সব
facebook apsnews24.com
মানব আচরণ এবং থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটি' - APSNews24.Com

মানব আচরণ এবং থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটি’

মানব আচরণ এবং থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটি’

রায়হান কাওসার

থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটির সহজ বাংলা করা কঠিন। তবে সহজ অর্থে ‘থিওরী অব হার্ম সেনসিটিভিটি’ (Theory of harm sensitivityবলতে “ক্ষতি সম্ভাবনা তত্ত্ব” বলা যেতে পারে। অর্থাৎ কোন একটি বস্তু, প্রানী বা ঘটনা কতটুকু ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতা রাখে, সে অনুপাতে কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করা বা সেটিকে মোকাবিলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করার নামই হলো ‘থিওরী অব হার্ম সেনসিটিভিটি’। থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটি সবচেয়ে বেশি অনুভব করি যখন আমি আমার বাইকটি নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাই কিংবা কাজে বের হই। রাস্তায় নামলে খেয়াল করে দেখি, ভ্যানচালক ও সিএনজিওয়ালা পাত্তা দিতে চায় না সাইকেল এবং মোটরসাইকেলওয়ালাকে।

আবার, একই সিএনজি বা ভ্যানওয়ালা যখন বাস বা চার চাকার গাড়ীর মুখোমুখি হয় কিংবা তার চেয়ে বড় গাড়ি আসতে দেখে, তখন অটোমেটিক সাইড নিয়ে বসে থাকে। আবার, প্রাইভেট কার বা মাঝারি সাইজের বাসগুলো যখন বড় ট্রাক বা লরিকে নিজের দিকে আসতে দেখে তখন আগেই সাইড নিয়ে বসে থাকে। ঠিক একইভাবে, ট্রেন আসতে দেখলে ট্রাক-লরি, কার-ভ্যান যাই হোক না কেন, সবাই দশ হাত দূরে অপেক্ষা করতে থাকে। ট্রেন চলে গেলে তবেই রাস্তা পার হতে শুরু করে সবাই। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, সরাসরি সংঘর্ষ হলে কার কতটুকু ক্ষতি হবে- সেটা ভেবেই এই গাড়িগুলো ঠিক করে কতটুকু সাবধানতা তারা অবলম্বন করবে এবং কতটুকু রাস্তা অন্য গাড়িকে ইচ্ছেমত ছেড়ে দিবে। ভ্যানওয়ালা খেয়াল করে দেখে যে, বাইকওয়ালা তাকে মেরে দিলে বাইকওয়ালা নিজেই ভ্যানের বডির সাথে লেগে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। তাই ভ্যানওয়ালা ভাবে, আমার সাবধান হওয়ার দরকার কী। ব্যাটা বাইকওয়ালাই সাবধান হোক গিয়ে, আমার তো আর কোন রিস্ক নাই।

আবার একটু পরেই যখন সামনে দিয়ে একটা বড় মালবাহী ট্রাক আসে, সেই একই ভ্যানওয়ালা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সাইড নিয়ে বসে থাকে। দেখা যাচ্ছে, একই ভ্যান চালকের ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন আচরণ। অর্থাৎ বিপদের তীব্রতা বিবেচনা করে সে তার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করছে। এটিই হলো থিওরী অব হার্ম সেনসিটিভিটি। ‘থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটি’কে আমরা একটি বাংলা প্রবাদ দিয়ে সহজে ব্যাখ্যা করতে পারি। সেটি হলো “শক্তের ভক্ত, নরমের যম”। আমরা আমাদের সামাজিক জীবনে শক্তিশালী ও ধনবান লোকদের দেখলেই সালাম দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাই, না চাইতেই তেল মারি, ভীতি-শ্রদ্ধায় হাত মুচড়িয়ে কাঁচুমুঁচু শুরু করে দেই, নমঃ নমঃ ভাব দেখাই। অন্যের সামনে তার হাজারো রকমের গুণ রয়েছে বলে রূপকথা সাজাতে থাকি। আবার, একই আমরা আমাদের সমাজের একটা গরীব ও দুর্বল লোককে দেখলে ঠিক সেভাবে সম্মান করতে আগ্রহী হই না। মুখ দিয়ে আর সালাম বের হতে চায় না, শ্রদ্ধায় মাথা নত হতেও চায় না কিংবা আলগা তেল মারার ইচ্চাও জাগে না আমাদের মনে। আপনি মনে মনে ভাবেন, ব্যাটাকে সালাম দিলেই কী, আর না দিলেই কী। ব্যাটা তো খুব একটা কাজের না। এটাই হলো ‘থিওরী অব হার্ম সেনসিটিভিটি’।

পৃথিবীর ইতিহাস এই ‘থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটি’র উপর নির্ভর করেই আবর্তিত হচ্ছে। যারা ইতিহাস বিষয়ে পড়েছেন তারা বিষয়টা ভালভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। আগেকার দিনে এক রাজা আরেক রাজার পাছায় লাথি মেরে ক্ষমতা কেড়ে নিত, যুদ্ধ হতো, অনেক লোক মারা যেত। পরাজিত রাজা রাজ্য ছেড়ে পালাত অথবা তাকে হত্যা করা হতো। তবে, কিছু কিছু রাজা ছিল বেশ সেয়ানা। তারা প্যাদানী খেয়ে রাজ্য হারাবার আগেই বশ্যতা স্বীকার করে নিত। তারা বলত, এই রাজ্য আপনার নিকট বশ্যতা স্বীকার করছে মহারাজাধিরাজ! এই রাজ্য আপনারই। আমরা আপনারই গোলাম, আপনার আদেশ মান্য করে ধন্য হতে চাই এবং প্রতি বছর আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা দিয়ে আপনার পদধুলি নিতে চাই। অর্থাৎ ঘটনা কী দাঁড়াল? প্রজা নমস্কার করে রাজাকে, আর রাজা নমস্কার করে তার চেয়ে শক্তিশালী কাউকে। এটাই হলো ‘থিওরী অব হার্ম সেনসিটিভিটি’।

তবে পৃথিবী এখন আর সেই জামানায় নেই। অনেক পরিবর্তন এসেছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। রাজা আর রাজা নেই। নেই সম্রাট আর তার সাম্রাজ্যও। কালের বিবর্তনে প্রজারা হয়েছে শিক্ষিত, মেধাবী ও জ্ঞানী। রাজা নেমে এসেছেন প্রজাদের কাতারে। রাজা-প্রজার ভেদাভেদ ঘুচেছে অনেকটাই। মানুষ হয়েছে স্বাধীন- সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই। আমরাও রয়েছি পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে। আমরাও আজ কিছুটা স্বাধীন। তবে আমাদের এখনও অনেক কিছু রয়েছে শেখার, অনেক কিছু রয়েছে অর্জন করার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানবিক উন্নয়নও জরুরী হয়ে পড়েছে আমাদের জন্য। থিওরি অব হার্ম সেনসিটিভিটি অনুযায়ী যেন আমরা মানুষের সাথে আচরণ না করি। আমরা এমন একটি পৃথিবীপ্রত্যাশা করি যেখানে টাকা-পয়সা ও সামাজিক স্ট্যাটাস দিয়ে মানুষকে ওজন করা হবে না, যেখানে ভীতি আর ক্ষমতা হবে না প্রশংসার মানদন্ড। আমরা এমন পৃথিবী প্রত্যাশা করি যেখানে মেধা, সততা ও মানবতার সুঘ্রাণই হবে শ্রদ্ধা ও সম্মানের মানদন্ড।

লেখকঃ রায়হান কাওসার, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

মতামত লেককের ব্যক্তিগত।

আপনার মতামত লিখুন :

হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করার ফলাফল ও প্রাসঙ্গিকতা

হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করার ফলাফল ও প্রাসঙ্গিকতা

আইনজীবী হলেন ৫ হাজার ৯৭২ জন

আইনজীবী হলেন ৫ হাজার ৯৭২ জন

আইনজীবী নিবন্ধনে পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্টকরণ ও পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ভার্চুয়াল সভা

আইনজীবী নিবন্ধনে পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্টকরণ ও পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ভার্চুয়াল সভা

জমি অধিগ্রহণ কি, কেন, কখন, কিভাবে?

জমি অধিগ্রহণ কি, কেন, কখন, কিভাবে?

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট যে কোন দিন

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট যে কোন দিন

প্রবীণ আইনজীবী এস এম মনজুর উল আলমের মৃত্যুতে জাতীয় মানবাধিকার সমিতির শোক

প্রবীণ আইনজীবী এস এম মনজুর উল আলমের মৃত্যুতে জাতীয় মানবাধিকার সমিতির শোক

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj