সব
facebook apsnews24.com
কোর অফিসার এবং একটি প্রশ্ন: প্রসঙ্গ কুষ্টিয়ার এসপি - APSNews24.Com

কোর অফিসার এবং একটি প্রশ্ন: প্রসঙ্গ কুষ্টিয়ার এসপি

কোর অফিসার এবং একটি প্রশ্ন: প্রসঙ্গ কুষ্টিয়ার এসপি

শ্যাম সুন্দর রায়

সম্প্রতি নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে কুষ্টিয়ায় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে। বিষয়টি যেহেতু মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে এবং বিচারাধীন আছে তাই শেষ অবধি সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা রাখতে হবে। বিচার বিভাগের এতদিনে যা অর্জন তার বেশিরভাগই কিন্তু আদায় করে নিতে হয়েছে। বিচার বিভাগের কোন কিছুই কেন যেন স্বাভাবিকভাবে হয় না।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার ঘটনার শুরুর দিকে খুলনার এডিশনাল ডিআইজি এসপির বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্তে যান। এসব ঘটনা তখনো মিডিয়ায় প্রকাশ হয়নি এবং মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নোটিশে আসেনি। বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথে এসপি সাহেবের কোন এক ফোরামে দেখা হলে সিজেএম এসপি সাহেবকে সামনাসামনি আলোচনার জন্য তার অফিসে চায়ের দাওয়াতে যেতে বলেছিলেন। এসপি সাহেব সেখানে গেলে হয়তো শুরুতে বিষয়টা মিটে যেত। সেদিন এসপি সাহেব নিজেকে কোর অফিসার দাবি করে সিজেএম এর অফিসে বসতে রাজি হননি।

সিজেএম এর মুখের উপর বলেছেন যে, ডিসি কোর অফিসার, তার কাছে বসতে পারেন। জেলার ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ফাংশনের ৯৯% যার নেতৃত্বে চলে, সেই বিজ্ঞ সিজেএমকে এসপি সাহেব কোর অফিসার মানেন না। তার কাছে ডিসি হচ্ছেন কোর অফিসার। আর বিজ্ঞ সিজেএম তার গণনার মধ্যেই নাই। ভাবতে অবাক লাগে এত কম জানা লোকটা সিভিল সার্ভিসে এসেছেন কিভাবে! নাকি ক্ষমতার দম্ভে ইচ্ছাকৃত অবজ্ঞা।

পি.আর.বি তে ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথে পুলিশ এর সম্পর্কের বিষয়ে উল্লেখ আছে। পিআরবি সম্পর্কে এসপি সাহেবের ভাল ধারনা থাকার কথা, ওটা তো সারদা পুলিশ একাডেমী’র পাঠ্য। ভাবতে অবাক লাগে, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণের চীফের কাছে যেতে এসপি সাহেবের গা ঘিনঘিন করে, অথচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের চীফের (ডিসি) কাছে যাবেন।

এসপি সাহেব নাকি আরো বলেছেন যে, এখন তো তার সমপর্যায়ের কোর অফিসার জেলা জজ নাই (কুষ্টিয়ার জেলা জজ পদ শূন্য আছে), থাকলে তার অফিসে বসতেন।

উল্লেখ্য, সিজেএম মূলত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার এবং সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুসারে জেলা জজ বলতে এই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজও অন্তর্ভুক্ত হবে।

জেলা পর্যায়ে অনেক সরকারী অফিস আছে, সবার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি জেলার সব অফিস প্রধানের পদমর্যাদা সমান নয়। একটা জেলার সীমানায় ৪/৫ বা তার অধিক সংসদ সদস্য থাকতে পারেন, জেলায় ডিসি থাকেন কিন্ত একজন। এভাবে জেল সুপার, জেলা শিক্ষা অফিসার ইত্যাদি পদে একজন করেই থাকেন। তারপরও কিন্ত মাননীয় সংসদ সদস্যগনের পদমর্যাদা ডিসিসহ অন্যদের অনেক উপরে। এসপি সাহেব যখন বিসিএস পরীক্ষায় এপ্লাই করেন তখন তো বিসিএস এ বিচার ক্যাডারসহ ২৯টি ক্যাডার ছিল। কার কি অবস্থান এটা তার জানা উচিত ছিল।

জেলা প্রশাসক হিসেবে প্রশাসনিক কাজের অন্ত নাই কিন্তু জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এখন নাম সর্বস্ব। তার ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল কাজের পরিধি ৯৯ ভাগ কমলেও নামের মহত্ত্ব কমেনি। আইন অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আপিল শুনেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। আর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর প্যারেন্ট পোস্ট হল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ।

এবার একটু অন্য দিক দিয়ে বিবেচনা করা যাক। বিচার বিভাগ সেপারেশনের মাধ্যমে এই বিভাগকে আপগ্রেড করা হয়েছে। সেপারেশনের আগের হিসেবে ধরলেও বিচার-প্রশাসন-পুলিশ ক্যাডারের প্রবেশ পদ যথাক্রমে সহকারী জজ-সহকারী সচিব-এএসপি। সার্ভিস তিনটির পরবর্তি পদোন্নতির পদ যথাক্রমে সিনিয়র সহকারী জজ-সিনিয়র সহকারী সচিব(অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক)-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সার্ভিস তিনটির দ্বিতীয় পদোন্নতির পদ যথাক্রমে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-উপসচিব(জেলা প্রশাসক)-পুলিশ সুপার। এডিশনাল এসপি বা এডিসিরা এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জজের সমতুল্য নন বরং দুই ধাপ পরের। একটা ডেপুটি পদের এডিশনাল অপরটা সর্বোচ্চ পদের এডিশনাল। যেমন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সমান নন। আবার অতিরিক্ত সচিব এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমান নয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ডিসি বা এসপি’র উপরের ধাপের অফিসার।

বর্তমানে এ অবস্থা আরো উন্নীত হয়েছে। আইনের ছাত্র হিসেবে এটুকু বুঝি-পদমর্যাদার ক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য আপিল বিভাগের রায়ও বিদ্যমান ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স এর অংশ।

“এসব লোককে পাঠায় কে” উক্তির মাধ্যমে এসপি সাহেব বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন। মাননীয় কমিশন অবশ্য এখনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়-এসপি সাহেব ৪০-৫০ জন সশস্ত্র ফোর্সসহ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছিলেন, অর্থাৎ তিনি স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স সাধারণত ভোটকেন্দ্রের বাইরে এবং নির্বাচনী এলাকার রাস্তায় টহল দেন। ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে তাদের প্রবেশাধিকার ছিল কিনা নির্বাচন কমিশন ভাল বলতে পারবেন। সংস্লিস্ট প্রিসাইডিং অফিসার তো তাদের ডাকেন নি বা প্রবেশের অনুমতি দেননি।

আগামী ২৫ (জানুয়ারি) তারিখ এসপি সাহেবের ভাগ্যে কি লিখা আছে আমরা জানি না। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় যেভাবে হেনস্থা করেছেন তাতে দেশের পুরো বিচার বিভাগের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারকে নিয়ে এসপি এবং থানার ওসি’র পরবর্তি কার্যকলাপে আমরা আরো স্তম্ভিত। বিচার বিভাগের প্রতিটি সদস্য এ অপকর্মের বিচার চায়। গোটা দেশের সকল জেলায় বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ সেবার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। একজন সীমা লংঘনকারী এসপি’র চরম অসদাচরণের ব্যক্তিগত দায় কোন বিভাগ নেবে না। তবে কোনভাবে ক্ষমালাভে সক্ষম হলেও অন্তত যেন বিচার বিভাগের পদক্রমটা তাকে ভালভাবে বুঝানো হয়। তার কাছেও আমি একটা জিনিস জানতে চাই-কোর অফিসার বলতে কি বুঝায়? হাজার হলেও হি ইজ দ্য অফিসার অফ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস।

লেখকঃ শ্যাম সুন্দর রায়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj