সব
facebook apsnews24.com
বিচারক ও আইনজীবী সুসম্পর্ক, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্যতম নিয়ামক - APSNews24.Com

বিচারক ও আইনজীবী সুসম্পর্ক, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্যতম নিয়ামক

বিচারক ও আইনজীবী সুসম্পর্ক, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্যতম নিয়ামক

বিচার বিভাগ বা বিচার ব্যবস্থা কে ইংরেজীতে জুডিশিয়ারি নামে আমরা চিনে থাকি। রাষ্ট্রের তিনটি অর্গান হলো লেজিসলেচার, এক্সিকিউটিভ এবং জুডিশিয়ারি। লেজিসলেচার আইন প্রণয়ন করে, এক্সিকিউটিভ আইন প্রয়োগ করে, জুডিশিয়ারি আইনের ব্যাখ্যা দেয়, আইনটি সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা বলে দেয়, কোন বিষয়টি কোন আইন অনুযায়ী বিচার হবে তাও জুডিশিয়ারির বিষয়, কোন কাজ অপরাধ হয়েছে কিনা, কোন বিষয়টি নাগরিকদের কোন অধিকার তৈরি করে তাও ঘোষণা করে জুডিশিয়ারি।

তবে জুডিশিয়ারি হলো এক নিরস্ত্র বিভাগ, যার কোন শারীরিক শক্তি নেই, শুধুমাত্র আইনি শক্তি দিয়ে এগিয়ে চলছে, জুডিশিয়ারি শুধু রায় ঘোষণা করে তবে কার্যকর করার দায়িত্ব এক্সিকিউটিভের উপর ই বর্তায়।

অনেকগুলো ছোট ছোট কম্পোনেন্ট মিলিয়ে জুডিশিয়ারি তৈরি, তবে এর বেসিক কম্পোনেন্ট হলো বিচারক ও আইনজীবী।

বিচারক এবং আইনজীবী উভয়েই কোর্ট অফিসার, বিচারক হলেন প্রিসাইডিং অফিসার, আইনজীবী হলেন অফিসার, অন্য কথায় বিচারক কে সভাপতি বলা চলে সেক্ষেত্রে আইনজীবীরা হলেন সদস্য।

এখন আইনজীবী রা বিচারকদের সাথে কেমন আচার আচরণ করবে তা কিন্তু বার কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত কানুন অব প্রফেশাল এথিক্স এন্ড কন্ডাক্টস এ বলে দেয়া আছে, বড় পরিসরে যদি বলি তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ম্যাক্সিম হলো “A lawyer must act for the administration of justice”, এক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে যদি তার নিজের বা নিজের ক্লায়েন্টের বিপক্ষে ও কোন সত্য যায় তবে সে তা গোপন করতে পারবে না।
কোর্টের কাজে অসহযোগিতা করা, কোর্ট কে অসম্মান করা বা কোর্টের আদেশ ভঙ্গ করা আদালত অবমাননা এবং আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণ হিসেবে গন্য হয়।
কিন্তু বিচারক যদি আইনজীবীদের প্রতি অসদাচরণ করেন তা কি অসদাচরণ হবে?
বিষয়টি স্পষ্ট করে বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি তে উল্লেখ নেই, এ বিষয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের বেশ কিছু জুডিশিয়াল প্রনাউনচমেন্ট হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে এখন ও সেরকম কিছু হয়নি। লাহোরে একজন বিচারক একজন আইনজীবী কে বলেছিলেন The foolish lawyer” এজন্য ঐ বিচারকের কারাদণ্ড হয়েছিলো আদালত অবমাননার দায়ে।
ভারতের একটি কেসে ১৯৮৫ সালে বিচারক আইনজীবী কে বলেছিলেন “আপনার দেহ কোর্টে মন বোধহয় অন্য কোথাও না হলে এই বিষয় ও বুঝতে পারলেন না, এটা তো একবার বলা হয়েছে” , এই বিষয় কেন্দ্র করে আইনজীবীর সাথে তর্ক হয় এবং বিচারক আইনজীবী কে এ্যারেস্ট করানোর হুমকি দেয়, পরবরর্তীতে ঐ বিচারকের নামে আদালত অবমাননার প্রসিডিং হয় এবং বিচারক দোষী সাব্যস্ত হন।

আমাদের দেশে আইনজীবীদের বড় একটি অংশ অযোগ্য, পড়াশোনা করেন না এমনকি যে মামলা শুনানি করতে যান তাও পড়ে যান না, আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বার কাউন্সিলের ভূমিকা নেই বললেই চলে। আইনজীবীরা অহরহই পেশাগত অসদাচরণ করেন, তার পেশাকে অবৈধ পন্থায় ও অনেক সময় ব্যবহার করেন।

কিন্তু এই অসদাচরণ বা অযোগ্যতা যা ই থাকুক না কেন বিচারকগণ আইনজীবীদের সাথে দুর্বব্যবহার, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা আইনজীবীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করার কোন অধিকার রাখেন না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিচারক ই কখনো না কখনো আইনজীবী ছিলেন, যদিও প্রাক্টিস করেছেন বা করেননি। এদেশে আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং বিচারক হওয়ার যোগ্যতা ও সেইম।

তাই একজন আইনজীবীর যেমন দায়িত্ব কোর্ট কে সহযোগিতা করা এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করা, তেমনি একজন বিচারকের ও দায়িত্ব আইনজীবী সহ বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সদাচরণ করা।

কোন কমিটির সভাপতি যেমন নিজে নিজে সকল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বা কমিটির সদস্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারেন না , কারন তার মাথায় থাকে আজকের সদস্য কালকের সভাপতি, তেমনি আজকের আইনজীবী কালকের বিচারক এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।

বিচারক কখনো ই লর্ড না, আমরা যে মাই লর্ড বা ইউর অনার সম্বোধন করে তাদের কে মানব চরিত্রের বাইরে নিয়ে যাই তারাও তেমনি মানব চরিত্রের বাইরে গিয়ে আইনজীবীদের সাথে মাঝে মাঝে দাস সুলভ আচরণ করে ফেলেন, এটা কখনো ই জুডিশিয়ারি বা ন্যায় বিচারের জন্য সুখকর নয়।

আইনজীবী বা বিচারকদের উভয়ের দক্ষতা ও সততার উপর ই নির্ভর করে ন্যায় বিচার তাই তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে ই হবে, এছাড়া বিচার ব্যবস্থা মোটেও কার্যকর হবে না।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj