প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার তার ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার দুদকের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি করে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।
এর আগে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সুকুমার ও অনিন্দিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের তদন্ত দল। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নিয়ে যান দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। পরে তিনি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। অন্যদিকে একজন আইনজীবী আদালত কক্ষেই দুই আসামির ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে গেলে বিচারক তাতে আপত্তি জানিয়ে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে স্বাক্ষর নিতে বলেন।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, পিকে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে সুকুমার ও অনিন্দিতা নামে বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন। পিকে হালদার বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তদন্তকালে জানা যায়, এই দুই আসামিও বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া দরকার। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিরা এ সময় কোনো কথা বলেননি। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সুকুমার ও অনিন্দিতাকে গ্রেপ্তারের পর কমিশন সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিকে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুকুমার ও অনিন্দিতা। পিকে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানও করেন সুকুমার।’
এদিকে পিকে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লীলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন। পরে লীলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধার মাধ্যমে আবার পিকে হালদারের কাছে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করা হয়। এভাবে তারা অর্থ পাচার আইনে অপরাধ করেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য পেয়েছেন।
এ ছাড়া সুকুমারের প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ এবং তার মেয়ে অনিন্দিতার প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘এসব আসলে পিকে হালদারের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ।’ আদালতে নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুকুমার বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় যা লেখালেখি হচ্ছে, সেই বিষয়ে বা পিকে হালদারের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। তিনি কেবল আমার ক্লায়েন্ট।’ গত ১৩ জানুয়ারি পিকে হালদারের আরেক সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় দুদক। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত ৪ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় পিকে হালদারের আরেক সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে। তার নামে ধানমণ্ডি এলাকায় একটি ‘বিলাসবহুল’ ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পিকে হালদারের টাকায় কেনা বলে দুদকের ভাষ্য।
