সব
facebook apsnews24.com
বুক রিভিউঃ ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ মূল: রবার্ট পেইন, ভাবানুবাদ: ওবায়দুল কাদের - APSNews24.Com

বুক রিভিউঃ ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ মূল: রবার্ট পেইন, ভাবানুবাদ: ওবায়দুল কাদের

বুক রিভিউঃ ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’  মূল: রবার্ট পেইন,  ভাবানুবাদ: ওবায়দুল কাদের

এপিএস বই পাঠ-পর্যালোচনা

রিভিউয়ারঃ এ. এইচ. এম. আওরঙ্গজেব জুয়েল

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু
মূল: রবার্ট পেইন
ভাবানুবাদ: ওবায়দুল কাদের

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু: বিখ্যাত-কুখ্যাত চরিত্র

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত একটি অসাধারণ উপন্যাস ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’। ব্রিটিশ লেখক রবার্ট পেইনের ‘Tortured and the Damned’ গ্রন্থটির ভাবানুবাদ হচ্ছে এই উপন্যাসটি। আর এর ভাবানুবাদ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসে ইতিহাস প্রচুর গুরুত্ব পায় বলে সেখানে চরিত্রগুলো তেমন উজ্জ্বলভাবে প্রকাশের সুযোগ পায় না। কিন্তু এই উপন্যাসটি তার ব্যতিক্রম। ইতিহাসের ছোট-বড় সব চরিত্র ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ উপন্যাসে আপন ব্যক্তিত্ব নিয়ে ফুটে উঠেছে। ঔপন্যাসিকের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ত্ব বলতে গেলে চরিত্রায়ন কৌশলে।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে কেন্দ্র করেই পার্শ্ব চরিত্রগুলো বিকশিত হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রতি সজাগ দৃষ্টি অন্যান্য চরিত্র থেকে তাঁকে পৃথক করেছে। ২৫শে মার্চের দিনই তিনি টের পান পশ্চিম পাকিস্তানিরা কোনো একটা ষড়যন্ত্রের জাল চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে; হয়তো এই রাতেই নেমে আসবে বাঙালিদের ওপর সেই কালরাত্রি। সারাদিন তাঁর সহকর্মীরা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, আপনি তাদের হাতে ধরা দিবেন না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘‘কোথায় পালাবো আমি। আমি পালালে যে ওরা সমস্ত ঢাকা শহর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেবে। আমার সব মানুষকে মেরে ফেলবে।’’

বঙ্গবন্ধু হানাদারদের হাতে ধরা পড়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা করে যান। প্রথমে তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে রাখা হয়। ৬-৭ দিন পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানে মিয়ানওয়ালি কারাগারে নিয়ে গিয়ে এক নরকতুল্য পরিবেশে রাখা হয়। সেই কারাগারের যে বর্ণনা রয়েছে তাতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি কত নিষ্ঠুর আচরণ তারা করেছে। অত্যন্ত জঘন্য পরিবেশে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল। ঔপন্যাসিক বলছেন, ‘‘মিয়ানওয়ালি কারাগারে মুজিব নিক্ষিপ্ত হন এপ্রিলের একেবারে শুরুতেই। গ্রেপতারের ৭/৮ দিন পরেই। এখানে রাজবন্দির ভাগ্যে জোটে ক্ষুদ্র একটা কনডেমড সেল। একটা হালকা নড়বড়ে খাটিয়া, পুরনো একটা পানির জগ, ময়লা একটা পাতলা কম্বল-এই-ই হচ্ছে শেখ মুজিবের জন্যে বরাদ্দ আসবাবপত্র। পুরনো এক জোড়া স্যান্ডেল ছিল-যা আগের যে কোনো বন্দির ব্যবহারে ছেঁড়া জীর্ণ অবস্থায় এসে গেছে।’’

এই মিয়ানওয়ালি কারাগারেই বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ নয় মাস অতিবাহিত করেন। এখানকার সব লোক যে খারাপ ছিল তা কিন্তু নয়; দু একজন মানুষের ব্যবহার ছিল চমৎকার। একজন প্রহরী ছিলেন যিনি গোপনে বঙ্গবন্ধুকে চা বা অন্যান্য কিছু দিতে পারলে খুশি হতেন। প্রহরীর বক্তব্য ছিল এরকম, ‘‘আপনি নিজেকে কখনো অসহায় ভাববেন না যেন। সব মানুষ সমান নয়। অনেক খারাপ মানুষের মধ্যে অনেক ভালো মানুষও এখানে আছে।”

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির ওর্ডার হয়ে গিয়েছিল এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইয়াহিয়া। বঙ্গবন্ধু জানতেন যেকোনো দিন ইয়াহিয়া খান তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলাবেন। বঙ্গবন্ধু এ ব্যাপারে মোটেই চিন্তা করতেন না। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়ে গিয়েছে তখন জেলের মধ্যেই একটি করব খোঁড়া হচ্ছিল। চক্রান্ত ছিল রাতের অন্ধকারে বঙ্গবন্ধুকে কবর দেওয়া হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে যান প্রিজন গভর্নর হাবিব আলী খানের সহায়তায়। তারপর সেখানে থেকে প্রথমে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয় হাবিব খানের বাংলোয় এবং এর পর শাহুল্লায় একটা বাংলোতে। ভুট্টোর আদেশে মূলত বঙ্গবন্ধুকে শাহুল্লায় আনা হয়। এখানেই ভুট্টো তাঁর শেষ অস্ত্রের প্রয়োগ ঘটাতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে চাপের মুখে ফেলে একটা যুক্ত বিবৃতিতে তিনি সই করে নিতে চেয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘‘আপনি আমাকে শুধু শুধু বিব্রত করছেন। চেষ্টা করছেন যাতে আপনার ইচ্ছের প্রতি আমি অনুগত হই। আমার সরকার কিংবা জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তো আমি যেতে পারবো না। তাদের মতামত না নিয়ে আমি কীভাবে আপনার তৈরি বিবৃতিতে সই করি? মি. ভুট্টো, আপনাকে আমি পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই প্রয়োজনে আপনারা আমাকে গুলি করতে পারেন কিন্তু ঢাকায় যাওয়ার আগে আমি কিছুই বলতে পারছি না।’’

৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে মুক্ত হন। তারপর তিনি ইংল্যান্ড হয়ে ভারতে গিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন ঢাকা বিমানবন্দরে মানুষের ঢল নেমেছিল। তাঁদের প্রিয় নেতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ায় বাঙালিদের মনে যেন স্বাধীনতার নতুন অর্থ জন্ম নিয়েছিল। আশঙ্কা ছিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব নিয়ে। তারপর রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু প্রায় দশলক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে ৩০মিনিট বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘‘ভুট্টো সাহেব, আপনারা শান্তিতে থাকুন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মুজিব সর্বপ্রথম তার প্রাণ দেবে।’’

জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ উপন্যাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাঙালি নিধনের জন্য খুবই সক্রিয় একটি চরিত্র। উপন্যাসে যদিও তাঁর সক্রিয়তা খুব একটা চোখে পড়ে না; কিন্তু তাঁর একগুঁয়ে মনোভাব ও অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রতি লোভ তাঁকে বিবেকশূন্য মানুষে পরিণত করে। তিনিই মূলত লারকানায় ইয়াহিয়ার সাথে চক্রান্তে মিলিত হন এবং এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইন্ধন যোগান। চরিত্র হিসেবে সে খুব শঠ এবং ধুরন্ধর। বারবার তিনি তাঁর কৃতকর্মকে অস্বীকার করতে চেয়েছেন কিন্তু ইতিহাস তো আর মুগ্ধ বচনে পরিবর্তিত হয়না; সেটা মানুষের কৃতকর্মের আলোকেই নির্ণীত হয়। এটা ঠিক যে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে যদি পাকিস্তানে হত্যা করা হয় তাহলে তিনি কোনদিনও ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করতে পারবেন না। তাই নিজের গরজেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার পেছনে আর একটি উদ্দেশ্য ছিল যাতে তিনি বঙ্গবন্ধুকে হাত করে যুক্ত পাকিস্তান রাখতে পারেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ছল-চাতুরি এবং অভিনয়কে আমলে নেননি। ফলে ভুট্টো তাঁর কার্যসিদ্ধিতে সক্ষম হননি। ভুট্টো যে কতটা ধুরন্ধর ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যাবে নিম্নের উক্তিতে ‘‘শেখ সাহেব, এই দেশ ও জাতিকে আমরা দ্বিধাবিভক্ত হতে দিতে পারি না। আমি জানি আগে যেভাবে ছিলাম সেভাবে হয়তো আর থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের যে অভিন্ন ধর্মের একটা বন্ধন রয়েছে, আছে মহতী একটা উদ্দেশ্য। আপনি কি ভেবে দেখেছেন এতকিছু হওয়ার পরও আমরা এখনো এ সত্যের মুখোমুখি যে, আমাদের জনগণ জাতি হিসেবে এক ও অভিন্ন।’’ ভট্টোর এই বক্তব্যই প্রমাণ করে তিনি কতটা ধূর্ত এবং শঠ একটি চরিত্র। যা তিনি বলছেন এবং যা তিনি করছেন তার মধ্যে কতই না বৈপরীত্য রয়েছে।

যার হঠকারিতায় বাংলার জনজীবনে শোকের মাতম উঠেছিল তিনি অার কেউ নন, তিনিই জাড্য ইয়াহিয়া খান। ইতিহাসের অন্যতম খল নায়ক হিসেবে তিনি আমাদের কাছে সমধিক পরিচিত। তিনি এবং তাঁর বাহিনি যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় তাতে করে ইতিহাসে তার অবস্থান ঘৃণ্য এবং রক্তপিপাসু একজন সেনানয়ক হিসেবেই চিরঅম্লান থাকবে। তিনি সেনানায়ক হলেও সেনানায়কোচিত বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মোটেই যোগ্য ছিলেন না। ইয়াহিয়া খান সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘সৈনিক হিসেবে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের জীবনে তেমন উল্লেখ যোগ্য কৃতিত্ব নেই। স্বাভাবিকভাবে তাঁর বড় জোর বর্ডার পুলিশ ফোর্সের একজন সার্জেন্টের বেশি কিছু হওয়ার কথা ছিল না। দেখতে শুনতেও ইয়াহিয়াকে তেমন মানায় না। গাট্টাগোট্টা, বেঁটেখাটো চেহারা।’’

পূর্ব পাকিস্তানে পঁচিশে মার্চ ভয়াল রাত্রি যার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয় তিনি হলেন টিক্কা খান। টিক্কা খান সৈনিক জীবনে কোনো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় রাখতে পেরেছেন এমন সংবাদ পাওয়া যায় না। বরং তিনি ছিলেন দুর্নীতিবাজ একজন প্রশাসক। টিক্কা খান সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, ‘‘সফল বেলুচিস্তান অপারেশনের জন্য টিক্কাখান ‘দি বুচার অব বেলুচিস্তান (বেলচিস্তানের কসাই) নামে কুখ্যাত। সহকর্মী অফিসাররা টিক্কাকে প্রশংসা সূচক ‘বুচার’ নামেই ডাকেন। বাঙালিদের কাছেও তিনি কসাই নামে কুখ্যাত, নিষ্ঠুরতার আরেক নাম। যৌবনে বদমেজাজের জন্যে বন্ধুবান্ধবরা তাকে ‘রেড ব্রিক’ নামে ডাকতো।’’

