সব
facebook apsnews24.com
রাষ্ট্রের নেতা পরিবর্তন হয়, পররাষ্ট্র নীতি নয় ! - APSNews24.Com

রাষ্ট্রের নেতা পরিবর্তন হয়, পররাষ্ট্র নীতি নয় !

রাষ্ট্রের নেতা পরিবর্তন হয়, পররাষ্ট্র নীতি নয় !

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি তা হল : “হোয়াইট হাউজে যিনিই আসেন, আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ ব্যক্তি বিশেষের উপর পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে না “। শুনতে তিতা হলেও কথাটি দ্রুব সত্য। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে জো-বাইডেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছে এই ভেবে যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন হলে পররাষ্ট্র নীতি পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন হয়। কেননা বিশ্বের অধিকাংশ দেশগুলোতে পররাষ্ট্রনীতি তাদের রাষ্ট্রের প্রয়োজনে পরিবর্তন হয় , সরকারের পরিবর্তনের জন্য নয়।

পররাষ্ট্র নীতি হল এমন নীতি যা বহির্বিশ্বের সাথে একটি দেশের সম্পর্ক কিভাবে হতে হবে সেটা নিয়ে হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি । কারণ বাংলাদেশের সংবিধানে ২৫ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে যে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলবে না, সকল দেশের সাথে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং জাতিসংঘের নীতিমালাকে সম্মান এবং এই নীতি অনুযায়ী পররাষ্ট্র নীতি হবে। বাংলাদেশের কোনো সরকার এসে এই পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করে নি এবং বাস্তবেও এই নীতি অনুযায়ী কাজ করেছে। কোনো দেশের পরারাষ্ট্র নীতিমালা ঐ দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জাতিগত সম্পর্ক, রাজনীতি, আইন ও সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী হয়ে উঠে এবং বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্র নীতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্র নীতিতে জাতিসংঘের প্রভাব থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হয় জো-বাইডেনের কাছে। অনেকেই মনে করে যে ট্রাম্পের স্থানে জোবাইডেন আসার ফলে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নীতি কেমন সেটা জানার পূর্বে জেনে নেওয়া উচিত মার্কিন সরকার ব্যবস্থায় মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেমন হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ হল রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হবার কারণে রাষ্ট্রপতিই নির্বাহী বিভাগ তথা শাসন বিভাগের প্রধান। এই দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংবিধান কতৃক প্রদত্ত। উক্তি ক্ষমতা বলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি যেকোনো নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু এই সকল আদেশে একটি বিষয় আছে তা হল মার্কিন আইন বিভাগ মানে সংসদ ( Parliament )। মার্কিন রাষ্ট্রপতির য‍দি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তবে তার জন্য কংগ্রেস ও সিনেট হতে অনুমোদন নিতে হয় অন্যথায় তা কার্যকর হয় না। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস ও সিনেটের সদস্য না হওয়ার কারণে উক্ত সভাগুলো তার কোনো ভূমিকা থাকে না এবং প্রত্যেক আইন সভার সদস্যগণ তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নিজস্ব মতামত অনুযায়ী ভোট দিয়ে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর নির্ভর করে বিল বা আইন পাশ হয়। তাছাড়া চার বছর পরে নিরপেক্ষ ও সচ্ছ নির্বাচন হয়ে ফলে জনগণ তাদের জন্য উত্তম রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করতে পারেন। এখানেও রাষ্ট্রপতিকে আইনত কোনো একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই বরং আইনসভা হতে অনুমোদন নিতে হয়।

বাস্তবতাও এমন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ছিল রিচার্ড নিক্সন। তার ভূমিকা ও সপ্তম নৌবহরের কথা আমরা সবাই জানি। রিচার্ড নিক্সন ছিল রিপাবলিকানদের দলে। তৎকালীন সময়ে মার্কিনরা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল ও ভারতের বিপক্ষে। বর্তমানেও তাই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সরকার ভারতের সাথে বিভিন্ন চুক্তি করেছে আর অন্য পাকিস্তান এখন চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। অথচ এই ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের। আবার ট্রাম্পের পূর্বে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ছিল বারাক ওবামা। যার সময় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গুপ্ত হামলা করে আল কায়েম প্রধান লাদেনকে হত্যা কা হয়। কিন্তু এতে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক অবনতি হলেও পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যায় । ট্রাম্প প্রশাসন আসার পরেও সেই সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয় নি। ভারত ও পাকিস্তানকে উদাহরণ হিসেবে যদি দেখি তবে পাকিস্তানের যেমন সরকার পরিবর্তন হয়েছে তেমনি ভারতের ও। কিন্তু দুই বৈরী মনোভাব যেমন আগেই ছিল তেমনই আছে। মধ্যে প্রাচ্য মার্কিন বিরোধীদের মধ্যে একটি হল ইরান। সেই ৯০ দশক থেকে ইরানের সাথে মার্কিনদের বৈরী সম্পর্ক। এমনকি একাধিকবার অবরোধ দিয়েছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু নীতি নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী দেশ। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি হল বিশ্ব শাসন করা। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল জাতিসংঘ। অবশ্যই ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য মার্কিনদের পক্ষে থাকলে ও রাশিয়া ও চীন নিজ স্বার্থ ব্যতিত মার্কিনদের পক্ষে থাকে না। মধ্যে প্রাচ্যে ইসরাইলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছে। তবে এক নায়ক বা রাজতন্ত্রের গুলোতে সরকার পতনের পরে পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন হতে দেখা যায়।

লেখক
জিসান তাসফিক
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, পঞ্চম ব্যাচ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj