হাইতি পশ্চিম গোলার্ধের ছোট ও দরিদ্র দেশ। কিন্তু তারপরও এই আধুনিক যুগে একজন প্রেসিডেন্টকে এমন নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় বিশ্বের অনেক দেশই হতবাক। হাইতির পুলিশ মূল সন্দেহভাজন ও অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে যারা যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার নাগরিক। কিন্তু এই হত্যাকালের পেছনে আসলে কে তা এখনও অধরা। মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই ও এর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এবং কলম্বিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তকাজে সহায়তা করতে হাইতিতে আছেন।
এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন প্রেসিডেন্ট জোভনেল ময়েসকে হত্যাকা্লের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছে। কলা রপ্তানিকারক থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ময়েসকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। তাকে নির্যাতন করা হয়েছে যাতে তার বাম পা ভেঙে গেছে। তার মুখেও নির্যাতন করার চিহ্ন দেখা গেছে। তার শরীরে অন্তত ১৪ টি বুলেট পাওয়ার খবর জানিয়েছিলেন চিকিত্সকরা। যদিও ময়েসের স্ত্রী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা বাসায় প্রবেশ করে মুহূর্তের মধ্যেই প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে। যদিও টুইটারে প্রকাশ করা ভিডিও রেকর্ডিংটি তার কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি সিএনএন। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীরা একটা ফাঁদ পেতেছিল। তারা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে এবং চিত্কার করে ইংরেজিতে বলছিল, ‘এটা ডিইএ’র অপারেশন। সবাই পেছনে চলে যাও’। একটি সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী প্রেসিডেন্টকে জিম্মি করার খবর পেয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে যায়। তখন অন্ধকার ছিল। তারা সেখানে পাঁচটি গাড়ি দেখতে পায়। কিন্তু ভেতরে যে কেউ আছে তা বুঝতে পারেনি। গাড়ি পাঁচটি তারা চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়।
যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি
প্রেসিডেন্টের শরীরে এতগুলো গুলি লাগলেও তার একজন দেহরক্ষীও আহত হননি। দেশটির নির্বাচনমন্ত্রী মাথিয়াস পিয়েরে প্রশ্ন রেখেছেন, হামলাকারীরা গাড়ি কোথা থেকে পেল এবং কিভাবে তারা দেশে আসল? তিনি আশা করেছিলেন, দেহরক্ষীরাই হয়তো প্রেসিডেন্টের বুলেটগুলো গ্রহণ করবে। কিন্তু সেটা তো হয়নি। হাইতির পুলিশ বলছে, ২৮ জন হামলায় জড়িত। ২৬ জন কলম্বিয়ান এবং দুইজন আমেরিকান। দুই মার্কিনী দোভাষী বলে জানা গেছে। কয়েকজন আবার এফবিআই এবং মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (ডিইএ) এর তথ্যদাতা ছিলেন। ডিইএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, একজন তো তাদের গোপনীয় তথ্যদাতা ছিলেন। এফবিআই তাদের তথ্যদাতা সম্পর্কে কিছু জানায়নি। এটা তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। আটককৃতদের কাছে থেকে এখনও কোন তথ্য পাওয়ার কথা জানা যায়নি। হাইতির পুলিশ মূলহোতা হিসেবে হাইতিয়ান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক ক্রিশ্চিয়ান এমানুয়েল স্যানোনকে আটকের দাবি করেছে। তবে তিনিই যে মূলহোতা সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এখনও জানা যায়নি যে ময়েসকে হত্যার আগের মুহূর্তে আসলে কী ঘটেছিল?
নিহত হওয়ার আগের দিন ময়েস সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এরিয়েল হেনরিকে নিয়োগ দিলেও নতুন প্রধানমন্ত্রী শপথ নিতে পারেননি। তাই আগের প্রেসিডেন্ট ক্লদ জোসেফই দায়িত্বে। প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে এখন চলছে লড়াই। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিককালে বিক্ষোভ হলেও তার নিহত হওয়ার ঘটনা অনেকেই মেনে নিতে পারছে না। হাইতি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার প্রফেসর রবার্ট ফ্যাটনের মতে, হাইতির ইতিহাসের সবচেয়ে ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা। হাইতির মতো অস্থিতিশীল দেশের জন্যও প্রেসিডেন্টকে এভাবে হত্যার ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক এবং গভীর উদ্বেগের।