সব
facebook apsnews24.com
মামলা প্রমানের দায়-ভার ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা - APSNews24.Com

মামলা প্রমানের দায়-ভার ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মামলা প্রমানের দায়-ভার ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান

প্রমানের ভার (Burden of Proof): ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে Burden of Proof বা প্রমানের দায়িত্ব সম্পর্কীয় বিধানাবলী একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা হতে ১১৪ ধারা পর্যন্ত এই সকল বিধিগুলি সন্নিবেশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মোকদ্দমায় কোন বিষয় প্রমানের ভার কার উপর বর্তায়,উল্লেখিত ধারাগুলির মাধ্যমে এই সম্পর্কীয় বিধানাবলী আলোচিত হয়েছে।

কোন মোকদ্দমায় বাদী বা বিবাদী যে সকল ঘটনার অস্তিত্ব উপর নির্ভর করে কোন বৈধ অধিকার বা দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, সেই সকল ঘটনার অস্তিত্ব প্রমান করার দায়-দায়িত্ব কে প্রমানের ভার বা প্রমানের দায়িত্ব বলা হয়। সুতরাং প্রমান করার দায়িত্ব বলতে কোন বিষয়াবলীর অস্তিত্ব সাক্ষ্যের দ্বারা আদালতের সৃষ্টি অনুযায়ী প্রমান করে মোকদ্দমাকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্বকে বুঝায় মোকদ্দমার শুরুতে এই দায়িত্ব একটি পক্ষের উপর থাকে,কিন্তু মোকদ্দমা চলাকালে এই দায়িত্ব একপক্ষ হতে অন্য পক্ষের উপর স্থানান্তরিত হয়। যার উপর প্রমানের দায়িত্ব বর্তায় তাকে অবশ্যই একটি Prima Facie কেস প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সাধারন অর্থে কোন একটি ঘটনার দাবি সহ উক্ত ঘটনার অস্তিত্ব প্রমান করার বাধ্যবাধকতাকে সাক্ষ্য আইনে প্রমানের ভার (Burden of Proof) বলে। প্রমানের ভার কথাটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং এই দু’টি অর্থ ১০১ এবং ১০২ ধারাতে বিবৃত হয়েছে।

(ক) সাক্ষ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রেঃ

সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারায় বলা হয়েছে , যে ব্যক্তি কোন তথ্যের অস্তিত্বের দাবি করে সেই তথ্যের উপর নির্ভরশীল কোন আইনগত অধিকার বা দায় সম্পর্কে আদালতের রায় কামনা করে তাহলে তিনি সেই তথ্যের অস্তিত্ব অবশ্যই প্রমান করবেন। তথ্য প্রমান করার তথা সাক্ষ উপস্থাপনের (Introducing Evidence) এ দায়িত্ব অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ যে পক্ষ কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন অধিকার দাবি করে কোন কোন অধিকার দাবি করবে সেই পক্ষকে সেই তথ্য প্রমান করতে হবে।

(খ) সাক্ষ্য উপস্থাপন করার দায়িত্বঃ

সাক্ষ্য আইনের ১০২ ধারায় বলা হয়েছে, মোকদ্দমা বা কার্যক্রমে কোন পক্ষ হতে সাক্ষ্য দেওয়া না হলে যে পক্ষ মোকদ্দমায় ঠকবে মোকদ্দমার বিষয়বস্তু প্রমান করার দায়িত্ব সেই পক্ষের উপর ন্যাস্ত হবে। ১০২ ধারায় বর্ণিত প্রমানের এই ভারটি পরিবর্তনীয় এবং সাক্ষ্য উপস্থাপন করার এই দায়িত্ব প্রতিনিয়ত এক পক্ষ হতে অন্য পক্ষের উপর স্থান পরিবর্তন করতে থাকে।

প্রমানের ভার যার উপর ন্যস্তঃ সাক্ষ্য আইনের বিধান অনুযাযী নিম্নলিখিত ব্যক্তি উপর প্রমানের ভার বা দায়িত্ব বর্তায়-

(১) যে ব্যক্তি আদালতের রায় কামনা করেঃ

সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারানুযায়ী যিনি কোন ঘটনার অস্তিত্ব দাবি করে সেই ঘটনার উপর নির্ভরশীল কোন আইনগত বা দায় সম্পর্কে আদালতের রায় কামনা করেন, তিনি সেই ঘটনার অস্তিত্ব অবশ্য প্রমান করবেন। তবে যে ব্যক্তি উপস্থাপিত বিষয়াবলীর অস্তিত্ব অস্বীকার করেন,প্রমানের ভার বা দায়িত্ব তার উপর বর্তায় না।

(২) যে পক্ষ মোকদ্দমায় পরাজিত হবেঃ

সাক্ষ আইনের ১০২ ধারানুযায়ী কোন মোকদ্দমার বা বিচার কার্যক্রমে কোন পক্ষ হতেই সাক্ষ্য দেয়া না হলে যে পক্ষ মোকদ্দমায় ঠকবে বা পরাজিত হবে মামলার বিষয়বস্ত প্রমান করার দায়িত্ব সেই পক্ষের উপর ন্যস্ত হবে।

(২) দেওয়ানি মোকদ্দমার ক্ষেত্রেঃ

দেওয়ানি মোকদ্দমার ক্ষেত্রে কোন ঘটনা প্রমানের দায়িত্ব সাধারনত সেই পক্ষের উপর ন্যস্ত হবে ,যে পক্ষের অধিকার ক্ষুন্ন হযেছে বা অধিকার খর্ব করা হয়েছে এবং যার জন্য সে তার পক্ষে রায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্ত হয়েছে।

(৩) ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেঃ

ফৌজদারি মামলার আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা অপরাধ প্রমানের দায়িত্ব অভিযোগকারীর পক্ষের উপর বর্তায়। কিন্তু ফৌজদারি মামলার আসামি যদি দাবি করে যে তার বিরুদ্ধে আনীত মামলাটি বাংলাদেশের দন্ডবিধিতে বর্ণিত কোন সাধারন বা বিশেষ ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে,তবে সে ক্ষেত্রে প্রমানের দায়িত্ব আসামির উপর বর্তাবে।

(৪) যে ব্যক্তি অবগতির মধ্যে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেঃ

সাক্ষ্য আইনের বিধান অনুযায়ী কোন বিশেষ ঘটনা যদি কোন বিশেষ ব্যক্তির অবগতির মধ্যে থাকে সেক্ষেত্রে উক্ত বিশেষ ঘটনা প্রমানের দায়িত্ব ঐ বিশেষ ব্যক্তির উপর বর্তাবে।

প্রমানের দায়িত্বের পরিবর্তন (Shifting of Burden of Proof):

প্রমানের ভার ( Burden of Proof ) এর সাথে সাক্ষ উপস্থাপনের ভার ( burden of proof Introducing evidence ) এর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা উচিৎ নয়। সাক্ষ্য প্রদানের ভার পরিবর্তিত হয় কিন্তু প্রমানে ভার পরিবর্তিত হয়না; ইহা স্তির থাকে। সাক্ষ্য আইনের ১০২ ধারা মোতাবেক Prima facie কেস প্রমানের ভার ফরিয়াদির উপর। যখন বাদী এরুপ সাক্ষ্য দেয় যা Prima facie কেস সমর্থন করে তখন উহা খন্ডন করার জন্য প্রমানের ভার বিবাদীর উপর পরিবর্র্তিত (Shifted ) হয়।

কখন প্রমানের ভার নিধারনের প্রশ্ন উঠেঃ

প্রমানের ভার তখনই নির্ধারনের বিষয় যখন কোন সাক্ষ্য প্রমান নেই বা স্বাক্ষ্য প্রমান এতই সমতাপূর্ন যে আদালত কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে না। যখন সমস্ত স্বাক্ষ্য আদালতের সামনে থাকে তখন প্রমানের দায়িত্যের প্রশ্ন সম্পূর্ণরুপে একাডেমিক। যখন সকল স্বাক্ষ্য প্রমান আদালতের সামনে থাকে এবং সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে কোন অসুবিধা না থাকে তখন প্রমানের ভার কার উপর বর্তায় সে প্রশ্নে প্রবেশ করার প্রয়োজন নেই। প্রমানের ভার তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয় যখন কোন কোন পক্ষকে বিশ্বাস করা হবে বা কোন পক্ষে মোকদ্দমা জিতবে সে সম্বন্ধে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

ফৌজদারি মামলা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের উধ্বে রমানের ভার কার উপর বর্তায়?

ফৌজদারি মামলার মূলনীতি হল যে আসামিকে নির্দোষ গন্য করতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত ফরিয়াদি বা রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে (Beyond Reasonable Doubt) তার দোষ প্রমান করে। সুতরাং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ যুক্তি সঙ্গত সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমানের দায়িত্ব ফরিয়াদির উপর ন্যস্ত। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শুধুমাত্র এই কারনে শাস্তি প্রদান করা যাবেনা যে, সে তার নির্দোষী হওয়ার পক্ষে যথেষ্ঠ প্রমান হাজির করতে পারেনি। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ বলে অনুমান করে নেওয়া হয় এবং আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান করতে প্রয়োজণীয় সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় আদালতে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব ফরিয়াদির বা রাষ্টের উপর বর্তায়।

এই সাধারন নিয়মের ব্যতিক্রম হলো সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারা। এই ধারা মোতাবেক কোন অপরাধে কোন ব্যক্তি অভিুক্ত হলে যদি সে তার অপরাধ সম্পর্কিত কাজটি দন্ডবিধিতে বর্ণিত কোন সাধারণ অথবা বিশেষ ব্যতিক্রমের মধ্যে আনতে চায় তাহলে সেই বিষয়ে কোন অবস্থার অস্তিত্ব প্রমানের দায়িত্ব উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর বর্তায়। Md. Abdul Majid Vs the State DLR(AD) 83 page এ উল্লেখিত মোকদ্দমায় মহামান্য আপিল বিভাগ তার রায়ে বলেন যে, সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারায় যে সকল পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকার কারণে অপরাধির মামলা বিশেষ বা সাধারণ ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে তা প্রমানের ভার সেই অপরাধির উপর পড়ে।

লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, লেখক ও আইনজীবী, জজকোর্ট মেহেরপুর, E-mail: advmizanur98@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করার ফলাফল ও প্রাসঙ্গিকতা

হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করার ফলাফল ও প্রাসঙ্গিকতা

আইনজীবী হলেন ৫ হাজার ৯৭২ জন

আইনজীবী হলেন ৫ হাজার ৯৭২ জন

আইনজীবী নিবন্ধনে পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্টকরণ ও পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ভার্চুয়াল সভা

আইনজীবী নিবন্ধনে পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্টকরণ ও পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ভার্চুয়াল সভা

জমি অধিগ্রহণ কি, কেন, কখন, কিভাবে?

জমি অধিগ্রহণ কি, কেন, কখন, কিভাবে?

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট যে কোন দিন

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট যে কোন দিন

প্রবীণ আইনজীবী এস এম মনজুর উল আলমের মৃত্যুতে জাতীয় মানবাধিকার সমিতির শোক

প্রবীণ আইনজীবী এস এম মনজুর উল আলমের মৃত্যুতে জাতীয় মানবাধিকার সমিতির শোক

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj