পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি আরো বেড়েছে। গতকাল দুপুর থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় শহড়াবাড়ী ঘাট পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৩ সেন্টিমিটার। যমুনা নদীর পানি বেড়েছে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টেও।
সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে তা এখনো বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। তিস্তায় পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে নীলফামারীতে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শেরপুরের নকলা উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার।
জেলার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহড়াবাড়ী ঘাট পয়েন্টে পানি বাড়লেও গতকাল তা বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি বাড়তে থাকায় বন্যার আশঙ্কা করছে নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, যমুনার পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিপত্সীমা অতিক্রম করে বন্যা হতে পারে।
এদিকে ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বৈশাখী, রাধানগর, নিউ সারিয়াকান্দি, শহড়াবাড়ী, পুকুরিয়া, কৈয়াগাড়ী, বরইতলী, বানিয়াজান ও শিমুলবাড়ী চরের আউশ ধান ও পাটের জমিতে পানি প্রবেশ করছে। নদীর পূর্বতীরে চর এলাকার ফসলিজমিতেও একই অবস্থা।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে গতকাল বিকেলে তা বিপত্সীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি ১২ দশমিক ৭৪ মিটার রেকর্ড করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার।
পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি। পাঁচটি উপজেলার প্রায় ২০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে।
সিলেটে গত দুই দিন বৃষ্টি না হওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে কিংবা উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামলে যেকোনো সময় বন্যা হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয় জানায়, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপত্সীমা ৯.০৪ সেন্টিমিটার। গতকাল বিকেল ৩টায় সেখানে পানির উচ্চতা ছিল ৯.০১ সেন্টিমিটার। গতকাল পানির উচ্চতা অমলসীদ পয়েন্টে ছিল ১৩.১৪ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ১৫.৪০), শেরপুর পয়েন্টে ৭.৬৬ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৮.৫৫) এবং শেওলা পয়েন্টে ছিল ১১.১০ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ১৩.০৫)।
আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, চলতি মাসে সিলেটে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হবে। ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। সবমিলিয়ে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
নীলফামারীতে গতকাল দুপুর ১২টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানের ঢলে গত শনিবার ওই পয়েন্টে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার ডিমলা উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার বন্যার কবলে পড়ে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা ব্যারাজে ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছি। এখন বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।’
জেলার নকলা উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের শাখা মৃগী নদীর ভাঙনরোধে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছে, নদীভাঙনের ফলে ফসলি জমি ও ভিটেবাড়ি হারিয়েছে উপজেলার ৯ নম্বর চন্দ্রকোনা ও ৮ নম্বর চরষ্টধর ইউনিয়নের শত শত পরিবার।
চন্দ্রকোনা কলেজের প্রভাষক কামরুল ইসলাম গেন্দু বলেন, ‘ভাঙনরোধে সঠিক পরিকল্পনা না নিলে আশপাশের এলাকাসহ চন্দ্রকোনা বাজার হুমকির মুখে পড়বে।’
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নারায়ণখোলায় ৫০০ মিটার এলাকায় বালুর জিও ব্যাগ ফেলার ফাইল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করব। তবে চন্দ্রকোনা এলাকায় ভাঙনরোধে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।’