এপিএস ফরেন ডেস্ক
লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) ভারত ও চিন সেনার সঙ্ঘাত এবার গড়াল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। সোমবার রাতে গলওয়ান উপত্যকায় হামলা চালাতে এসে ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যাঘাতে খতম হয়েছে পাঁচ চিন সেনা। হামলায় ভারতীয় সেনার এক কর্নেল এবং দুই জওয়ান শহিদ হয়েছেন। সেনা সূত্রের খবর, সংঘর্ষে গোলাগুলি চলেনি। পাথর এবং রড নিয়ে মারামারিতেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়ত দুপুরে স্থল, নৌ ও বায়ুসেনার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।
গতকালই দু’পক্ষের ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছিল। তার পরেই চিনের হামলা। ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চলাকালীনই গতকাল রাতে সংঘর্ষ বাধে। তাতে ভারতীয় সেনার এক অফিসার এবং দুই জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। দু’পক্ষের উচ্চপর্যায়ের অফিসারেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৈঠক করছেন।’’ চিনের সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে রয়েছেন ৩ নম্বর পদাতিক ডিভিশনের প্রধান, মেজর জেনারেল অভিজিৎ বাপত। তবে শান্তিপ্রক্রিয়া চলাকালীন ঠিক কী কারণে রাতের অন্ধকারে দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হল, তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি সেনা বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে।
রাজনাথ এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পূর্ব লাদাখের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। সেনা সূত্রের খবর, হতাহত অফিসার ও জওয়ানেরা ১৬ বিহার রেজিমেন্টের। ওই ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার, এক জুনিয়র কমিশনড অফিসার এবং এক রাইফেলম্যান রয়েছে এই তালিকায়। আহত হয়েছেন কয়েকজন সেনা। অন্যদিকে, বেজিংয়ের তরফে এদিন গলওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে চিন সেনার মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করা হয়েছে। নয়াদিল্লির উদ্দেশে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ানয়ের হুঁশিয়ারি, ‘একতরফা পদক্ষেপ করবেন না।’ চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের দাবি, ভারতীয় সেনাই প্রথম হামলা চালিয়েছে। চিনের পাঁচ সেনা নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। সেনার নর্দার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল দীপেন্দ্র সিংহ হুডা এদিন বলেন, ‘‘আগের অচলাবস্থাগুলির তুলনায় এবারের পরিস্থিতি অনেক গুরুতর। সমস্যা সমাধানের পথে দ্রুত এগোতে হবে।’’
৪৫ বছর পরে চিনা হামলায় ভারতীয় সেনার ভারতীয় সেনার মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। ১৯৭৫ সালে অরুণাচল প্রদেশের চিন টুলুং লায় অসম রাইফেলসের টহলদার বাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে চার জওয়ানকে খুন করেছিল চিনসেনা। ১৯৬৭ সালে সিকিমের নাথু লা এবং চো লায় অনুপ্রবেশকারী লালফৌজকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে এলাকা ছাড়া করেছিল ভারতীয় সেনা।
মে মাসের গোড়াতেই পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকা, নাকু লা এবং প্যাগং লেকের উত্তরপ্রান্তে এলএসি পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় কয়েক কিলোমিটার অনুপ্রবেশ করে চিনা ফৌজ। তারা রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসে। খবর পেয়ে তাদের মুখোমুখি মোতায়েন হয় ভারতীয় সেনা। তার পর থেকে দফায় দফায় সেনাস্তরের বৈঠকেও জট কাটেনি। বেশ কয়েকবার দু’তরফের হাতাহাতি এবং জখমের ঘটনাও ঘটেছে। সেনা সূত্রের খবর, ৬ জুনের বৈঠকের পরে নাকু লায় দু’পক্ষ কিছুটা পিছিয়ে আসে। পিপি-১৫ এবং হট স্প্রিং এলাকাতেও চিন সেনা কিছুটা পিছু হটে যায়। অন্য এলাকাগুলিতে এখনও উত্তেজনা রয়েছে।
লেহ্ থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি বায়ুসেনা ঘাঁটির উত্তর অংশ পর্যন্ত ভারতের নয়া রাস্তা নির্মাণ ঘিরেই সাম্প্রতিক সঙ্ঘাতের সূচনা বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এলএসি ঘেঁষা ওই রাস্তা দারফুক, শিয়ক ছুঁয়ে চিন নির্মিত কারাকোরাম পাসের কাছে শেষ হয়েছে। দুর্গম ওই এলাকায় ভারতীয় ফৌজের যাতায়াতের পথ সুগম হয়ে যাওয়ায় রক্তচাপ বেড়েছে ড্রাগনের। সূত্রঃ আনন্দ বাজার