রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি দিন কয়েকের মধ্যে মারা যেতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন তাঁর চিকিৎসকেরা। আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
নাভালনি বর্তমানে রাশিয়ায় কারাগারে আছেন। তিনি কারাগারে গত ৩১ মার্চ থেকে অনশন করছেন। পিঠে তীব্র ব্যথা ও পায়ের অসাড়তার জন্য সঠিক চিকিৎসার দাবিতে তিনি এ অনশন করছেন।
নাভালনির চিকিৎসকেরা বলছেন, তাঁর (নাভালনি) সাম্প্রতিক রক্ত পরীক্ষার ফলাফল বলছে, তিনি যেকোনো সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিংবা তাঁর কিডনি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত নাভালনি। অর্থ আত্মসাতের পুরোনো মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে নাভালনিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রাশিয়ার কারা কর্মকর্তাদের কাছে নাভালনির ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ চারজন চিকিৎসক একটি চিঠি লিখেছেন। এ চিঠিতে তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে নাভালনির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েছেন।
চিঠিটি নাভালনির ব্যক্তিগত চিকিৎসক আনাস্তাসিয়া ভ্যাসিলেভা টুইটারে পোস্ট করেছেন। চিঠিতে চিকিৎসকেরা বলেছেন, নাভালনির পটাশিয়ামের মাত্রা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যার অর্থ হলো তাঁর মূত্রাশয়–সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বিকল হয়ে যেতে পারে। যেকোনো সময় তাঁর হৃদ্যন্ত্রে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নাভালনির রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন তাঁর আইনজীবীরা পেয়েছেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই তাঁর চিকিৎসকেরা রুশ কারা কর্মকর্তাদের চিঠি লিখেছেন।
বিজ্ঞাপন
রক্ত পরীক্ষা ও বিষ প্রয়োগের বিষয়টি আমলে নিয়ে নাভালনিকে অবিলম্বে পরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য তাঁর চিকিৎসকেরা কারা কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
৪৪ বছর বয়সী রাজনীতিক নাভালনি গত বছরের আগস্টে প্রায় মরতে বসেছিলেন। সে সময় তিনি সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে উড়োজাহাজে করে মস্কোয় ফিরছিলেন। যাত্রাপথে উড়োজাহাজেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। তিনি কোমায় চলে গিয়ে। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বরে জার্মানি জানায়, নাভালনিকে রাশিয়ান নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক’ প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরে অন্য দেশের বিশেষজ্ঞরাও একই কথা বলেন।
বিষ প্রয়োগের জন্য সরাসরি পুতিনকে দায়ী করেন নাভালনি। তবে পুতিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানে ক্রেমলিন কর্ণপাত করেনি।
ক্রেমলিনের হুমকি উপেক্ষা করে গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া জানিয়েছেন, কারাগারে তাঁর স্বামীর ওজন নয় কেজি কমে গেছে। এখন তাঁর ওজন ৭৬ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের পর তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকদের অন্যতম আলেক্সান্ডার পোলুপান। তিনি নাভালনির রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন অনলাইনে পোস্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, পরীক্ষার এই ফলাফল নিশ্চিতভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নাভালনির জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা দরকার। তা না হলে তিনি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মারা যেতে পারেন।
এদিকে ৭০ জনের বেশি লেখক, শিল্পী ও শিক্ষক নাভালনি ইস্যুতে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিতে তাঁরা নাভালনির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। চিঠিটি দ্য ইকোনমিস্টসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল শনিবার বলেছেন, নাভালনিকে যে ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে, তা পুরোপুরি অন্যায্য ও অনুপযুক্ত।