বরিশাল ব্যুরোঃ বাড়ালে ইয়াবা পাওয়া যায়৷ বিশ্বের মধ্যে চীন যখন মানুষের মল থেকে জৈব সার তৈরিতে ব্যস্ত৷ নাসার বিজ্ঞানীরা মহাকাশ গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত৷ ঠিক তখন আমাদের দেশের হাজার হাজার নারী-পুরুষ মাদক নিয়ে ব্যস্ত৷ সে তালিকায় চরফ্যাশনের কিছু মানুষও উল্লেখযোগ্য৷
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলায় ৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মাদকাসক্ত নারী পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার৷ ৩ শত টাকা প্রতি পিস ইয়াবার মূল্য হিসেবে দৈনিক আগুনে পুড়ছে ৩০ লাখ। আর প্রতি মাসে প্রায় ৯ কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে মাদক সেবনের মাধ্যমে৷ এরফলে ফলে সর্বস্ব হারিয়েছে অনেক পরিবার। বিচ্ছেদের ঘটনা ও শোনা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইয়াবা বিক্রেতা বলেন, কলেজের প্রভাষক, স্কুল শিক্ষক, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক থেকে বাজার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী পর্যন্ত কিছু লোক ইয়াবা সেবন করে৷ অধিকাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারকে বাধ্য করে নিজ বসতঘরেই সেবন করছে ইয়াবা৷ প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় ইয়াবা বিক্রেতা আছে৷ প্রয়োজন হলে মোবাইল করলে আমরা ক্রেতার নিকট হাজির৷ এখন এটা ঘরে থেকে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়৷
চরফ্যাশন পৌরসভা ৬ নং ওয়ার্ডের এক ইয়াবা বিক্রেতার পিতার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে প্রতিনিয়ত পরিবারে সকলের সাথে খারাপ আচরণ করছে৷ উল্লেখযোগ্য কোন কাজ কর্ম করছে না৷ খোঁজ নিয়ে দেখলাম ছেলে আমার ইয়াবা সেবন ও বিক্রয়কারী৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে ৬ মাস৷ মনে করেছিলাম ভালো হয়ে যাবে, কিন্তু না, এখনো ফেরাতে পারিনি এই অন্ধকার জগত থেকে৷ তিনি বলেন পিতার কাছে সবচেয়ে কষ্টের হচ্ছে তার কাঁধে সন্তানের মৃতদেহ৷ কিন্তু ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে সেই কষ্ট মনে হয় তার চেয়েও বেশি৷ চরফ্যাশন প্রেসক্লাবের এক সাংবাদিক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, চরফ্যাশন বাজারের সদর রোডের পদশোভা ও মুনড্রাগের মাঝের খাদিজা সু স্টোরের পিছনের চায়ের দোকানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক দল উঠতি বয়সের যুবক ধূমপায়ীদের আড্ডা বসে প্রতিদিন। বিষয়টি নিয়ে স্হানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহন জরুরি।
পৌরসভা ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আখতারুল আলম সামু বলেন৷ মাদকের ভয়ঙ্কর নেশা চরফ্যাশনের তরুণ সমাজকে গ্রাস করতে চলেছে৷ প্রতিটি মহল্লায় পৌঁছে গেছে ইয়াবা নামের মরণনেশা৷ প্রত্যেক বাবা মা সচেতন থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তান কোথায় যায়, কি করছে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদক বিক্রেতা আটক হলে তাদের বাড়িতে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিতে হবে “এটা মাদক বিক্রেতার বাড়ি” তাহলে এ লজ্জায় কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি৷ চরফ্যাশন থানা অফিসার ইনচার্জ শামসুল আরেফিন জানান, গত ১৪ মাসে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে৷ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় ৯৩ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ৷ মাদক আইনে মামলা হয়েছে ৬৫ টি৷
তিনি আরো বলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি মহোদয় মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে৷ আমি আশা করি সকলের সহযোগিতা পেলে কিছুদিনের মধ্যে চরফ্যাশন মাদক মুক্ত হবে৷