বেঁচে থাকার জন্য অন্যতম উপাদান হলো পরিবেশ।যা আমরা নানাভাবে,নানা উপায়ে ব্যবহার করি।ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে।এই পরিবর্তন যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয়,তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি।
পরিবেশ দূষণ আসলে কি?
পৃথিবী নানান সমস্যায় জর্জরি। তারমধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো পরিবেশ দূষণ।যার ফলে জনজীবন অতিষ্ট।পরিবেশ দূষণ বলতে পরিবেশের মৌলিক উপাদান যথা মাটি,পানি বায়ু ও জীবের স্বাভাবিক গঠন বিনষ্ট হওয়াকে বোঝায়।বিভিন্ন ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে মিশলে পরিবেশ দূষিত হয়।
পরিবেশ দূষণের উৎস ও কারনঃ-
পরিবেশ দূষনের অন্যতম প্রধান কারন হলো শিল্পায়ণ। শিল্পকারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন তেল,কয়লা,প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।এই জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারই দূষণের প্রধান উৎস।তবে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষনের অন্যতম কারন হিসেবে ধরা হয়।বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে বিশ্বে জনসংখ্যা হবে ৯৫০ কোটি।এই অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকট ও বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ।আবার এই জনসংখ্যার জন্য অধিক বাসস্থান ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে হচ্ছে। চোখ মেললেই দেখা যায় আশেপাশে ময়লা আর্জনার ছড়াছড়ি,যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা, হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা পরিবেশ দূষণের আরেকটি কারন।অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছাচার জীবনযাপন, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার,যানবাহন ও শিল্পাঞ্চল ইত্যাদির ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণের প্রভাবঃ-
পরিবেশ দূষনের ফলে মানুষ,জীবজন্তুর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।যার ফলশ্রুতিতে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগ।যেমনঃ- ক্যান্সার,শ্বাসজনিত রোগ,ত্বকের রোগ ইত্যাদি।দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। ফলে পরিবেশ থেকে অনেক জীব বিলুপ্ত প্রায়।এদিকে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারনে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে।সমুদ্রের এই উচ্চগতির জন্য বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চল ভবিষ্যতে প্লাবিত হওয়ার মুখে।
বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণঃবায়ু দূষণঃ-বিশ্বে বায়ু দূষণের প্রথম তালিকায় ভারতের দিল্লি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।তবে বাংলাদেশ ও কম যায় না।বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা দূষিত নগরী হিসেবে খ্যাত।বায়ু দূষণ বলতে বুঝি বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ,ধোঁয়া, অথবা দুর্গন্ধ বাতাসে মেশা।তবে বায়ু দূষণের প্রধান কারন যান ও শিল্পকারখানার কালো ধোঁয়া।আবার গাছপালা ও ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ করছে।পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে এসিড বৃষ্টি হচ্ছে।
মাটি দূষণঃ-পৃথিবীর উপরিভাগের সমস্ত নরম আবরণই মাটি। আর এই মাটি দূষিত হচ্ছে নানা কারনে।তার মধ্যে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক,গৃহস্থালির বিভিন্ন বর্জ্য,রাসায়নিক পদার্থ,তেল ইত্যাদির মাধ্যমে। মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।গাছপালা ও পশুপাখি মারা যাচ্ছে এবং তাদের বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে।দূষিত মাটি স্বাস্থ্যের উপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসেবে মানব শরীরে প্রবেশের ফলে আক্রান্ত হচ্ছে নানারকম রোগে।
পানি দূষণঃ-পানির অপর জীবন।তবে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন।পানি যদি বিশুদ্ধ না হয়ে দূষিত হয় তবে পানির অপর নাম মরন।আর এই পানি দূষিত হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ পানিতে মিশে।এর জন্য আমরা নিজেরা দায়ী।পয়ঃনিষ্কাশন ও গৃহস্থালির বর্জ্য অথবা শিল্পকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে ফেলে আমরা পানিকে বিশুদ্ধ থেকে দূষিত করছি।পানি দূষণের ফলে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং জলজ খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটছে।মানব সমাজ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া,কলেরার মতো রোগে।এছাড়াও পানি দুষনের ফলে চর্মরোগ হয়।
শব্দ দূষনঃ- পরিবেশ দূষণের মধ্যে শব্দ দূষন একটি অন্যতম সমস্যা।যা মানুষ ও পশুপাখির স্বাস্থের ক্ষতি সাধন করে।অপ্রয়োজে গাড়ির হর্ণ বাজানো,উচ্চস্বরে গান বাজানো,মাইক বাজানো এসব শব্দ দূষনের অন্যতম কারন।এখন লক্ষ করলেই দেখা যায়, বিয়ে ও অনান্য সামাজিক কর্মকান্ডে উচ্চস্বরে গান বাজানো রীতি হয়ে দাড়িয়েছে।উচ্চ শব্দের আরেকটি কারন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বড় বড় যন্ত্রপাতির ব্যবহার।এই দূষণ মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে।অবসন্নতা,শ্রবণশক্তি হ্রাস,ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি,কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।নিজেরা সচেতন হলেই এই সমস্যা থেকে নিরাপদ থাকতে পারবো।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষন রোধে করনীয়ঃ-মানুষের অসচেতনতা ও অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারনেই পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতি হলেও কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত কারনে।আর তাই…..বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষনে ভুমিকা রাখতে পারি।কাজ শেষে বাতি নিভিয়ে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে পারি।গাড়ির পরিবর্তে পায়ে হেটে বা সাইকেল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে পূনর্ব্যবহার বা রিসাইকেলিং করে সংরক্ষণ করতে পারি।চাষাবাদে অজৈব সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে পারি।উদ্ভিদ সংরক্ষণে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।যেসব কারনে শব্দ ও অনান্য দূষণ হয় সেগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।গাছ লাগানো পরিবেশ সংরক্ষণের একটি অন্যতম উপায়।তাই সকলের উচিত বেশি বেশি গাছ লাগানো। সর্বোপরি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও রাষ্ট্রীয় আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে দেশ।
শ্যামলী তানজিন অনু
শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া
বাংলা বিভাগ