টিক্কাখান যখন পূর্ব পাকিস্তানের গেরিলাদের দমনে ব্যর্থ হয়েছেন; পদে পদে মার খেয়ে নাজেহাল অবস্থায় পড়েছেন তখন ইয়াহিয়া সামরিক প্রশাসক হিসেবে জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠান। তাঁর চরিত্রের বিশেষ যে দিকের পরিচয় আমরা পাই, তাতে দেখতে পাই তিনি সবসময় পানীয় পানে ব্যস্ত থাকতেন এবং ছিলেন অত্যন্ত ভীতু প্রকৃতির লোক। যুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে তাঁর নির্দেশে অধিক গণহত্যা ও লুটতরাজ করা হয়। জেনালেন নিয়াজী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘টাইগার নিয়াজী’ নামেই জেনারেল এ. কে. নিয়াজী সৈনিকদের কাছে পরিচিত। ওই নামে ডাকলে নিয়াজী মনে মনে ভীষণ গর্ববোধও করেন। টিক্কা খানের চাইতেও জেদি, মেজাজি, লোক। সাধারণ কথা উচ্চারণেও কণ্ঠ রীতিমতো গর্জন করে। নোংরা কথা মুখে লেগেই থাকে। সৈনিক জীবনে যোগ্যতার তেমন খ্যাতি নেই। জীবনে শুধু একবারই মেধার পরিচয় রেখেছেন নিয়াজী। আর সেটা হচ্ছে বেলুচিস্তানের নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের ওপর নাপাম বোমা বর্ষণের লোমহর্ষক ঘটনা।’’

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিলেন বেসামরিক প্রশাসনের কাজে নিয়োজিত একজন প্রশাসক। রাও ফরমান আলী অন্যান্য পাকিস্তানি জেনারেলদের মতো মাথামোটা লোক ছিলেন না। তিনি ছিলেন চিকন বুদ্ধির অধিকারী। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে বিরাট এক গর্ত খুঁড়ে যার নাম দেওয়া হয়েছিল ৯ নং গর্ত এখানে রাও ফরমান আলীর নির্দেশে অসংখ্য লাশ পুঁতে ফেলা হয়। ফরমান আলী নিজেই বাঙালিদের একটা লিস্ট করতেন এবং তাঁর নির্দেশ অনুসারে বাঙালিদের হত্যা করা হতো। রাও ফরমান আলী সবচেয়ে জঘন্য যে কাজের জন্য ইতিহাসের পাতায় কুখ্যাত হয়ে থাকবেন তা হলো বুদ্ধিজীবী হত্যা। তাঁর আঁকা ছক অনুসারে ১৪ই ডিসেম্বরে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। উপন্যাসে তাঁর এই চক্রান্ত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘বেশ কিছু বুদ্ধিজীবীর নাম জেনারেলের গোপনীয় ফাইলে জমা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে বাঙালি বুদ্ধিজীবী নেতৃত্বকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া ছাড়া জেনারেল রাও ফরমান আলীর যেন সোয়াস্তি নেই।’’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানে একজন বেসামরিক গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও সেটা শুধু কাগজে কলমে। প্রকৃত ক্ষমতা ছিল রাও ফরমান আলীর হাতে। তাঁর নাম ছিল ডাক্তার আবদুল মোতালিব মল্লিক। মল্লিক ছিলেন ব্যক্তিত্বহীন এবং ভীরু মেরুদণ্ডহীন মানুষ। ইয়াহিয়ার পদলেহনের উপযুক্ত পুরস্কার তাঁকে দেওয়া হয়। ডাক্তার মল্লিক দেশ স্বাধীর হওয়ার আগেই জীবনের মায়ায় পদত্যাগ করেন গভর্নরের পদ থেকে।

কর্নেল মোস্তফা হামিদ ছিলেন একজন দক্ষ এবং সুকৌশলী পরামর্শক। যুদ্ধের ময়দানে তাঁর পরামর্শ মেনে চলা হতো। তাঁর সম্পর্কে ঔপন্যাসিক বলছেন, ‘‘কর্নেলের ডান হাতটা আবার অবশ। সীমান্ত প্রদেশে কঠিন এক অপারেশনে অনেকগুলো বুলেট এসে হাতটা ঝাঁজরা করে দিয়েছিল। পাকিস্তান আর্মিতে এরপরও তিনি আছেন শুধু যুদ্ধ কৌশলে অভিজ্ঞতা, দক্ষতার জন্য। রণক্ষেত্রে মেধার মূল্য অনেক বেশি। নিয়াজী তাকে এখানে অপারেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ করেছেন।’’

ক্যাপ্টেন ইস্কান্দার খান ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের হত্যার দায়িত্বে ছিলেন। তার সরাসরি উপস্থিতি ও নির্দেশে চলে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের অতর্কিত আক্রমণ করে জাতীর মেধা শূন্য করার নীল নকশা তিনি বাস্তবায়ন করেন। কিন্তু এই মানুষটিই যুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে বুঝতে পারেন তিনি যা করেছেন তা ভুল ছিল এবং এজন্য তিনি জেনারেলদের হত্যা করার কথাও ভাবেন। ঔপন্যাসিকের বর্ণনায়, ‘‘পাকিস্তান আর্মির গৌরবদীপ্ত অধ্যায় আজ কালিমালিপ্ত। নিয়াজী ও ইয়াহিয়া খানের বদৌলতে আমরা এখন ‘কসাই’ পরিচয় অর্জন করেছি। এশিয়ায় জার্মানদের চেয়েও নৃশংস অযোগ্য বলে আমরা এর মধ্যে নিজেদের চিহ্নিত করেছি। আমাদের মান-সম্ভ্রম বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। আমরা সত্যি ঘৃণিত-নিন্দিত। নিয়াজী বেটাকে অন্তত একশোবার মেরে ফেলার সুযোগ পেয়েও আমি হাতছাড়া করেছি। আসলে ওই বেটাকে হত্যা করতে পারলেই কিছুটা অন্তত স্বস্তি নিয়ে দেশে ফিরতে পারতাম।’’ কিন্তু তাঁর ভাগ্যে আর দেশে ফেরা হয়নি।

‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ উপন্যাসের অপ্রধান চরিত্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মিয়ানওয়ালি কারাগারের প্রিজন গভর্নর হাবিব আলী। মিয়ানওয়ালি কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আর সেটা হাবিব আলী জানতে পারেন এবং বঙ্গবন্ধুকে রাতের অন্ধকারে কারাগার থেকে নিজের বাংলোয় নিয়ে যান। হাবিব আলীর মূল্যায়ন করতে গিয়ে শেখ মুজিব বলেন, ‘‘হাবিব আলী মানুষ হিসেবে মন্দ নন। মোটামুটি বন্ধুবৎসল। তবে দীর্ঘদিনের আমলাতান্ত্রিক কেতাবকানুনের চাকরি জীবন………মানুষ হাবিব আলী নিছক যন্ত্রেই পরিণত হয়েছেন।’’

ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। তাঁর দীর্ঘ সংগ্রাম একটি অসংগঠিত, স্বাধীকার-অধিকার আদায়ে পরান্মুখ জাতিকে সংগঠিত হতে উদ্ধুদ্ধ করে এবং শেষ পর্যন্ত লাল সবুজের পতাকার অধিকারী করে বাঙালিকে চিরকৃতজ্ঞতার আবেষ্ঠনীতে আবদ্ধ করে।

রিভিউয়ারঃ এ. এইচ. এম. আওরঙ্গজেব জুয়েল

প্রকাশক: চারুলিপি (প্রথম প্রকাশ ১৯৯১, ২৫ তম মুদ্রণ ২০১৯)
মুদ্রিত মূল্য: ২৫০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪
গ্রন্থের প্রকৃতি: উপন্যাস

আপনার মতামত লিখুন :

শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস

শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস

শোকাবহ ও বেদনার আগস্ট মাস

শোকাবহ ও বেদনার আগস্ট মাস

ঝিনাইদহে লকডাউন কার্যকরে মাঠে  সেনা, পুলিশ ও প্রশাসন

ঝিনাইদহে লকডাউন কার্যকরে মাঠে সেনা, পুলিশ ও প্রশাসন

সিলেটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বঙ্গবন্ধু উৎসব’ শুরু

সিলেটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বঙ্গবন্ধু উৎসব’ শুরু

সিলেট জুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী পালিত

সিলেট জুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী পালিত

বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সিলেটে আওয়ামী লীগের ১০ দিনব্যাপী কর্মসুচি

বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সিলেটে আওয়ামী লীগের ১০ দিনব্যাপী কর্মসুচি

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj