প্যাংগং লেকের ধারে ভারতীয় বাহিনী। —ফাইল চিত্র
গালওয়ান উপত্যকায় সেনা মোতায়েন নিয়ে আগেই কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছিল চিন। এ বার সেই সুর শোনা গেল চিনের বিদেশমন্ত্রকের তরফেও। সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিন, দু’দেশের পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ বলে জানিয়েছে চিনা বিদেশমন্ত্রক। আরও বলা হয়েছে, এই সমস্যা আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে সমাধানের জন্য দু’দেশই নিজেদের মধ্যে ‘নিরন্তর’ যোগাযোগ রেখে চলেছে।
সীমান্ত সঙ্ঘাতের জেরে ভারত এবং চিনের মতো দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বজায় রয়েছে। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চোখের পলক ফেলছে না কোনও পক্ষই। এই আবহেই চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাউ লিঝিয়ান বলেছেন, ‘‘দু’দেশের নেতৃত্বের মধ্যে মতৈক্য রক্ষার ব্যাপারে চেষ্টা করে আসছে চিন। আমরা নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার বিষয়ে যেমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তেমনই সীমান্ত বরাবর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারেও।’’ এর পরেই লিঝিয়ান বলেন, ‘‘এখন আমাদের সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। দু’দেশই নিজেদের মধ্যে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলেছে এবং আশা করি, আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমেই আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করা যাবে।’’
বুধবারই ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় সীমান্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে চিনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে। এর আগে সমঝোতার বার্তা দিয়েছিলেন চিনা রাষ্ট্রদূত সুন ওয়েডং-ও। তিনি বলেন, ভারত-চিন একে অন্যের পক্ষে বিপজ্জনক নয়। দু’দেশের বিরোধ কখনওই এমন পর্যায়ে যাবে না যে, তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। গত ৫ মে থেকে প্যাংগং লেকের কাছাকাছি এলাকায় সীমান্ত সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ে এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ। একই ছবি দেখা যায় সিকিমের নাকু লা পাস সীমান্তেও। সেই পরিস্থিতির মধ্যে চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে ডোকলামে ভারত-চিন মুখোমুখি অবস্থান চলেছিল ৭৩ দিন ধরে। এ বার লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান সোমবার ২৬তম দিনে পড়েছে। ওপারে বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে চিন। মে-র গোড়া থেকেই উপত্যকার ওল্ডি রোডে সেনা সমাবেশ করছে চিন। মাস খানেকের মধ্যে দারবুক, শায়ক ও দৌলতবেগেও চিনা সেনার সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। ভারতীয় চৌকি ‘কেএম-১২০’-র আশপাশেও পিপলস লিবারেশন আর্মির উপস্থিতি ধরা পড়েছে
পাল্টা সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে ভারতও। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে লাদাখের ওই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেনাকে। সেই সঙ্গে জড়ো করা হচ্ছে যুদ্ধাস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামও। সেনাকর্তাদের মতে, এই সময়ে বাহিনী সরিয়ে লাদাখে নিয়ে আসা ভীষণ দরকার এবং সেই মতোই কাজ হচ্ছে। লাদাখের দারবুক গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি রাতে ওই এলাকা দিয়ে ৮০ থেকে ৯০টি ট্রাক যাতায়াত করছে।
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা।