যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কিম পটারকে (৪৮) অভিযুক্ত করা হয়েছে। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের ব্রুকলিন সেন্টার শহরে ওই যুবক হত্যার ঘটনা ঘটে। কিম পটারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মাত্রার বা ‘সেকেন্ড ডিগ্রি’ খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এই মৃত্যুর জেরে ব্রুকলিন সেন্টারে বিক্ষোভ চলছে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিম পটারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে আদালত তাঁকে জামিন দেন। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার জুমের মাধ্যমে তিনি প্রথম এই মামলায় আদালতে হাজিরা দেবেন।
১১ এপ্রিল বিকেলে ব্রুকলিন সেন্টার শহরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক দান্তে রাইট। ঘটনার পর ব্রুকলিন সেন্টার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাফিক আইন অমান্য করেছিলেন দান্তে রাইট। তাঁকে পুলিশ থামাতে গেলে বিপত্তি বাধে। তাঁর সঙ্গে পুলিশের তর্ক হয়। একপর্যায়ে দান্তে রাইট ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে গাড়িতে ঢুকে পড়েন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর কোমরে থাকা ট্যাজারের পরিবর্তে ভুলক্রমে হ্যান্ডগান ব্যবহার করে ফেলেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন দান্তে রাইট।
দান্তে রাইট নিহত হওয়ার দুদিনের মাথায় ব্রুকলিন সেন্টার পুলিশের প্রধান টিম গ্যানোন ও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা কিম পটার পদত্যাগ করেন।
দান্তে রাইটের মৃত্যুকে নিছক ‘দুর্ঘটনা’ বলেছিলেন টিম গ্যানোন। গত সোমবার তিনি বলেছিলেন, কিম পটার ভুলবশত ট্যাজারের বদলে হ্যান্ডগান ব্যবহার করেছেন। একই কথা বলেন কিম পটার।
তবে ঘটনার দ্রুত তদন্ত শেষে বলা হয়, দান্তে রাইটের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়। কিম পটার ট্যাজারের পরিবর্তে ভুলক্রমে যে হ্যান্ডগান ব্যবহার করে ফেলেছেন, সে বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা তদন্তকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
তদন্তকারীদের বরাতে মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কিম পটারের কোমরে থাকা বেল্টের বাঁ দিকে ছিল ট্যাজার। আর ডান দিকে ছিল হ্যান্ডগান। ট্যাজার হাতে নেওয়ার জন্য তাঁর বাঁ হাত বাড়ানোর কথা। কিন্তু চাকরিজীবনে ২৬ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন পুলিশ কর্মকর্তা ট্যাজারের পরিবর্তে হ্যান্ডগান ব্যবহারের মতো ভুল করতে পারেন না। কিম পটার ডান হাত দিয়ে তাঁর কোমর থেকে হ্যান্ডগান নিয়েছেন। তারপর দান্তে রাইটকে গুলি করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তার শরীরে যুক্ত থাকা ভিডিও ক্যামেরা ও অন্যান্য আলামত পরীক্ষা করে তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অভিযোগ দায়েরের পর ওয়াশিংটন কাউন্টির অপরাধ বিভাগের কর্মকর্তা ইমরান আলী বলেন, কোনো কোনো পেশায় শপথ গ্রহণ ছাড়াও অধিকতর দায়িত্ব ও সতর্কতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা কিম পটার এ দায়িত্ববোধ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে, একটি প্রাণ ঝরে গেছে। তাঁকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী, ‘সেকেন্ড ডিগ্রি’ খুনের অপরাধ পরিকল্পিত খুনের অপরাধের চেয়ে নিম্নমাত্রার।
এদিকে, কিম পটারকে গ্রেপ্তার ও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও ব্রুকলিন সেন্টার শহরে বিক্ষোভ থামেনি। টানা চতুর্থ দিনের মতো ব্রুকলিন সেন্টার শহরে বিক্ষোভ হয়।
শহর কর্তৃপক্ষ বারবার বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। সন্ধ্যার পর শহরে কারফিউ বলবৎ রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ৭০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ব্রুকলিন সেন্টারের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহর-নগরে বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। নাগরিক আন্দোলন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারসহ অন্যান্য উদারনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।