সব
facebook apsnews24.com
ট্রাম্প প্রশাসনের আজ শেষদিনঃ বাইডেনের শপথ - APSNews24.Com

ট্রাম্প প্রশাসনের আজ শেষদিনঃ বাইডেনের শপথ

ট্রাম্প প্রশাসনের  আজ শেষদিনঃ বাইডেনের শপথ ট্রাম্পের থেকে ব্যবধান আরও বাড়ালেন বাইডেন। ছবি: রয়টার্স।

শপথ নিচ্ছেন বাইডেন

ওয়াশিংটন ডিসি এখন এক দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো। ২৫ হাজার সৈন্য ঘিরে রেখেছে ক্যাপিটল হিলের কংগ্রেস ভবন। ভবনের সামনের উন্মুক্ত চত্বর লিংকন মেমোরিয়ালে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে কয়েক লাখ দর্শকের সমাগম হওয়ার কথা, এখন তা জনমানবশূন্য। জনতার স্থান নিয়েছে দুই লাখ পতাকা।

এই স্মৃতিচত্বরের দর্শনীয় রিফ্লেকটিং পুল, যার টলটলে জলে প্রতিবিম্বিত হয় ৫৫০ ফুট দীর্ঘ স্মারকস্তম্ভ ওয়াশিংটন মনুমেন্ট, তার দুই ধারেও কোনো মানুষ নেই। রয়েছে ৪০০ আলোকবাতি। যে চার লাখ মার্কিন নাগরিক করোনার কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন, এই পতাকা ও আলোকবাতি তাঁদের প্রতিনিধি।

কংগ্রেস ভবন পেছনে রেখে নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ মঞ্চ। আজ বুধবার ওয়াশিংটন সময় মধ্যদুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। তাঁদের শপথ পড়াবেন যথাক্রমে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি সোনিয়া সটোমাইয়র।

অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন হাজারখানেক অতিথি, যাঁদের অধিকাংশই কংগ্রেস সদস্য ও বাইডেন-হ্যারিস পরিবারের লোকজন। থাকবেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানের ঘণ্টাতিনেক আগে স্ত্রী মেলানিয়াসহ ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যাবেন ফ্লোরিডায়।বিজ্ঞাপন

বিভক্ত আমেরিকা

আমেরিকা এখন একটি প্রবল বিভক্ত দেশ। ট্রাম্পের অনুগত রিপাবলিকানদের অধিকাংশ এখনো বাইডেনকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকার করেন না। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প ক্রমাগত দাবি করে গেছেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সে কথায় বিশ্বাস করে কয়েক হাজার ট্রাম্প-সমর্থক ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল আক্রমণ করেছেন, যার লক্ষ্য ছিল কংগ্রেসে বাইডেন-হ্যারিসের বিজয় সত্যায়নে বাধা দেওয়া।

রাজনৈতিক বিভক্তি ছাড়া আরও দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে বাইডেনকে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতি চাঙা করা।

এ ঘটনায় সরাসরি উসকানি দেওয়ার জন্য গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হয়েছেন। তাঁর শাস্তি নির্ধারণের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে সিনেটে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হওয়ার কথা। কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা উপেক্ষা করে রিপাবলিকান দলের ১৪৭ জন প্রতিনিধি ও ৬ জন সিনেটর বাইডেন-হ্যারিসের জয়ের সত্যায়নের বিরুদ্ধে ভোট দেন। এ থেকেই বোঝা যায়, হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার পরও রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের প্রভাব কমবেশি অটুট থাকবে।

ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে প্রয়োজন হবে ৬৭ জন সিনেটরের ভোট। সিনেট এখন যদিও ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু তাঁদের আছে মাত্র ৫০টি ভোট। ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন, এটা ভাবা কঠিন।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—এই দুই ভাগে বিভক্তি এখন এতই প্রবল, কেউ কেউ পরিস্থিতিকে উনিশ শতকের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ৬ জানুয়ারির ঘটনার পর কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে এখনো শোনা যাচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহের আওয়াজ।

বাইডেনের সামনে চ্যালেঞ্জ

রাজনৈতিক বিভক্তি ছাড়া আরও দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে বাইডেনকে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতি চাঙা করা। দ্বিমুখী সমস্যা মাথায় রেখে বাইডেন একটি উচ্চাশাপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে ১ দশমিক ৯ টিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্রস্তাব। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রথম ১০০ দিনে তিনি ১০০ মিলিয়ন মানুষকে কোভিড টিকা প্রদান করবেন। অবকাঠামো উন্নয়নে আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। জলবায়ু সংকট রোধে তাঁর রয়েছে একটি ব্যয়বহুল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। অভিবাসন সংকট নিরসনে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচিও তিনি প্রস্তাব করেছেন।

এর কোনোটার বাস্তবায়নই সহজ নয়। অনেকেই বলছেন, যা সম্ভব, তার চেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন বাইডেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে অথবা প্রত্যাশামতো ফল না পেলে, ঝামেলায় পড়বেন বাইডেন।

বাইডেনকে শুধু ট্রাম্প-সমর্থক ও রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের বিরোধিতা নয়, নিজ দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্বও সামলাতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরে তথাকথিত বামপন্থীদের গুরুত্ব বেড়েছে।

শুরু থেকেই একটি পদ্ধতিগত বিপদের মুখোমুখি হতে হবে বাইডেনকে। নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে তাঁকে সিনেটের দ্বারস্থ হতে হবে। অভিশংসন বিচার শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিনেট অধিবেশন একটানা চলবে, যার ফলে বাইডেন প্রশাসনের কাজকর্ম বিঘ্নিত হবে। এ বিবেচনা মাথায় রেখে সিনেটের নতুন ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার সিনেট অধিবেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করেছেন। প্রাতঃকালীন অধিবেশনে বাইডেন অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে, দুপুর থেকে বসবে অভিশংসন বিচার।

অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের ধারণা, মন্ত্রিসভার অনুমোদন খুব কঠিন হবে না। নিজ দলের বামপন্থীদের চাপ সত্ত্বেও বাইডেন মূলত অভিজ্ঞ ও উভয় মহলে সম্মানিত এমন মধ্যপন্থীদের তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। ৬ জানুয়ারির ঘটনার পর নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ বেড়েছে, সে কারণে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের মনোনয়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে রিপাবলিকান সিনেটরদের ওপর চাপ রয়েছে।

ডেমোক্রেটদের বিশ্বাস, শপথ গ্রহণের পর প্রথম এক-দুই দিনের মধ্যে তাঁরা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদটি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন। রাজস্বমন্ত্রী হিসেবে জেনেট ইয়েলিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অ্যান্টনি ব্লিনকিনের মনোয়নও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ম্যারিক গারল্যান্ডের নিয়োগ রিপাবলিকানদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর শেষ বছরে গারল্যান্ডকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন, তখন রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট সে মনোনয়নের শুনানি আয়োজনে অস্বীকার করে।

নিজ দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব

বাইডেনকে শুধু ট্রাম্প-সমর্থক ও রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের বিরোধিতা নয়, নিজ দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্বও সামলাতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরে তথাকথিত বামপন্থীদের গুরুত্ব বেড়েছে। তৃণমূল পর্যায়েও ঘটেছে ‘র‍্যাডিক্যালাইজেশন’। চলতি কংগ্রেসে এই চিন্তাধারার সমর্থকদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। চাইলে শুধু স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি নয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জীবনকেও এরা অতিষ্ঠ করে তুলতে সক্ষম। রিপাবলিকানদের হাতে রাখতে বাইডেন কোনো সুপরিচিত ‘প্রগতিশীল’ ব্যক্তিকে নিজ মন্ত্রিসভায় স্থান দেননি। রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে এ নিয়ে বামপন্থীরা কোনো ঝামেলা করেননি, কিন্তু নিজেদের পছন্দমতো ফল না পেলে এরা চুপ করে থাকবে না।

ভাষ্যকার জনাথন এলেন ঠিকই মন্তব্য করেছেন, বাইডেনের জন্য জেতাটা ছিল সহজ। কঠিন কাজটা শুরু হলো এখন থেকে।

লিংকন থেকে বাইডেন

সময়টা কঠিন, তবে এমন কঠিন সময় আমেরিকাকে আগেও মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রতিবারই যোগ্য নেতৃত্বের হাত ধরে উতরে গেছে দেশটি। যেমন গৃহযুদ্ধের সময় আব্রাহাম লিংকন, বিগত শতাব্দীর অর্থনৈতিক মন্দার ভয়াবহ দুঃসময়ে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট।

ট্রাম্প বিগত চার বছরে যে বিভক্তির রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার ফলে মার্কিন গণতন্ত্র বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্বে আমেরিকার মর্যাদার হানি হয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, লিংকন–রুজভেল্টের মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের পরিচয় দেবেন বাইডেন। সূত্রঃ প্রথম আলো অনলাইন।

আপনার মতামত লিখুন :

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj