অপূর্ব কৃষ্ণ রায়: মাসিক কোন রোগ নয়, প্রতিটা নারীর জীবন চক্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি নাম মাসিক।তাই প্রতিটি মেয়ে যাতে মাসিকের বিষয়টিকে আতঙ্ক হিসেবে না দেখে স্বাভাবিক একটি বিষয় হিসেবে দেখতে শেখে এবং সচেতন থাকে। এক্ষেত্রে তার পরিবারের ভূমিকা খুব জরুরি।
২০১৪ সালে জার্মানির এনজিও ওয়াশ ইউনাইটেড ২৮ মে মাসিক স্বাস্থ্য দিবসের সূচনা করেছিলো।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঋতুস্রাব বিষয়টি অবহেলিত। এর সাথে সম্পৃক্ত হলো মাসিককালীন ন্যাপকিন, ব্যাথাজনিত ঔষধ, দূর্বলতা প্রতিরোধকারী ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব। সাধ্যের বাহিরে ঔষধ, স্যানিটারি ন্যাপকিনের মূল্য ও অপ্রাপ্যতা সাথে সামাজিক ট্যাবু তো আছেই।
অনেক নিম্ন আয়ের নারীরা জানেনা প্যাড কি! ঋতুকালীন স্যানিটারি ন্যাপকিনের অপ্রতুলতার কারণে অনেক মেয়ে স্কুল, কলেজে যায় না প্রায়ই।সুতরাং এই মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করার অন্যতম একটি উদেশ্য হলো মাসিক ও নারী স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সেবা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়া।
আমরা জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে প্রথম আতুর ঘর সম্পর্কে পড়েছি। যেখানে সন্তান প্রসবের পর ওই নারীকে অপবিত্রতা বা নাপাকের দোহাই দিয়ে বাড়ীর বাহিরে রাখার নিয়ম প্রচলিত ছিলো ঠিক একইভাবে মাসিকের সময়ও নারীকে একই দোহাই দিয়ে আবদ্ধ করে ফেলা হতো। অথচ মাসিকের সময় নারীদের অনেক যত্ন দরকার হয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি পান করা খুব জরুরি।
কিন্তু এইযে মাসিকের সময় নারীরদের প্রতি বিপরীতমুখী যে আচরণ তা আমাদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে তবেই আমরা সমৃদ্ধ নারী জাতিকে পরবিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের উন্নয়নে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারবো। প্রতিটি পরিবারের বাবা-মা যদি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে মাসিক নিয়ে আলোচনা করেন, তবে হয়ত এ বিষয়ে সচেতনতা আরো বাড়বে৷
মাসিক যে একটা নারীকে অন্য একটা প্রাণের জন্ম দেয়ার জন্য তৈরি করে, এটা যে তার জন্য কোনো অভিশাপ নয় বা সমাজের নিষিদ্ধ কোনো আলোচনার বিষয় নয়, কমেয়েরা যেন তা বুঝতে পারে এবং ছেলেদের সঙ্গে এ বিষয়ে এ জন্য আলোচনা করা, যাতে ছেলেরা এসময় মেয়েদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে৷ তাই পরিবারই হোক এক্ষেত্রে একটি ছেলে-মেয়ের সচেতনতার সূতিকাগার।
লেখক: অপূর্ব কৃষ্ণ রায়,
শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী,
সিরাক-বাংলাদেশ।