বোরহান উদ্দিন প্রতিনিধি: ভোলায় চল্লিশ টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে বিল্লাল হোসেন(১৫) নামক এক কিশোর বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে।
বিল্লাল বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসান নগর ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডের বিশ্বাস বাড়ীর মোঃ জসিম মিয়ার ছোট ছেলে।সাত-আট বছর আগে মারা যায় গর্ভধারিণী মা, মায়ের শোক পেরিয়ে উঠতে না উঠতেই বিয়ে করে বাবা। নিষ্ঠুর প্রবাসী বাবা বিয়ে করে চলে যায় নতুন বউকে নিয়ে। অসহায় অবুঝ শিশু বিল্লালের ঠাই হয় তার ভাইদের কাছেই। বড় ভাইদের কাছে থেকেই বড় হয় বিল্লাল। তার বয়স এখন ১৫ বছর। ভাইয়ের সাথে এখন নদীতে গিয়ে মাছ ধরতে পারে সে। এভাবেই কেটে যাচ্ছে মা-বাবা হারা কিশোর বিল্লালের দিন। বর্তমানে বড় ভাই হাছনাইনের কাছে থাকে বিল্লাল। ভাই হাছনাইনের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলেও সম্পর্ক ভালো নেই ভাবি আরজুর সাথে। কারণ কিছুদিন পর পরেই টাকা চুরিসহ বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলে ভাবি আরজু। তারপরেও মনের কষ্ট নিয়েই ভাবির কাছেই থাকে মা-বাবা হারা হতভাগা সেই কিশোর বিল্লাল।
আগেরই সেই ধারাবাহিকতায় গত (২৫শে জুন) বৃহস্পতিবার বিল্লালের ভাবি আরজুর চল্লিশ টাকা হারিয়ে যায় বলে সন্দেহ করে বিল্লালকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ’সহ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন ভাবি আরজু। আর যদি ঘর থেকে না-ই বের হয় তাহলে তার “ভাই হাছনাইনকে” বাবা বলেই এই ঘরে থাকতে হবে।এমন মানসিক নির্যাতনের কারনেই কিশোর বিল্লাল বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা পার্শ্ববর্তী সচেতন লোকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্শ্ববর্তী নারী- পুরুষরা বলেন, প্রাই বিল্লালকে তার ভাবি আরজু বিভিন্ন চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানসিক নির্যাতন করা সহ ঘর থেকেও বেরিয়ে যেতে বলতো। আর সে (বিল্লাল) প্রাই বলতো একদিন ঠিকই এ ঘর থেকে অনেক দুরে চলে যাবো। তাই আমাদের ধারণা বিল্লাল তাঁর ভাবি কর্তৃক মানসিক নির্যাতনের কারনেই বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে।
এব্যাপারে নিহত বিল্লালের ভাবি আরজু বলেন, সে প্রাই আমার টাকা চুরি করতো। সেদিনও আমার বাসা থেকে চল্লিশ টাকা হারিয়ে গেলে তাকে জিজ্ঞেস করি কিন্তু সে অস্বীকার করলে আমি তার ভাইকে জানিয়ে মাইর খাওয়াবো বলে ভয় দেখাই। তার ঘন্টা খানেক পরেই তাকে হঠাৎ বুমি করতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ধরি। পরে তাঁর অবস্থা খারাপ দেখলে তাঁকে প্রথমে বোরহানউদ্দিন হাসপাতাল পরে ভোলা সদর হাসপাতালে নিলে সেখানেই মৃত্যুবরণ করে সে।নিহত বিল্লালের সত মায়ের দাবী, বিল্লাল মানসিক ভারসাম্যহীন তা-ই সে এমনটা করেছে।
এব্যাপারে মির্জাকালু পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর মোঃ ফোরকান হাওলাদার বলেন, ঘটনার খবর শুনেই ফোর্স সহ তাৎক্ষণিক সরেজমিনে গিয়ে জানতে পারি চল্লিশ টাকা চুরির বিষয়েই মানঅভিমান করে বিল্লাল বিষ জাতীয় কিছু খেয়েছে। পরে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রথমে বোরহানউদ্দিন হাসপাতাল পরে সেখান থেকে ভোলা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে তাঁর (বিল্লালের) ভাইদের কোনো আপত্তি না থাকায়, তারা বোরহানউদ্দিন থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর দরখাস্ত করলে ওসি মু. এনামুল হক তাঁর লাশ বিনা ময়নাতদন্তে দাফন করার অনুমতি দেন। পরে গতকাল শুক্রবারই তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়।