সব
facebook apsnews24.com
প্রশমনের উদ্যোগের মধ্যেও সেনা প্রস্তুতি ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে - APSNews24.Com

প্রশমনের উদ্যোগের মধ্যেও সেনা প্রস্তুতি ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে

প্রশমনের উদ্যোগের মধ্যেও সেনা প্রস্তুতি ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে গলওয়ানে চিনা সেনা ট্রাক এবং সাঁজোয়া গাড়ির বহর (উপরে)। ভারতীয় সেনা বহরের জমায়েত (নীচে)। মার্কিন সংস্থা প্ল্যানেট ল্যাবের প্রকাশ করা উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ল গলওয়ানের এই ছবি।

এপিএস ফরেন ডেস্ক

মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সংঘর্ষের পরে ভারত এবং চিন দু’পক্ষই পিছু হটছে তাঁদের অবস্থান থেকে। সামরিক পরিভাষায় যাকে বলা হয় ডিসএনগেজমেন্ট। দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীর মধ্যেও কথাবার্তা হয়েছে বুধবার। কূটনৈতিক এবং সেনা, দুই পর্য্যায়েই আলোচনা চলবে বলে জানাচ্ছে দুই দেশ। কিন্তু এর মধ্যেও, লাদাখের সেই গলওয়ান উপত্যকায় মঙ্গলবারের একটি উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ল বড়সড় সেনা প্রস্তুতির ছবি।

মার্কিন সংস্থা প্ল্যানেট ল্যাব প্রকাশিত ওই উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে— গলওয়ান নদীর উত্তর-পূর্ব দিকের উপত্যকায় সঙ্কীর্ণ গিরিসঙ্কট। তার উপর, নিয়ন্ত্রণ রেখার সমান্তরাল চিনের তৈরি অ্যাসফল্ট রোডে সারি সারি সামরিক ট্রাক। উপগ্রহ চিত্র দেখে আপাত ভাবে সেই ট্রাকের সংখ্যা ২০০-র কম নয় বলেই মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।  যে ভাবে চিনা সামরিক ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে পিছু হটার ইঙ্গিত নেই, বরং সেনা সমাবেশের প্রমাণ স্পষ্ট। নদীর অন্য পারেও দেখা যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্ত সেনা সমাবেশ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই সেনা সম্ভার ভারতের দিক থেকে পাল্টা প্রস্তুতি।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) ধরে পূর্ব লাদাখে উত্তেজনা তৈরি হয়ে রয়েছে। সোমবারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আগেও ৫ মে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে হাতাহাতি হয়েছে দুই সেনার মধ্যে।  সেনা সূত্রে খবর, এর পর থেকে, গত এক মাস ধরে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে এলএসি-র দু’পারে। দু’দিকেই চলছে প্রস্তুতি, সেনা সমাবেশ। সেই উত্তেজনা প্রশমনে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে দু’পক্ষে। এমনকি সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকেই উত্তেজনা প্রশমন করতে পিছিয়ে আসার কথা ছিল দু’পক্ষের সেনারই। কিন্তু তার মধ্যেই সোমবার রাতে গলওয়ান নদীর তীরে শুরু হয়ে যায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ৪৫ বছর আগে অরুণাচলে শেষ বারের মতো এলএসি-তে গুলি চলেছিল। সেখানেও চিনা বাহিনী একতরফা হামলা চালিয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন অসম রাইফেলসের ৪ জওয়ান। তবে ৫৩ বছর আগে নাথু-লা এবং চো-লাতে  প্রকৃত অর্থে শেষ বড় সংঘর্ষ হয়েছিল। তার পর এই পর্যায়ের সংঘর্ষ আর কখনও হয়নি।  এখনও পর্যন্ত অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে ওই সংঘর্ষে। গুরুতর জখম হয়ে চিকিৎসাধীন আরও অনেকে। সেনা সূত্রেই ইঙ্গিত, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। অন্যদিকে চিনের তরফ থেকে হতাহতের কথা স্বীকার করা হলেও, কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে ভারতীয় সেনার দাবি, ৪৩ জন হতাহত হয়েছে চিনের পক্ষে।

ভারতীয় সেনার দাবি, সোমবারের সংঘর্ষের পরেও উত্তেজনা প্রশমনে ভারত-চিন দুই সেনার পক্ষ থেকে ডিভিশনাল কমান্ডার পর্যায়ে এবং মেজর জেনারেল পর্যায়ে বৈঠক হয়। মঙ্গলবার রাতেও, ভারতীয় সেনাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই দাবি করে, ফের ডিসএনগেজমেন্ট বা উত্তেজনা প্রশমনে নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সেনা সমাবেশ সরাচ্ছে দুই পক্ষই। কিন্তু উপগ্রহ চিত্র থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত লাদাখ থেকে বিভিন্ন সূত্র মারফৎ যে খবর আসছে, তাতে ইঙ্গিত— সেনা প্রস্তুতি থেকে এখনও সরছে না দু’পক্ষই। দরকার পড়লে, মুখোমুখি শক্তি প্রদর্শনের জন্য দুই সেনাই তৈরি হয়ে থাকছে। শুধু ওই সেক্টর নয়, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অবস্থানগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি এলাকায় বাড়ানো হয়েছে প্রস্তুতি।  সাঁজোয়া গাড়ি থেকে শুরু করে ভারী গোলাবর্ষণে সক্ষম কামানবাহী গাড়ির সমাবেশও দেখা যাচ্ছে উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও স্পষ্ট করে দেন ভারতের অবস্থান— ‘‘ ভারত শান্তি বজায় রাখতে চায়, কিন্তু প্ররোচনা দিলে তার জবাব দিতেও তৈরি।”

চিনের বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতিতেও ‘আর অশান্তি চাই না আমরা’ বলা হলেও, সোমবার রাতের সংঘর্ষের জন্য ভারতকেই দায়ী করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, চিনা জমিতে ঢুকে ভারতীয় সেনাই গোলমাল পাকিয়েছে।

চিনের এই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে ভারতীয় সেনার অভিযোগ— প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা কোথাও লঙ্ঘন করেনি ভারত। উল্টে চিনই এক তরফা ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালিয়েছে শান্তি আলোচনার মধ্যেই। সেনা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসার অর্থ বাহিনীর মনোবলে আঘাত। পাল্টা আঘাত হানা হবে কি না তা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এই মুহূর্তে এক কদম পিছিয়ে আসা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত বলে প্রমাণিত হতে পারে। তাই প্রস্তুতি রাখা রয়েছে সব রকমের পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য।

লাদাখের রাস্তায় সেনা ট্রাকের বহর। ছবি: পিটিআই।

ভারতীয় সেনার শীর্ষ স্তরের একটি অংশ সোমবারের ঘটনাটি ‘অপরিকল্পিত এবং তাৎক্ষণিক’ বলে বর্ণনা করছেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন অন্য অনেকেই। তাঁদের দাবি, পরিকল্পনা করেই ফাঁদে ফেলা হয়েছিল ‘১৬ বিহার রেজিমেন্ট’-এর কম্যান্ডিং অফিসার কর্নেল বাবু এবং তাঁর সঙ্গীদের। চিকিৎসাধীন জওয়ানদের বয়ান উদ্ধৃত করে সেনা কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, চিনের দিক থেকে পরিকল্পিত হামলা বলেই সোমবার রাতে অসম লড়াই হয়েছে। এক জন ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে ছিল কমপক্ষে পাঁচজন চিনা সেনা। অর্থাৎ চিনা বাহিনী হামলার প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়েছিল। পরিকল্পনা করে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল ভারতীয় সেনাদের।  প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে চলা খণ্ডযুদ্ধের ফলে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর। এর বাইরে ঠিক কত জন আহত, তা নিয়ে কোনও তথ্য এখনও জানায়নি সেনা। তবে মঙ্গলবার অন্তত ১৬ বার হেলিকপ্টার ‘সর্টি’ হয়েছে আহতদের নিয়ে আসতে, তা মেনে নিয়েছে সেনারও একাংশ। সূত্রঃ আনন্দ বাজার

আপনার মতামত লিখুন :

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj