মোঃ নূরুল হক
‘আলহামদুলিল্লাহ’ দিয়ে পবিত্র আল কোরআনের আয়াতগুলো শুরু এবং ‘নাস’ দিয়ে সমাপ্ত। এ যেন মহান আল্লাহ তাআলার সর্বশ্রেষ্ঠ দান ও অনুগ্রহের জন্য শোকরিয়া জ্ঞাপন এবং আল কোরআনের বিষয়বস্তু ‘মানুষ’কে নির্দেশ করে। স্রষ্টা ও সৃষ্টির অনুপম সম্পর্ক এবং সৃষ্টি হিসেবে মানবজাতির আবশ্যিক করণীয় বিষয় নিয়ে আল কোরআন বিস্তারিত বিষয়বস্ত নিয়ে আলোচনা করে। সংক্ষিপ্ত অথচ জ্ঞানগর্ব আলোচনা আল কোরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আল কোরআনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১. Metaphysical & Abstract (অধিবিদ্যামূলক ও ভাবমূলক)
২. Theological (ধর্মতত্ত্বীয়)
৩. Ethical & Mystical (নৈতিক ও রহস্যমূলক) এবং
৪. Rituals & Legal (ধর্মাচার ও আইন সংক্রান্ত)।
মহান আল্লাহর পরিচয়, তাঁর বিভিন্ন গুণাবলি ও ক্ষমতা, আসমান ও জমিন সৃষ্টি, মানব সৃষ্টি ও মানবজাতির প্রতি তাঁর বিভিন্ন দান ও অনুগ্রহ, স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক, দৃশ্য ও অদৃশ্য জগতের সেতুবন্ধন, ইহজাগতিক ও পরজাগতিক বিভিন্ন বিষয় যেমন- তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, নবী-রাসুল প্রেরণ, নবী-রাসুল প্রেরণের কারণ ও উদ্দেশ্য, ফেরেশতা ও কিতাব নিয়ে বর্ণনা, ইবাদাত ও ইবাদাতের পদ্ধতি, বাধ্যতা ও অবাধ্যতার পরিণাম, জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদি এর বিষয় সুনিপুণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে।
তাছাড়া এতে ধর্ম, বিজ্ঞান, ইতিহাস, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন- অর্থনীতি, রাজনীতি, দর্শননীতি, ভূগোলবিদ্যা, স্থাপত্য ও কলাবিদ্যা, মহাকাশবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, ভ্রূণতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, সমরনীতি ও সমরবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা, অণু জীববিদ্যা, তড়িৎবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, পৌরবিদ্যা, ভাষাতত্ত্ব, ধর্মশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, আচরণবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা, গার্হস্থ্যবিদ্যা, সামুদ্রিকবিদ্যা, পরিবেশবিদ্যা, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, বিগ ব্যাং বা মহা সম্প্রসারণ, লৌকিক ও অলৌকিক ঘটনা, জাগতিক ও মহাজাগতিক ঘটনা, সময়জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়েও সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন- ওয়াদা বা চুক্তি, ওয়াসিয়াত বা উইল, দান- সাদাকাহ, বন্ধক, বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ভ্রাতৃত্ববোধ, সাহায্য ও সহযোগিতা, আচরণ ও সম্পর্ক, জীবন যাপন পদ্ধতি, আদব-কায়দা, সততা ও মিথ্যাচারিতা, আলো ও অন্ধকার, সুশাসন, নৈতিকতা, ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক; বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, লোভ, হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, হত্যা, ফিতনা-ফ্যাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, চুরি, গর্ব ও অহংকার, সম্পত্তি আত্মসাৎ, রাষ্ট্র পরিচালনার বিধি-নিষেধ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি, নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য ; স্রষ্টা ও সৃষ্টির পারস্পরিক বিষয় যেমন- নিয়্যত বা সংকল্প, পবিত্রতা, ঈমান, সালাত/নামায, যাকাত, সাওম/রোযা, হজ্ব, পোশাক-পরিচ্ছদ , সৎকর্ম, রিযক, তাকদির, ইলমা ও হিকমা বা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, তাক্বওয়া, হালাল-হারাম, জিহাদ, মুনাফেকি, কুফরি, শিরক, রুহ জগৎ, হায়াত-মাউত বা জীবন-মৃত্যু, দাফন-কাফন, বারযাখ বা কবর জীবন, সতর্কবাণী ও পরিণতি, সীমালঙ্ঘন ও পরিণাম, তাওবা, কিয়ামত, পুনরুত্থান, হাশর, পুলসিরাত, আমলনামা বা হিসাব গ্রহণ, পুরস্কার ও শাস্তি, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ মানুষের জন্ম-জীবন-মৃত্যু-পরিণতি সম্পর্কিত বর্তমানসহ আগের ও পরের এমন কোন বিষয় নাই যা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লেখ করা হয় নাই। শুধু একক গ্রন্থ হিসেবে পৃথিবীর কোন বইয়ে এত তথ্য ভাণ্ডার নাই, যা এ ঐশীগ্রন্থে সন্নিবেশিত আছে। আবার তাও স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ভুল ঘোষণা ও পূর্ণ সংরক্ষণের নিশ্চয়তাসহ হাজার বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান আছে। যা Complete Code of Life হিসেবে সাক্ষ্য বহন করে। দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর ধরে বিক্ষিপ্তভাবে নাযিল হলেও কোথাও কোন বৈপরীত্য নাই। নিঃসন্দেহে আল কোরআন মানবজাতির জন্য এক বিস্ময়কর নিয়ামত, যার যথাযথ অনুসরণে ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি ও মুক্তি সম্ভব।
মোঃ নূরুল হক , সহকারী জজ, গাইবান্ধা।