তালতলী প্রতিনিধিঃ তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা বাজারের ২৫ কোটি টাকা মূল্যের সরকারী খাস জমি দখল করে ভূমি দস্যুরা ছোট বড় ৫০টি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। স্থানীয় ভুমি অফিসের লোকজন বাধা দিলেও উল্টো তাদেরকে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। বাজারের অধিকাংশ জমি ভূমি দস্যুরা দখল করে নিয়েছে।
জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় হাট বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এতে সরকার প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। ওই হাট-বাজারের দুই প্রভাবশালী গ্রাম্য চিকিৎসক রনজিৎ কুমার বৌদ্দ ডাক্তার ও চান্দখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ মিয়া সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে নেতৃত্ব দিয়ে এসকল পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিস সুত্রে জানাগেছে, ১৯২০ সালে উপজেলার কচুপাত্রা হাট-বাজারের নামে স্থানীয়রা দুই একর জমি দানপত্র করেন। । তালতলী উপজেলার মানুষের নিকট কচুপাত্রা একটি গুরুত্ব পূর্ন হাট। প্রতি রবিবার এখানে সাপ্তাহিক হাট বসে। সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত এ হাটের জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করায় ঠিকমত এখন হাট বসতে পারছে না। ধীরে ধীরে ওই হাটের জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
এতে হাটটের জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে। হাটটিকে নিশ্চিহৃ করে দিয়ে সমুদয় জমি দখলের জন্য একটি প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা হাটের জমি দখল করে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। ওই হাটের দুই প্রভাবশালী গ্রাম্য চিকিৎসক রনজিৎ কুমার শাখারী বৌদ্দ ডাক্তার ও চান্দখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ মিয়া সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে অন্তত ৩৩ শতাংশ জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
ভুমি অফিসের লোকজন এসে তাদের পাকা স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা তা মানছে না। বৌদ্দ ডাক্তার ইতিমধ্যে তিন তলা ভবনের দ্বিতলার কাজ সম্পন্ন করেছেন। হানিফ মাষ্টারের পাকা ভবনের ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে। ভুমি অফিসের লোকজন রাজস্ব আদায়ের তাগাদা দিলে প্রভাবশালী ভুমি দখলবাজরা তা দিচ্ছে না। অপরদিকে একটি প্রভাবশালী মহল জমি দখল করে অন্যের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকায় পজিশন বিক্রি করছেন।
ওই হাটের সরকারী জমি দখল হওয়ায় সরকার প্রতিবছর অন্তত কয়েক লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রা জানান বর্তমানে দখল হওয়া ওই জমির বাজার মূল্য রয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা
ইউনিয়ন ভুমি অফিস সংশ্লিষ্টরা বলেন, জমি দখল করে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণকারীদের ভবন নির্মাণে বাধা দিয়েছি কিন্তু তারা তা মানছে না। তারা উল্টো আমাদের জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে ওই হাটে ভুমি অফিসের লোকজন পাকা স্থাপনা নির্মাণে এখন বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, হাটের দুটি স্টল এবং একটি পাকা সড়ক ছাড়া সমুদয় জমি প্রভাবশালীরা দখল করে ৫০টি স্থাপনা নির্মাণ করেছে। গ্রাম্য চিকিৎসক রনজিৎ কুমার শাখারী তিনতলা পাকা ভবনের দ্বিতলার কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং আবু হানিফ মিয়া পাকা ভবন নির্মাণের ফাউন্ডেশনের কাজ করছেন। অনেকে জমি দখল করে টিন শেডের পাককা ঘর নির্মাণ করেছেন।
স্থানীয় মাসুম হাওলাদার, সিদ্দিক তালুকদার ও আশ্রাফ আলী বলেন, কচুপাত্রা হাট নিশ্চিহৃ করে দেয়ার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে। তারা হাটের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। হাটের অধিকাংশ জমি দখল হয়ে গেছে। তারা আরো বলেন, সপ্তাহে হাটের দিনে দোকান পাট এতে বসতে পারে না। হাটটি রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জমি দখল মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানাই।
দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণকারী প্রভাবশালী রনজিৎ কুমার শাখারী বৌদ্দ ডাক্তারের ছেলে তাপস কুমার শাখারী বলেন, ভুমি অফিসে জমির ডিসিয়ারের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু এখনো পাইনি। তবে অনুমতি ছাড়া সরকারী জমিতে দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান বলেন, কচুপাত্রা হাটের জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। ওই হাটে কাউকে স্থাপনা নির্মাণ করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা জোড়করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। আমরা নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা তা মানছে না। তিনি আরো বলেন, ওই হাটের সরকারী জমি উদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ওই হাটে পাকা ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারী জমিতে কেউ কোন ভাবেই পাকা ভবন নির্মাণ করতে পারবে না। কেউ নির্মাণ করলে সরকারী নির্দেশনা অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।