ইবি প্রতিনিধি-
গত ২২ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটি শেষে আবাসিক হল বন্ধ রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে আবাসিক ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে পরীক্ষায় অংশ নিতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। এনিয়ে গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে তারা।
শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে বলেন, হল বন্ধ রেখে মৃত্যুকে বুক পকেটে নিয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে চাইনা। বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া প্রস্তাবনার আলোকে হল খুলে দিন। অতঃপর চূড়ান্ত বর্ষের অসমাপ্ত পরীক্ষার আয়োজন করুন। পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় আমার অনেক সহপাঠী অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারেনি। আমরা যারা থেকেছি তারাও পরিপূর্ণরূপে বুঝতে পারিনি। রিভিউ ক্লাস ছাড়া অপ্রস্তুত অবস্থায় পরীক্ষার আয়োজন করে অপরিপক্ক গ্রাজুয়েট তৈরি করে জাতিকে ধোঁকা দিবেন না।
এসব দাবির নিশ্চিত করতে দাবি জানিয়ে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো। সংগঠনগুলোর দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক সংবাদ বার্তায় এসব দাবি জানানো হয়।
যৌথ এক সংবাদ বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি নূরুন্নবী সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক জি. কে. সাদিক বলেন, আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা নেই। তাছাড়া কেবল পরীক্ষাকালীন মেস বা বাসা ভাড়া পাওয়া সহজ হবে না। সবার পক্ষে শহর থেকে এসে পরীক্ষা দেয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, যারা দূর থেকে এসে পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য সাময়িক থাকার ব্যবস্থায় নানা জটিলতা রয়েছে, বিশেষ করে মেয়েদের। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হলগুলো খুলে দেন। যাতে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
অন্য এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রমৈত্রী ইবি শাখার সভাপতি আব্দুর রউফ এবং সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু বলেন, আবাসিক সুবিধা ছাড়া পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। এতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার আরো ঘটবে। কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হলে এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলেও অনলাইনে সম্পন্ন করা কোর্সসমূহের রিভিশন না করে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান করছি। এছাড়া আবাসিক হল খুলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ৯দফা প্রস্তাবনাও দিয়েছেন শাখা ছাত্রমৈত্রী।
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক সংবাদ বিবৃতি দেয়া না হলেও নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাত বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি, তাদের সবার দাবি আবাসিক ও পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেয়া হোক। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে আমিও ব্যক্তিগতভাবে পজিটিভ। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো, একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব না। তবে আমরা সরকারের সবুজ সংকেতের দিকে চেয়ে আছি। ইউজিসির সঙ্গেও আমি এ ব্যাপারে কথা বলব।
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি। যা চলবে আগামী ৩ জানুয়ারী পর্যন্ত। ৪ জানুয়ারী থেকে আবার যথারীতি অফিসসমূহ চালু হবে।