সব
facebook apsnews24.com
দেশে দেশে ভাষা আন্দোলন - APSNews24.Com

দেশে দেশে ভাষা আন্দোলন

দেশে দেশে ভাষা আন্দোলন

বাংলাদেশ ছাড়াও ভাষা আন্দোলন হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, কানাডাসহ কয়েকটি দেশে। মাতৃভাষা রক্ষায় ছাত্র থেকে শুরু করে আপামর জনতা সব সময় সোচ্চার। নানা দেশের ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন আরফাতুন নাবিলা

দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের কিছুটা মিল আছে। কারণ দুটিতেই আন্দোলনের মূলে ছিল ছাত্ররা। পার্থক্য শুধু এতটুকুই, বাংলাদেশের আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল স্কুলপর্যায়ের ছাত্ররা। কীভাবে আর কেন এই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল, সেই ইতিহাস জানতে হলে ওল্টাতে হবে ইতিহাসের পাতা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটো অঞ্চল তৎকালীন ট্রান্সভাল প্রদেশের (বর্তমানে গাউটাংয়ের) অন্তর্গত জোহানেসবার্গ শহরের খুব কাছেই অবস্থিত। ১৯৭৬ সালে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের সাম্রাজ্যবাদী সরকার। এ অঞ্চলে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও কোনো ক্ষেত্রেই তারা তেমন গুরুত্ব পেত না। স্কুল-কলেজে তাদের শিক্ষার ভাষা ছিল দুটি। মাতৃভাষা জুলু আর লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ইংরেজি। এই দুটি ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করতেই তাদের আগ্রহ বেশি ছিল। কিন্তু ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের আবার ভাষা ছিল ভিন্ন। জার্মান-ডাচ ভাষার মিশ্রণে এক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় তারা কথা বলত। এই ভাষা পরিচিত ছিল আফ্রিকানস নামে। ক্ষমতাসীন শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এ ভাষায় কথা বলার প্রচলন বাড়তে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া অঞ্চলের শ্বেতাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ ডাচরাও এই ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। স্বাভাবিকভাবেই তাদের পরের প্রজন্মও যেন এসব শিক্ষাগ্রহণ করে ক্ষমতায় আসীন থাকতে পারে, সেজন্য তারা পড়াশোনা করত আফ্রিকানস ও ইংরেজি এই দুই ভাষায়। ক্ষমতা যেন না হারাতে হয়, সেজন্য সন্তানদের আফ্রিকানস ভাষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একই ভাষা শেখানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ভাষা বদলের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ১৯৭৬ সালে সর্বস্তরে অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের লক্ষ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে কাজ এগোতে থাকে। এর মধ্যে ছিল-ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান এবং আফ্রিকানস ভাষাকে বাধ্যতামূলক করা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বদলানোর চেষ্টা করা হয় শিক্ষাপদ্ধতি। গণিত ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয় দুটো আফ্রিকানস ভাষায় এবং সাধারণ বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্যসহ কর্মমুখী বিষয়গুলোকে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়।

এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল কারণ ছিল সরকারের অভ্যন্তরীণ ভীতি। আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে এটিই ছিল তাদের ভীতির কারণ। সরকার ধারণা করছিল, এসব ছাত্র ক্রমেই উদ্ধত হয়ে উঠছে, যার কারণে তাদের আর ইচ্ছামতো শাসন করা যাবে না। তাহলে কেন শ্বেতাঙ্গদের ভাষা ইংরেজি বা আফ্রিকান ইচ্ছা করে কৃষ্ণাঙ্গদের শেখানো হচ্ছিল? মূল কারণ ছিল তাদের ব্যস্ত রাখা। নিজেদের মাতৃভাষার বাইরে গিয়ে যখন তারা নতুন ভাষা শিখবে, তখন তাদের সময় বেশি লাগবে। চাইলেই সবাই ভাষা দ্রুত শিখতে পারবে না। যতটুকু শিখবে তাতে নিজেরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। অর্থাৎ ইউরোপীয়দের সঙ্গে কোনো বিষয়েই তারা চাইলেও এগিয়ে যেতে পারবে না।

সরকারের এমন চিন্তাকে বুঝতে কৃষ্ণাঙ্গদের খুব বেশি সময় লাগেনি। তারা বুঝতে পেরেছিল এসব ভাষায় শিক্ষা কখনোই তাদের জন্য উপকারী হবে না। কারণ অতীতেও এমন হয়েছে, যখন সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী কোনো দেশে তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য দিয়ে স্থায়ী আসন গড়তে চেয়েছে সবার আগে আঘাত এনেছে সে দেশের ভাষার ওপর। আফ্রিকার জন্যও পরিকল্পনা ছিল এমন।

জনগণের ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করতে সরকার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরে। জানানো হয়, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিশুদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে, তাই তারা চাইলেই শিক্ষামাধ্যমে বদল আনতে পারে। তবে এ বিষয়টিও সম্পূর্ণ সত্য ছিল না। কারণ শ্বেতাঙ্গ শিশুদের যেখানে বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের পড়ার জন্য অভিভাবকদের বছরে প্রায় অর্ধেক বেতন পরিশোধ করতে হতো। এ ছাড়া বই-খাতা, কলম-পেনসিল কেনার জন্যও অর্থ ব্যয় করতে হতো। অনুদান দিতে হতো স্কুলের ভবন নির্মাণ খরচেও। এত খরচের পর সরকার চাইলেই শিক্ষাম্যধ্যম বদলাতে পারে এ কথা বলার সুযোগ আসলে খুব বেশি ছিল না। বলাবাহুল্য, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি তৎকালীন ছাত্রসমাজ। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, কৃষ্ণাঙ্গ অভিভাবকরা, পেশাজীবী নানা সংগঠন, স্কুল কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে মত দেয়। তবে ছাত্রদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধতায় একাত্মতা প্রকাশ করেন স্কুলের কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা।

ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ আর ক্ষোভ জমা হতে হতে বিশাল আকার ধারণ করে। ফুঁসে ওঠা ছিল মাত্র সময়ের ব্যাপার। এই অসন্তোষ ধরা দেয় ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন। ১৩ জুন কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের একটি সংগঠন ‘চেতনার জাগরণ’ এক সভার আয়োজন করে। সেখানে ১৯ বছর বয়সী ছাত্র সেইতসি মাসিনিনি সব ছাত্রের ১৬ জুন ভাষা প্রবর্তনের প্রতিবাদের গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কথা জানায়। তবে সবার কাছ থেকে কথা নেওয়া হয় যে, এ বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের কেউ কিছু জানাবে না। এতে তারা সরকারকে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিতে পারে। আর এমনটি হলে তাদের কোনো পরিকল্পনাই সফল হবে না।

১৬ জুন সকালে ছাত্ররা একে একে স্কুলের সামনে জড়ো হয়। আন্দোলনের জন্য বানিয়ে নিয়ে আসা নানা কথায় লেখা প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ছিল সবার ব্যাগে। পরিকল্পনা হলো, ভিলাকিজি স্ট্রিটে অবস্থিত অরল্যান্ডো ওয়েস্ট সেকেন্ডারি স্কুল থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে অরল্যান্ডো স্টেডিয়ামে পৌঁছাবে। মিছিলে কমপক্ষে উপস্থিত ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী। সবাই ছিল নিজেদের দাবির প্রতি সোচ্চার। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের কানে খুব দ্রুত পৌঁছে যায় এই খবর। শুরুতে পুলিশ বাহিনী পাঠিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করা হয়। কোনোভাবেই দাবি পূরণ না করে স্থান ত্যাগ করতে চায়নি তারা। কিন্তু সরকারও ছিল তাদের চেষ্টায় অনড়। কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয় মিছিলে। অনেক ছাত্র আহত হয়। কোনোভাবেই ছাত্রদের পিছু হটানো যায় না। টিয়ার গ্যাসের জ্বালা সহ্য করেও তারা এগিয়ে যায়। ছাত্ররা ভয় না পেয়ে হাতে থাকা বোতল, রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করতে থাকে। ছাত্রদের এমন অবস্থা দেখে পুলিশও তাদের সামলাতে হিমশিম খেয়ে যায়। শুরু হয় তাদের ওপর গুলিবর্ষণ। নিহত হয় ২০ শিশু, আহত হয় ২০০-এরও বেশি। সেদিনের সেই দৃশ্য এতটা মর্মান্তিক ছিল যে বিশ্ববাসী সেই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। হয়তো সেদিনের ছবিগুলো সামনে আসত না যদি না সে মিছিলে ফটোগ্রাফার স্যাম নাজিমা উপস্থিত থাকতেন। গুলিতে নিহত ও আহত শিশুদের আর্তনাদ যেন ছবিতে কথা বলছিল।

দাবানলের মতো সোয়েটো থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পাশের শহর প্রিটোরিয়া, ডারবান ও কেপটাউনে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করা এশীয় বংশোদ্ভূত ছাত্ররাও এই আন্দোলনে যোগ দেয়। ১৯৭৬ সালের এই আন্দোলনে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৪৫১ জন মারা যায় এবং ৩,৯০৭ জন মানুষ আহত হয়। একই সঙ্গে বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাম লেখায় সোয়েটো। ধীরে ধীরে এই আন্দোলন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

আন্দোলন নতুন রূপ পায় যখন এতে যুক্ত হয় আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেস। বিদ্রোহ আরও গুরুতর পরিস্থিতিতে রূপ নিতে পারে এই ভেবে সরকার নিজ সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুত সরে আসে। জয় হয় ছাত্রদের। শিক্ষামাধ্যমের ভাষা বদলানো নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও এর রেশ শেষ করে দেয় শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যকে। ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের অবসান হয়। ছাত্রদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৬ জুনকে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ভারত

ভারতের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেশটির স্বাধীনতারও আগের। ১৯৩৭ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে রাজনীতিবিদ রাজাগোপালচারীর অধীনে কংগ্রেস সরকার গঠন করে। সে সময় স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য সমগ্র ভারতবাসীর মধ্যে একই ভাষা প্রচলন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে পুরো ভারতে হিন্দি ভাষার প্রচলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজাগোপালচারী সর্বপ্রথম তামিল স্কুলগুলোয় বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে হিন্দি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তামিলরা। কারণ দক্ষিণ ভারতে হিন্দির অনুপ্রবেশ মানে দীর্ঘ মেয়াদে উত্তর ভারতের আধিপত্যের কাছে মাথা নত করা। ১৯৩৮ সালের ৩ জানুয়ারি রাজাগোপালচারীর বাসভবনের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হয়ে এ পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানায়। আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ১২৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মাধ্যমে শুরু হয় কয়েক দশকব্যাপী চলতে থাকা তামিলদের হিন্দি আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের। এতেও থেমে থাকেনি সরকার। বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে পাঠ্যক্রমে একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তামিলদের আন্দোলন আরও বেগবান হয়।

১৯৩৯ সালে দুই আন্দোলনকারী পুলিশি হেফাজতে মারা গেলে আন্দোলন চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। অবশেষে তুমুল আন্দোলনের মুখে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি সরকার হিন্দিকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে পড়ানোর সিদ্ধান্ত বাদ দেয়। অবশ্য কংগ্রেস সরকার শুধু সাময়িকভাবে পিছু হটেছিল। একবারে ক্ষান্ত হয়নি। এরপর ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে দক্ষিণ ভারতের স্কুলে আবার হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করা হলেও দুবারই তীব্র আন্দোলনের মুখে সিদ্ধান্ত বদল করে।

ভারতের স্বাধীনতার পর হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা বানানোর সিদ্ধান্ত ১৯৫০ সালে আইন হিসেবে গৃহীত হয়। সেখানে বলা হয়, ১৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে হিন্দি সরকারি ভাষা হিসেবে কার্যকর হবে। মজার ব্যাপার হলো আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি। কিন্তু ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি এর বিরুদ্ধে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসকে তামিলরা শোক দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্রভাবে আন্দোলন শুরু করে, মানুষ দলে দলে রাস্তায় নেমে আসে। একের পর এক এমন ঘটনার জের ধরে বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে, উত্তেজিত জনতা পোস্ট অফিস, রেলস্টেশন, টেলিগ্রাফ অফিস ভাঙচুর শুরু করে। একসময় পুলিশের ওপরও আক্রমণ শুরু হয়। এমনকি একদল জনতা দুজন পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন চরম অবনতি ঘটলে সরকার তামিলনাড়–তে আধাসামরিক বাহিনী নামিয়ে দেয়। প্রায় দুই মাস দাঙ্গা হয় তামিলনাড়– তথা মাদ্রাজে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর হিসেবে এ দাঙ্গায় নিহত হয় ৬৩ জন তামিল নাগরিক। তবে অনেকের মতে, মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। আন্দোলনের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো বিজয়ী হয় তাদের ১৯৬৭ বিধানসভা নির্বাচনে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজিকেও ব্যবহারিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভারতে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরিদের ভাষা আন্দোলনও রক্তক্ষয়ী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে।

আমেরিকা

ইউরোপীয়দের আগমনের আগে আমেরিকায় প্রায় এক হাজার ভাষার প্রচলন ছিল। বহু বছর এসব নেটিভ আমেরিকান ভাষা ইউরোপীয় কলোনিয়াল শাসকদের জাঁতাকলে পিষ্ট ছিল। আবার অনেক ভাষার মৃত্যুও হয়েছে। এখন হয়তো উত্তর আমেরিকায় টিকে আছে মাত্র ২৯৬টি ভাষা। গত শতাব্দীর ষাট-সত্তরের দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় এই নেটিভ আমেরিকান ভাষা রক্ষার ব্যাপারটিও আসে। মূল প্রস্তাবনার দীর্ঘ ২০ বছর আন্দোলন এবং আলোচনার পর ৩০ অক্টোবর, ১৯৯০ সালে আমেরিকার বিভিন্ন নেটিভ, আদি ও স্থানীয় ভাষা রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য একটি আইন পাস হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, ইংরেজি ভাষা সরকারি কিংবা রাষ্ট্রভাষা কোনোটিই নয়। দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোয় স্প্যানিশ ভাষার প্রভাব দিন দিন বেড়ে চলছে। তাই এখন আবার নতুন করে ইংরেজিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

অন্যান্য দেশ

কানাডায়, বিশেষত কানাডার পূর্ব অংশের অঙ্গরাজ্য কুইবেকের রাজনীতিতে ভাষা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কুইবেক রাজ্যের ফ্রেঞ্চবাসী স্বতন্ত্র রাষ্ট্র চাওয়ার দরুন ভাষার প্রশ্নে স্বাধীনতা চেয়েছিল। ফলে ১৯৮০ সালের ২০ মে প্রথমবার এবং ১৯৯৫ সালের ৩০ অক্টোবর ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়। অবশ্য সে আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমেই ক্ষয়ে গেছে। তবে তারা আজও বিশ্বাস করে তাদের ‘স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ থেমে যায়নি।

বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ-জার্মান-ডাচ ছাড়া ইউরোপের বলকান অঞ্চল, স্পেনের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, আফ্রিকার গোল্ড কোস্ট অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য আরবি-ফারসি-তুর্কি কিংবা তৎকালীন মেক্সিকোর উত্তরাংশে আন্দোলন হয়েছে স্প্যানিশ-ইংরেজি নিয়ে। এ ছাড়া আছে সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে চীনে ম্যান্ডারিন-মাঞ্চুরিয়ান বিরোধও।

আপনার মতামত লিখুন :

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj