ব্যারিষ্টার নূর মুহাম্মদ আজমী
একটি বিদেশি মামলা ও আন্তর্জাতিক আইন….
১৯১৯ সালের ৮ এপ্রিল বেআইনি ভাবে সীমান্ত নদী রিও গ্র্যান্ডে পার হওয়ার সময় সি. গার্সিয়া নামে এক মেক্সিকান মেয়ে আমেরিকান সীমান্ত প্রহরীর গুলিতে মারা যায়। হতভাগ্য মেয়েটার বাবা-মা (টি. গার্সিয়া এবং এম. এ. গার্জা) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করে বসে। অনেক নাটকীয়তার পর এ মামলা নিয়ে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি যৌথ কমিশন গঠিত হয় এবং ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর গার্সিয়া হত্যাকান্ডের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় উক্ত কমিশন। [Garcia and Garza Case, USA vs Mexico 1926]
সীমান্ত হত্যা বর্তমানে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিনত হয়ে গেছে। প্রতিদিন সূর্য উঠবে, অস্ত যাবে, ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি খুন হবে, এ আর এমন কী!? গত জানুয়ারি মাসে অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে নওগাঁ, লালমনিরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৭ জন বাংলাদেশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে যে ২ জনকে হত্যা করা হয় তাদের একজনের নাম সেলিম। ১১ বছর আগে সেলিমের বাবাও বিএসএফের গুলিতে একইভাবে খুন হয়।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার খাতিরে সন্ত্রাসবাদ, গুপ্তচরবৃত্তি, ইত্যাদি ঠেকাতে রাতের বেলা সীমান্তে গুলি করার আইন আছে। কিন্তু সে আইন প্রয়োগেরও কিছু মানদন্ড রয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কারো উপর ঠিক ততটুকু বল প্রয়োগ করা যাবে যতটুকু না করলেই নয়। গুলি করতে হবে একেবারে শেষ প্রচেষ্টা (last resort) হিসেবে, নিরুপায় হয়ে।
১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের কোনো সৈন্য প্রতিকূল অবস্থায় পড়লে তাকে উদ্ধার করে সেবাযত্ন করতে হয়, অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করলে সসম্মানে বন্দি করে যুদ্ধ শেষে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হয়। যুদ্ধকালীন সময় শত্রুর জন্যেই এমন বিশেষ আইন। ভারতের সাথে আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থাতেই আছি, তদুপরি সীমান্তে যারা খুন হচ্ছে তারা সবাই নিরস্ত্র এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি স্বরূপ না। এরপরও তারা চাইলে ফাঁকা গুলি করে ধাওয়া দিতে পারে, অথবা এসল্ট গান ব্যাবহার করে বা অন্য কোনো ভাবে আটক করে যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে পারে।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের রাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বিদ্যমান। পৃথিবীর সবচেয়ে বৈরী সীমান্তেও হত্যাকান্ডের তেমন খবর পাওয়া যায়না। বাংলাদেশের উচিৎ এ নিয়ে একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছা।
লেখকঃ ব্যারিষ্টার নূর মুহাম্মদ আজমী, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট