এপিএস ফরেন ডেস্ক
সাবধানী না হলে আগামী দিনগুলো আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এইমস) মহাপরিচালক ডা. রণদীপ গুলেরিয়া। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, আগামী ২–৩ মাস খুবই কঠিন সময়। কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাতে পারে।
কয়েক দিন ধরেই দেশে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লোক সংক্রমিত হচ্ছে। মোট সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ৯ হাজার ৯৭১ জন। বিশ্বতালিকায় স্পেনকে টপকে ভারত এখন পঞ্চম স্থানে। ভারতের আগে রয়েছে ব্রিটেন, রাশিয়া, ব্রাজিল ও সবার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র।
করোনা সংক্রমণ কিছুতেই বাগে আসছে না ভারতের মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি ও গুজরাটে। এই চার রাজ্যেই মোট আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ। বাকি এক লাখ অন্য সব রাজ্য মিলিয়ে। ডা. গুলেরিয়া মনে করেন, দেশে এখনো গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়নি। কিন্তু কোনো কোনো রাজ্যের হটস্পট এলাকাগুলোর সামাল দেওয়া না গেলে সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই আশঙ্কার কারণ, আগামীকাল সোমবার থেকে গোটা দেশে আরও অনেক নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়ে যাচ্ছে। মল, রেস্তোরাঁ, সেলুন খুলে যাচ্ছে। খুলে যাচ্ছে ধর্মীয় উপাসনাস্থল। মেট্রো খোলার প্রস্তুতি চলছে। সীমিত আকারে চালু হয়েছে রেল ও বিমান পরিষেবা। গণপরিবহনও চালু হয়েছে। বাস, ট্যাক্সি, অটোর জন্য যেসব বিধি আরোপিত হয়েছে, অধিকাংশ জায়গায় তা মানা হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির হাল বেশ উদ্বেগজনক। শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা ২৮ হাজারের কাছাকাছি। রাজ্যের হাসপাতালগুলোর হালও যথেষ্ট নড়বড়ে। প্রতিদিনই রোগী প্রত্যাখ্যানের একাধিক অভিযোগ উঠছে। রাজ্য সরকারের হিসাবে, হাসপাতালে বেড খালি থাকলেও হাসপাতালগুলো বলছে বেড খালি নেই। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী এক সপ্তাহ আগে প্রতিবেশী রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানার সীমান্ত সিল করে দেন। অন্য প্রদেশের রোগীদের জন্য দিল্লির হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। এই অবস্থায় কাল সোমবার থেকে সীমান্ত মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় বেশ কিছু বেড দিল্লিবাসীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। দিল্লির নামকরা এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে করোনা বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে রাজ্য সরকার মামলাও দায়ের করেছে। এ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে রাজ্য সরকারের একটা টানাপোড়েন চলছে। রাজ্য সরকারের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির মতে, যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে খুব দ্রুত দিল্লিতে ১৫ হাজার করোনা বেডের বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের নির্দেশ, কোনো রোগীকেই হাসপাতাল ফেরাতে পারবে না।
অর্থনীতির স্বার্থে ভারতে জনজীবন যত স্বাভাবিক হচ্ছে, সংক্রমণের হার তত বাড়ছে। তবে প্রকৃত অবস্থা কতটা খারাপ, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, পর্যাপ্ত পরীক্ষা হলে চীন ও ভারত দুই দেশেই সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর এক প্রবণতাও অধিকাংশ রাজ্যের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় এইমসের মহাপরিচালকের আশঙ্কা সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। সূত্রঃ প্রথম আলো