ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে অবশেষে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পথ পেল যুক্তরাজ্য। প্রায় এক বছর ধরে নানা হিসাব-নিকাশ আর টানাপোড়েন শেষে সম্পন্ন হলো ইইউ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি।
অবশ্য চুক্তিটি এখনও ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও চলতি বছরের সমাপ্তি, অর্থাৎ আগামী ৩১ ডিসেম্বর ব্রেক্সিট ট্রানজিশন পিরিয়ড শেষ হওয়ার আগে সেখানে চুক্তির অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কার্যত অসম্ভব। সেক্ষেত্রে অনুমোদনের আগ পর্যন্ত এটি অস্থায়ীভাবেই কার্যকর থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাছাড়া, ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরাও এই চুক্তির বিস্তারিত দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশটির পার্লামেন্টে এ বিষয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের উৎসবের মধ্যেই ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে অবগত করা হবে ইইউ অ্যাম্বাসেডরদের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ার কূটনীতিকদের চুক্তির বিষয়ে সবশেষ তথ্য জানাবেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধান বাণিজ্যিক সমঝোতাকারী লর্ড ফ্রস্ট জানিয়েছেন, চুক্তির ১ হাজার ৫০০ পৃষ্ঠার নথি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে উৎফুল্ল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের হাতে চুক্তির খসড়া নথির একটি অনুলিপি দেখা গেছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের আগে আজকের রাতে ঘুম ঘুম মুহূর্তে যারা কিছু পড়ার জন্য খুঁজছেন, তাদের তাদের জন্য আমার একটি ছোট্ট উপহার রয়েছে। এটি একটি সুসংবাদ। চুক্তি হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘চুক্তি হয়েছে আমাদের বন্ধু ও অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে। এই চুক্তি আগামী ১ জানুয়ারি থেকে আমাদের দেশের ব্যবসা, ভ্রমণ ও বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দেবে।’
এর আগে, চুক্তির ঘোষণার পরপরই ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের আইন এবং ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছি। তবে যুক্তরাজ্য সাংস্কৃতিক, মানসিক, ঐতিহাসিক, কৌশলগত ও ভূতাত্ত্বিকভাবে ইউরোপের সঙ্গেই থাকবে।’
ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ‘চুক্তিটি ন্যায্য এবং ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে। এখন ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর সময়।’ যুক্তরাজ্য সবসময় ইইউ’র বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে থাকবে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে প্রথমবার ভোট দেওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর আনুষ্ঠানিকভাব সম্পন্ন হলো ব্রেক্সিট পরবর্তী এই বাণিজ্য চুক্তি।
চুক্তির ফলে তাদের মধ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত পদ্ধতিতেই পণ্য আমদানি-রফতানি চলবে। তবে উন্মুক্ত চলাচলের সুবিধা আর থাকছে না। ভবিষ্যতের বিরোধগুলোও মীমাংসা হবে স্বাধীনভাবে।