সব
facebook apsnews24.com
উইঘুরদের চাকরি দিয়ে বাড়ি থেকে দূরে পাঠাচ্ছে চীন - APSNews24.Com

উইঘুরদের চাকরি দিয়ে বাড়ি থেকে দূরে পাঠাচ্ছে চীন

উইঘুরদের চাকরি দিয়ে বাড়ি থেকে দূরে পাঠাচ্ছে চীন

শিনজিয়াং প্রদেশের আদি আবাসভূমিতে কমে যাচ্ছে উইঘুর এবং নানা জাতিগত সংখ্যালঘুরা। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে কাজের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ। দেশটির উচ্চ পর্যায়ের একটি জরিপের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

তবে পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অনুপাত বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্ন করা হলে চীন সরকার তা অস্বীকার করছে।

তারা বলছে, গ্রামীণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে এসব চাকরি ও বদলির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই নীতিতে জোর খাটানোর উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। গত কয়েক বছরে শিনজিয়াং প্রদেশ জুড়ে যেসব পুনঃশিক্ষণ শিবির গড়ে তোলা হয়েছে – তার পাশাপাশিই এ চাকরির পরিকল্পনা করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের জীবনধারা ও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনার জন্য।

জরিপটি শুধু চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরই দেখার কথা। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত তা অনলাইনে এসে যায়।

২০১৭ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-পরিচালিত টিভি চ্যানেলে একটি ভিডিও রিপোর্ট প্রচারিত হয়, যা এখনো কোন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়নি।

এতে দক্ষিণ শিনজিয়াং-এর একটি গ্রামের কেন্দ্রস্থলে একদল সরকারি কর্মকর্তাকে লাল ব্যানারের সামনে বসে থাকতে দেখা যায়। ব্যানারে ছিল, আনহুই প্রদেশে কিছু চাকরির বিজ্ঞাপন। যা ওই গ্রাম থেকে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরে।

পুরো দুদিন পার হলেও ওই গ্রাম থেকে একজনও চাকরির ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। তখন কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি যেতে শুরু করলেন। এরপর দেখা যায়, কীভাবে উইঘুর কাজাখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ব্যাপকভাবে শ্রমিক হিসেবে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বুজায়নাপ নামের ১৯ বছরের তরুণীকে চাপের মুখে চাকরির জন্য আনহুইতে যেতে বাধ্য করা হয়।

ভিডিও শেষ হয় মায়ের কাছ থেকে মেয়ের অশ্রুভেজা বিদায় নেওয়ার মধ্য দিয়ে। বুজায়নাপ ও অন্যরা তাদের পরিবার এবং সংস্কৃতি পেছনে ফেলে রেখে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে মানবাধিকার ও সমকালীন দাসত্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও শেফিল্ড হাল্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরা মার্ফি বলেন, “ভিডিওটা সত্যি চমকপ্রদ। চীনা সরকার সব সময়ই বলছে যে লোকেরা স্বেচ্ছায় এসব কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। কিন্তু এই ভিডিওতে স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে যে এটা এমন এক পদ্ধতি যেখানে জোর খাটানো হচ্ছে এবং কাউকে এতে বাধা দিতে দেওয়া হচ্ছে না।”

চীনা রিপোর্টটি ২০১৯ সালে ভুলবশত অনলাইনে প্রকাশ করে দেওয়া হয়, তবে কয়েক মাস পরে আবার মুছে দেওয়া হয়।

নানকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষাবিদের তৈরি এ রিপোর্টে গণহারে শ্রমিকদের বদলিকে উইঘুরদের চিন্তায় পরিবর্তন আনা এবং তাদের প্রভাব বিস্তার করে বাকি সমাজের সঙ্গে যুক্ত করাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

উইঘুরদের চীনের অন্যত্র নিয়ে গেলে জনঘনত্ব কমবে বলে উল্লেখ করা হয় সেখানে। রিপোর্টটি বিশ্লেষণ ভিকটিম অব কমিউনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো ড. এ্যাড্রিয়ান জেঞ্জ ‘নজিরবিহীন’ বলে বর্ণনা করেন।

তার বিশ্লেষণে আইনি মতামত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মিউজিয়ামের সাবেক উপদেষ্টা এরিন ফ্যারেল রোজেনবার্গ। তিনি বলছেন, নানকাই রিপোর্টটি জেরপূর্বক উচ্ছেদ ও নিপীড়নের মত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি তৈরি করেছে।

এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এই রিপোর্টটিতে লেখকদের নিজস্ব মত প্রতিফলিত হয়েছে এবং এর সারবস্তুর অনেক কিছুই ‘বাস্তবসম্মত নয়’।

বলা হচ্ছে, নতুন চাকরিপ্রাপ্তরা শুরু থেকেই কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনার অধীনে চলে যায়। পূর্ব চীনের স্থানীয় পুলিশ ট্রেন ভর্তি উইঘুরদের দেখে এতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে যে কখনো কখনো তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

রিপোর্টের অনেক জায়গায় সতর্ক করা হয়— শিনজিয়াং-এর ক্ষেত্রে চীনের নীতি হয়তো বেশি কঠোর হয়ে গেছে। যেমন; পুনঃশিক্ষণ কেন্দ্রে যে পরিমাণ লোক আছে তা উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িত এমন সন্দেহভাজনের চেয়ে অনেক বেশি।

এ দিকে উইঘুর শ্রমিকদের বদলির সঙ্গে দুটি বড় পশ্চিমা ব্র্যান্ডের সংযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বুজায়নাপকে কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে হুয়াফু টেক্সটাইল কোম্পানিতে।

এই কোম্পানিতে গেলে বিবিসিকে জানানো হয়, উইঘুর কর্মীরা বাড়ি ফিরে গেছে।

আমাজনে এ কোম্পানির তৈরি বালিশের কেস পাওয়া যায়। তবে আমাজন বলছে, তারা জোরপূর্বক শ্রমিকদের কাজ করানোর ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর নীতি নেয়।

গুয়াংজু প্রদেশের ডংগুয়ান লুঝু জুতা কারখানায় স্কেচার্স কোম্পানির জন্য পণ্য তৈরি হয়। সেখানকার একজন শ্রমিক জানান, উইঘুর শ্রমিকদের আলাদা হোস্টেলে রাখা হয়।

তবে স্কেচার্স বলেছে, তারা জোরপূর্বক শ্রমিকরা কাজ করানোর ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়ে থাকে। যদিও ডংগুয়ান লুঝুকে সরবরাহকারী হিসেবে ব্যবহার করে কিনা – সে প্রশ্নের জবাব দেয়নি। এমনকি ডংগুয়ান লুঝুও এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি।

অনুসন্ধানের সময় সাংবাদিকরা কিছু কারখানায় উইঘুর শ্রমিকদের ওপর কিছু বিধিনিষেধের তথ্য পেয়েছেন। একটি কারখানার উইঘুর শ্রমিকদের একেবারেই বেরোতে দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আপনার মতামত লিখুন :

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj