আগের রাতেই মেয়ের জন্মদিন পালন করেছেন। ঘুম থেকে উঠে বৃদ্ধা মা-বাবার ঘরে ঢুকতে গিয়েই চমকে উঠেছিলেন মেয়ে। তাঁদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে! শরীর স্পর্শ করেই আঁতকে ওঠেন তিনি। মৃত্যু হয়েছে মা ও বাবার।
পাশে পড়ে ছিল একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের ঘুমের ওষুধের খালি স্ট্রিপ। পাশে সুইসাইড নোটে লেখা- ‘ইচ্ছামৃত্যু’।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার হরিদেবপুর থানা এলাকার জেমস লং সরণিতে মর্মস্পর্শী ঘটনা।
সংবাদ প্রতিদিন জানায়, ‘দেখার কেউ নেই’- এই আক্ষেপে নিজেদের ফ্ল্যাটেই আত্মঘাতী হন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ প্রদ্যুৎ লাহিড়ি ও তার স্ত্রী প্রণতি লাহিড়ি।
মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের।
আপনিও লিখতে পারেন আমাদের ক্যাম্পাস, শিক্ষা পরিবার, সাহিত্য ও মতামত পাতায় । আাপনার লেখার মাধ্যমে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হোক।
আপনার লেখা পাঠাতে আমাদের ইমেল করুন editor@apsnews24.com এই ঠিকানায়।
লেখার সাথে আপনার পরিচয়, ফোন নাম্বার ও ছবি দিবেন। প্রয়োজনে ফোনও করতে পারেন।
01517856010
জানা গেছে, হরিদেবপুরের এই দম্পতির অর্থের অভাব ছিল না। শুধু অভাব ছিল দেখাশোনা ও শুশ্রূষার। সুইসাইড নোটেই তা স্পষ্ট। তাতে বাংলায় লেখা, তাদের একমাত্র মেয়ে থাকেন ৯০ কিলোমিটার দূরে। দেখাশোনার অসুবিধা রয়েছে। তার স্থাবর ও অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তি মেয়েই পাবেন। মেয়ের প্রতি তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
একটি খাতা ও একটি ডায়েরির ছেঁড়া পাতায় এই সুইসাইড নোট লেখা। নিচে বৃদ্ধ দম্পতির সই।
পুলিশ জানিয়েছে, লাহিড়ি দম্পতির মেয়ে মধুমিতা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের স্কুল শিক্ষিকা। কর্মসূত্রে অনেক সময়ই জয়নগরে থাকতেন। আবার কখনো মা-বাবার কাছে। শনিবার তার জন্মদিন ছিল। জেমস লং সরণির বাড়িতেই ছিলেন তিনি।
জন্মদিন পালনের পর রাতের খাবার খেয়ে প্রত্যেকে ঘুমোতে যান। মেয়ে মধুমিতা নিজের ঘরে ছিলেন। তিনি বুঝতেও পারেননি কখন তার মা-বাবা একসঙ্গে সুইসাইড নোট লেখার পর ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন।
সকালে উঠে মা-বাবাকে ডাকতে গিয়ে মেয়ে দেখেন, দরজা খোলা রয়েছে। মা-বাবার নিথর দেহ দেখে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিদেবপুর থানা পুলিশ।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তাদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তারা যে আত্মঘাতী হয়েছেন, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জেনেছে, বৃদ্ধ দম্পতি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাদের মেয়ের সংসারেও অশান্তি চলছিল। তার ওপর মেয়ে বহুদূরে চাকরি করতে যান।
করোনা পরিস্থিতিতেও মাঝেমধ্যে যেতে হতো স্কুলে। তাই মা-বাবাকে সেভাবে দেখাশোনা করতে পারতেন না মেয়ে মধুমিতাও। অন্য কেউ বিশেষ দেখার ছিল না। এ ছাড়াও মেয়ের ডিভোর্স ঘিরেও চিন্তিত, বিমর্ষ ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। শুশ্রূষা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপও ছিল তাদের।
পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে। আত্মঘাতী দম্পতির মেয়ে মধুমিতা ও অন্য আত্মীয়দেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।