জীবনে দারিদ্র্যতার চাবুকে জর্জরিত হওয়ার প্রয়োজনীতা আছে। দারিদ্রতা জীবনের বাস্তব রূপকে চোখের সামনে তুলে ধরে।
এখন সামনে তাকালেই শুধু বিদায়ের ঘন্টা শুনি। তাই মাঝেমধ্যে পেছনে তাকাই। ফেলে আসা দিনগুলো নিজের অতীতকে আয়নার মতো দেখিয়ে দেয়।
দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা। গ্রামের চৌহদ্দিতেই বুঝি আটকে থাকতো ভাবনার রঙিন স্বপ্নগুলো। বাড়ির পেছনে বিস্তৃত ধানি জমিন, কুয়াশায় আবছা প্রান্তর, বর্ষায় ডুবে যাওয়া মাঠ, নদীর স্রোতের সাথে কাঁপতে থাকা অনাগত ভবিষ্যৎ – এসব মিলেই বেড়ে উঠেছে শৈশব।
ঈদের মতো স্বর্গীয় সুখগুলো মলিন জামাকাপড়ের ইস্ত্রীহীন ভাঁজে বিবর্ণ হতো। মাঝে মাঝে মনে হতো কী এমন ক্ষতি হয় এসব ঈদের ধামাকা না এলে!
ঈদের রঙিন ফানুসগুলো পয়সাওয়ালাদের ঘরে,আঙিনায়,জামা ও হৈ হুল্লোরেই বুঝি আটকে থাকতো!
ঈদের মহিমা কি সত্যিই ধনী-গরীব সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারে? আমার দ্বিমত আছে অনেকের এমন গালভরা বুলি নিয়ে।
তখন অনেক ছোট। বাবা- মায়ের দীনতার কথা,মায়ের অক্ষমতার কথা বুঝার মতো সুক্ষ্ম অনুভূতি জন্ম নেয়নি। কিন্তু যাদের কাছে ধনী গরিবের ব্যবধানটা আভিজাত্যের মাদুলী ছিল তারা সেটা বুঝিয়ে দিতে দ্বিধা করতো না।
দলবেঁধে ঈদের দিন বেড়ানো শিশু-কিশোরদের জন্য খুবই আনন্দময় ব্যাপার বটে।কে কার আত্নীয় তা মেপে দেখার সময় কই!
খুব বেশি দূরের আত্মীয় ছিল না। অনেকের সাথে আমার মেঝ বোন আর আমিও গেলাম। তখনকার দিনে সেমাই ছিল দেশীয় ও বোম্বে। বোম্বে সেমাই এখনকার মতো এতো সহজলভ্য ছিল না। আর্থিকভাবে হৃষ্টপুষ্টরাই এই সেমাই কিনত। সবাইকে এ সেমাই দেয়া হতো না।
আমরা যাদের গেলাম তাদের এক নিকটাত্মীয় আমাদের সাথে ছিল।। আমরাও একেবারে অনাত্মীয় ছিলাম তা নয়।
ফারাকটা বুঝলাম সেমাই পরিবেশনের সময়। নিকটাত্মীয়ের সন্তানকে ভেতরের ঘরে নিয়ে বোম্বে সেমাই পরিবেশনে দোষ দেখিনা। কিন্তু তা নিয়ে লুকোচুরি এবং অন্যদের প্রতি খানিকটা তাচ্ছিল্যভরে অন্য সেমাই পরিবেশনটাই এখনো চোখে ভাসে।
ঐ মহিলা মারা গেছেন সেই কবে।
আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দান করুন। উনার ছেলেদের দেখলে আমার স্মৃতিতে এখনো ঐ দৃশ্য ভেসে উঠে।
উনার ছেলেদের আর্থিক অবস্থার কথা এখন বলতে চাই না। একমাত্র আল্লাহ সর্বক্ষমতার মালিক।
মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
আমার প্রিয় পাঠকদের বলবো অন্তত শিশু- কিশোরদের সামনে বৈষম্যের দেয়াল গাঁথবেন না। কে জানে এ দেয়ালের স্মৃতি কে কিভাবে মনের মণিকোঠায় রেখে দেয়।
আসুন,আমি আপনি সবাই ঈদকে সাম্যের আলোয়ানে সজ্জিত করি। ভুলে যাই কে গরীব কে ধনী।
দুদিনের দুনিয়া। এখানে সবাই মুসাফির। কে স্থায়ী নয়। এ সত্যটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
লেখকঃ সেলিম উদ্দিন, ফেসবুক থেকে নেয়া।
১৪ মে,২০২১