক্ষা করে দেখবেন যে, আরজিতে যে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন (Valued) করা হয়েছে কি না এবং যথাযথ কোর্ট ফি দেয়া হয়েছে কিনা।এরুপ পরীক্ষার পর সেরেস্তাদার আরজির উপর একটা নাম্বার দিয়ে Register of Suit-এ অন্তর্ভুক্ত করবেন। আরজির উপরে সেরেস্তাদার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে যে তারিখ উল্লেখ করবেন সেই তারিখই হল মামলা ফাইলিং বা দায়ের করার তারিখ। সুতরাং এরুপ স্ট্যাম্প করা এবং Register of Suit-এ অন্তর্ভুক্ত করলেই একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা শুরু হয়েছে ধরা হবে।
২) সমন জারি (Issue of Process) দেওয়ানি কার্যবিধির ২৭ ধারা ও অর্ডার ৫ এর বিধান মতে দেওয়ানি মোকদ্দমা দায়ের করার পরবর্তী ধাপ হল সমন জারি। সমন জারির মাধ্যমে আদালত কোন ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থিত হতে বলে। আরজি দাখিলের পর আদালত নির্ধারিত পদ্ধতিতে সমন জারি করে বিবাদীকে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলে।
৩) সমন পঠানো (Service of Summons) আরজি দাখিলের পর যখন বিবাদীকে সমন পাঠানো হয় তখন উক্ত সমনের সাথে আরজির একটি কপিও পাঠানো হয়। সেরেস্তাদারের নিকট থেকে সমনের কপি নেজারত শাখায় যাওয়ার পর সমন পাঠানোর ব্যবস্থা করে আদালতের নাজির । সমন পদাতিক ও ডাকযোগে পাঠানো হয়ে থাকে।
৪) সমন ফেরত (Return of Summons) সমনে একটি তারিখের উল্লেখ থাকে যে তারিখে বিবাদীকে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। বিবাদী সমন পেয়ে উক্ত তারিখে আদালতে উপস্থিত হবে। উক্ত তারিখে বিবাদী আদালতে উপস্থিত হয়ে আরজির বিরুদ্ধে জবাব দাখিল করতে পারে,অথবা যদি সে জবাব প্রস্তুত করে না নিয়ে আসে তাহলে আদালতের কাছ থেকে জবাব তৈরী ও দাখিলের জন্য সময় প্রর্থনা করতে পারে।
৫) বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (Alternative Dispute Resulution,ADR) আরজি দাখিল এবং আরজির বিপরীতে জবাব দাখিলের মাধ্যমে Pleadings সম্পন্ন হয়। প্লিডিংস সম্পন্ন হলেই দুইপক্ষের মধ্যকার বিরোধের বিষয় পরিস্কার হয়ে যায় এবং আদালত প্রথম শুনানির তারিখ নির্ধারন করে দেয়। কিন্তু ২০০৩ সালের সর্বপ্রথম দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করে ADR এর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।দেওয়ানি কার্যবিধিতে ৮৯ক এবং ৮৯খ নামে দুটি নতুন ধারা যোগ করা হয়।৮৯ক ও ৮৯খ ধারায় ২ ধরনের ADR এর বিধান সংযোজন করা হয়: সমঝোতা(Mediation) শালিস(Arbitration)।
৬) প্রথম শুনানি এবং পক্ষদ্বয়ের জবানবন্দি (First Hearing and Examination of Parties by the court) যদি মোকদ্দমার পক্ষদ্বয় উপরে উল্লেখিত ADR-এর ব্যবস্থা গ্রহন করে এবং ADR যদি সফল হয় তাহলে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ADR যদি ব্যর্থ হয় তাহলে ADR –এর পূর্বে মামলাটি যে পর্যায়ে ছিল সেখান থেকে শুরু করবে।
৭) ইস্যু গঠন (Framing Issue) প্রথম শুনানির দিনে যদি এডিআর ব্যর্থ হয় তাহলে আদালত মামলার ইস্যু গঠন করবে। Issue দুই ধরনের হতে পারেঃ ঘটনাগত Issue এবং আইনগত Issue। আইন বা ঘটনাগত যাই হোক না কেন যদি তা একপক্ষ দাবি করে বা দাবির ভিত্তি হিসেবে অভিযোগ করে এবং অন্য পক্ষ উহা অস্বীকার করে তবে বিষয়টি একটি( Issue) বা বিরোধের বিষয় হয়ে যায়। যে ঘটনাগুলো উভয়পক্ষ স্বীকার করে বা মেনে নেয় সেগুলো admitted facts এবং এগুলোর ব্যাপারে কোন Issue গঠনের প্রয়োজন হয় না। Issue Framing এর সময় আদালত প্রয়োজনে পক্ষদ্বয়কে প্রশ্ন করতে পারে;শুনানি মূলতবি করে প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির হাজিরা নিশ্চিত করে বক্তব্য শুনতে পারে।
৮) ৩০ ধারার পদক্ষেপ এবং SD (Section 30 step and Settling of Date of Hearing) Issue Frame বা বিরোধের বিষয়গুলো নির্ধারনের পর আদালত ৩০ ধারা পদক্ষেপের তারিখ দিবে। ৩০ ধারা পদক্ষেপ বলতে সাধারনত বুঝায় প্রশ্নোত্তর,সাক্ষ্য হিসেবে দলিলাদির গ্রহন,প্রেরণ,উপস্থাপন,discovery,inspection ইত্যাদি। যদি ৩০ ধারার পদক্ষেপ আদালত গ্রহন করে তাহলে ৩০ ধারার পদক্ষেপের পরই SD-এর তারিখ দিবে।এই SD-এর তারিখে আদালত মোকদ্দমার পক্ষদ্বয়কে তাদের সাক্ষীর তালিকা দিতে বলবে এবং কোন সাক্ষীর জন্য কোন কমিশন দরকার হবে কিনা তা জানার জন্য বলবে। অতঃপর এদিন আদালত peremptory বা Final hearing এর তারিখ দিবেন ।
বিচার কার্যক্রম ( trial Stage)
১)মামলা শুরু (Opening of the Case) মোকদ্দমা শুরু করার অধিকার বাদির। বাদির আইনজীবী প্রারম্ভিক বক্তব্য (opening speech)–এর মাধ্যমে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। অবশ্য বিবাদীও অনেক সময় প্রারম্ভিক বক্তব্য (opening speech )দিতে পারে। কে প্রারম্ভিক বক্তব্য (opening speech) দিতে পারে তা বস্তুত নির্ভর করে প্রমানের দায় (Burden of proof)কার উপরে বর্তাবে তার উপর। প্রারম্ভিক বক্তব্যে আইনজীবী নিম্নলিখিত দিকগুলো তুলে ধরেনঃ
(ক) মামলার প্রকৃতি অর্থাৎ মামলাটি কি স্বত্বঘোষনার, চুক্তি ভঙ্গের নাকি বাটোয়ারার তা বর্ণনা করা;
(খ) মামলার বিরোধের মূল দিকগুলো তুলে ধরা;
(গ) মূল বিচার্য্য্ বিষয় তূলে ধরা
(ঘ) সাক্ষের প্রকৃতি অর্থাৎ কিভাবে Fact in Issue প্রমানিত হবে তা সংক্ষেপে উল্লেখ করা।
২) চূড়ান্ত শুনানি (Peremtory Hearing বা PH) প্রারম্ভিক বক্তব্য দেয়ার পরপরই বাদী তার সাক্ষীদেরকে ডাকবে এবং বাদীর Theory of case অনুযায়ী সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য নিবে। যদি কোন দালিলিক সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা থাকে তা সবই এই PH এর সময় উপস্থাপন করতে হবে।প্রমানের দায় (Burden of proof) অনুযায়ী বাদিকে Prima facie case establish করতে হবে।যদি বাদী তার Fact in Issue বা case Theory বা Prima facie case establishing এর মাধ্যমে প্রমান করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আদালত বাদির আরজি খারিজ করে দিবে এবং বিবাদীর সাক্ষ্য নেয়ার আর কোন প্রয়োজন পড়বে না (25 CWN 409 PC) ।অন্যভাবে বলা যায় যদি বাদী Prima facie case প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বিবাদী No case to answer defense তুলতে পারে। এক্ষেত্রে বিচারক যদি শুনানি শেষে সন্তুষ্ট হন যে, বাদী সত্যিই Prima facie case প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে তাহালে তিনি মামলাটি Dismiss বা খারিজ করে দিবেন। অবশ্য স্মরণ রাখতে হবে যে, বিবাদীকে যদি প্রারম্ভিক বক্তব্য (opening speech) দিতে হয় তাহলে তা অবশ্যই বাদীর সাক্ষ্য উপস্থাপনের পরে আসবে।
৩) জেরা করা এবং পুনঃসাক্ষ্য নেয়া (Cross-Examination and Re- examination) একপক্ষ তার সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়ার পর অন্য পক্ষ উক্ত সাক্ষীদের জেরা করবে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়ার পরপরই জেরা শুরু হয়। জেরা শেষ হওয়ার পর যে পক্ষের সাক্ষী সেই পক্ষ ইচ্ছা করলে উক্ত সাক্ষীর পুনঃসাক্ষ্য নিতে পারে। জেরার ফলে সাক্ষী তার পক্ষের case Theory-র যে ক্ষতি করেছে তার যথাযথ ব্যাখ্যা দেয়া বা উক্ত ক্ষতি যতটা সম্ভব পুষিয়ে নেয়াই পুনঃসাক্ষ্যের উদ্দেশ্য।
৪) সমাপনী বক্তব্য/যুক্তিতর্ক (Closing Speech/Argument) উভয়পক্ষের সাক্ষ্য,জেরা ও পুনঃসাক্ষ্য শোনার পর সাক্ষ্য গ্রহন বন্ধ হয়ে যায়। সাক্ষ্য গ্রহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উভয়পক্ষের আইনজীবীদেরকে সমাপনী বক্তব্য বা Argument করার জন্য ডাকা হয়। যে পক্ষ প্রারম্ভিক বক্তব্য (opening speech) দিবে সেই পক্ষ Closing Speech দিবে শেষে। সুতরাং স্বভাবতই বিবাদীর আইনজীবী প্রথম সমাপনী বক্তব্য দিবে। যুক্তিতর্কে বা সমাপনী বক্তব্যে আইনজীবীগণ নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব দেনঃ
(ক) উপস্থাপিত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে নিজ পক্ষের case Theory-কে আদালতের সামনে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা;
(খ) Legal issue–র উপর case reference সহ authorities উল্লেখ করা ইত্যাদি
রায়(Judgement)
১) রায় ঘোষনা করা (pronouncement of Judgment) সমাপনী বক্তব্যের পর আদালত হয় তৎক্ষনাৎ রায় ঘোষনা করবেন কিংবা রায় ঘোষনার জন্য একটি তারিখ নির্ধারন করবেন।উক্ত নির্ধারিত তারিখে বিচারক রায় ঘোষনা করবেন।
২) ডিক্রি ও আদেশ (Decree and Order) রায় দুই ধরনের হতে পারে যথা ডিক্রি বা আদেশ। আবার অন্যভাবে একই রায়ে ডিক্রি এবং আদেশ দুটোই থাকতে পারে। সিপিসি ২(২) ধারায় ডিক্রি এবং ২(৯) ধারাতে রায় এর সংগা দেওয়া হয়েছে।
জারি ও বাস্তবায়ন ( Enforcement and Execution)
১) ডিক্রি জারিকরনের আবেদন (Aplication For Execution) রায়ে যার পক্ষে ডিক্রি দেয়া হয় তিনি আপনা আপনি ডিক্রির ফল ভোগ করতে পারবেন না। তাকে নতুন করে ডিক্রি জারির মামলা করতে হবে।সকল জারি মামলা জারিকরন আবেদন দায়েরের মাধ্যমে শুরু হয়। যে আদালত ডিকি জারি করেছেন সেই আদালতেই এরুপ Execution বা জারি মামলার আবেদন দাখিল করতে হবে। আবেদন দাখিলের পর আদালত দেখবে যে, দেওয়ানি কার্যবিধির ২১ আদেশের ১১ থেকে ১৪ নং বিধির সকল শর্তাবলী পূরণ হয়েছে কিনা। এরুপ শর্তাবলী পূরন সাপেক্ষে আদালত আবেদন পত্রটি গ্রহন ও রেজিস্টারভুক্ত করবেন।
২) আবেদন পত্রের উপর শুনানি (Hearing on the Application) আদালত আবেদন পত্রটির উপর একটি শুনানরি দিন ধার্য করবেন। উক্ত শুনানির দিনে আদালত আবেদন পত্রের বিষয়বস্তু শুনবেন।
৩) ডিক্রি জারির জন্য কারন দার্শাও নোটিশ (Show Cause Notice for Execution) বিধি ২২ অনুযায়ী আবেদন পত্রের উপর শুনানির পর আদালত যার বিপক্ষে ডিক্রি জারি হয়েছে তাকে কারন দর্শাও নোটিশ জারি করবে।
৪) কারন দর্শাও নোটিশের পরের পদ্ধতি (Procedure after Notice) যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কারন দর্শাও নোটিশ জারি করা হল সে যদি আদালতে উপস্থিত হয়ে কারন না দর্শায় তাহলে আদালত তার বিরুদ্ধে সমন পাঠাতে পারে অথবা ডিক্রি জারি করার জন্য প্রসেস ইস্যু করতে পারেন।
৫) জারীর পদ্ধতি (Mode of Execution) চূড়ান্তভাবে আদালত ডিক্রি জারি করবে।আদালত সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি ক্রোকের মাধ্যমে এবং ডিক্রিদারকে হস্তান্তরের মাধ্যমে অথবা বিক্রয়ের মাধ্যমে অথবা স্বাভাবিক হস্তান্তরের মাধ্যমে অথবা কোন রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে জারি কার্যক্রম সম্পাদন করবে।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান
কলামিস্ট ও আইনজীবী,
ইমেইল:mizanmpur06@gmail.com