মিয়ানমারে রক্তগঙ্গা আসন্ন। এই রক্তগঙ্গা এড়াতে নিরাপত্তা পরিষদকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শানার বার্গেনার।
গতকাল বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ কথা বলেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ক্রিস্টিন বলেন, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন–পীড়ন তীব্র হওয়ায় মিয়ানমারে একটি রক্তগঙ্গা আসন্ন হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ক্রিস্টিন বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী সেনাবাহিনী দেশ পরিচালনায় সক্ষম নয়। দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কেবল খারাপের দিকেই যাবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
মিয়ানমারের ব্যাপারে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে গ্রহণযোগ্য সব উপায় বিবেচনা করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন ক্রিস্টিন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ক্রিস্টিন বলেন, ‘যা ঠিক, মিয়ানমারের জনগণ যা পাওয়ার যোগ্য, তা করুন। এশিয়ার কেন্দ্রে বহুমাত্রিক বিপর্যয় রোধ করুন।’
ক্রিস্টিন আরও বলেন, আসন্ন রক্তগঙ্গা এড়াতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই সম্ভাব্য তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
মিয়ানমারে সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকটি আহ্বান করে যুক্তরাজ্য।
নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকের পর ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিং করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড। তিনি বলেন, মিয়ানমারে দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংসতা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি কঠোর বার্তা দেওয়া দরকার।
আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের যে দায়িত্ব, সেটি তার পালন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত।
মিয়ানমার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ অন্তত দুটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা জানানো হয়েছে। কিন্তু চীন, রাশিয়া, ভারত ও ভিয়েতনামের বিরোধিতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে কোনো নিন্দা জানানো যায়নি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও কোনো হুমকি দেওয়া সম্ভব হয়নি।
আর নিরাপত্তা পরিষদের এবারের বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রত্যাবর্তন তারা চায়। কিন্তু সে জন্য বাধ্য করতে দেশটির বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ দেওয়া ঠিক হবে না।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রায় দুই মাসের বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৫৩৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৪১ জনই নিহত হয়েছেন গত শনিবার। স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এ তথ্য জানিয়েছে।
মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নির্বাচিত সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করে সু চিসহ তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনী মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের মুখেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা টানা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীরা বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও আটক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মিয়ানমারের জান্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নানাভাবে চাপ বাড়িয়ে চলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।