নাহিদ শাহীন
একটি সচেতনতামূলক ইতিবাচক পোস্টে লাইক কমেন্টস শেয়ার নেই, আছে শুধু নেতিবাচক পোস্ট নিয়ে ব্যাকুলতা। আরে ভাই নেতিবাচক লেখা পোস্ট দিয়ে অন্যের চিত্তকে সংকুচিত করে দেয়া, দূর্বল করে দেয়ার বিশেষ ফলাফল কি? কাউকে কাউকে দেখছি বিদায় চেয়ে, পরকালে দেখা হবে, এই জগতে আর দেখা নাও হতে পারে তাই ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিচ্ছে। এ ধরনের লেখা পোস্ট দিচ্ছে সেটি আবার শেয়ার, কপি করে হাহাকার ফেলে দিচ্ছে। আল্লাহ যার মৃত্যু যেভাবে নির্ধারণ করে রেখেছে সেভাবেই যথা সময়েই কার্যকর হবে।
আমি সবচেয়ে দূর্বল মনের হতাশাগ্রস্ত মানুষ, নিজেকে ঘরে বন্দি রেখে প্রতিমূহুর্ত ভীতিহীন মানসিক শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা করছি। অথচ নানা পদের নিরুৎসাহিত লেখা পোস্ট করে ভয় পাইয়ে দিয়ে, আতংকিত করে হতাশায় ডুবিয়ে দিয়ে কি লাভ বলেন না? মানুষ এখন নিরুপায় হয়ে এই ফেইসবুকেই তো আশ্রয় নিয়েছে, এখানেও যদি সারাক্ষণ চোখে ভাসে আজ মরেছে এতোগুলো–, কাল মরবে এতোগুলো—- হিসেব সমীকরণ সব আপনিই দেখিয়ে দিন তাহলে আল্লাহর উপর আস্থা বিশ্বাসটা কোথায় থাকলো।
সারাদিন একই কথা একই গল্প। একটু পাল্টে নিন না লেখার প্লট। পজিটিভ কিছু লেখেন না। আজকে পাঁচ জন মারা গেছে, আগামী কাল পনের জন মারা যাবে পরশু মারা যাবে পয়তাল্লিশ জন, অতএব বাঁচতে চাইলে ঘরে থাকুন এভাবে না লেখে লিখুন না- আজ পাঁচজন মারা গেছে আগামী কালকে একজনও মারা যাবে না যদি আপনি ঘরে থাকুন। তাহলেই আগামী দিনটিই হবে আলোকিত, সুন্দর, সুস্থ, সংক্রমণ মুক্ত। সবকিছু আগের মতন স্বাভাবিক হবে, মৃত্যুর সংবাদে আরেকটি দিন শুরু হবে না। আমরা শুধু নিয়ম মেনে ঘরে থাকবো। ঘরে থাকার মতো ইতিবাচক সিদ্ধান্তই করোনা প্রতিরোধের মহামূল্যবান ওষুধ।
তবে নিয়মিত নামাজ, ধর্মীয় গ্রন্থ, বিভিন্ন ধরনের বই পড়ুন যেনো হৃদয় সাহসী হয়ে উঠে। ভালো থাকার অনুপ্রেরণা তৈরী হয়।
চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- রোগীকে কখনো তার রোগ সম্পর্কে বারবার প্রশ্ন করে বিব্রত করতে হয়না, তাকে যদি তার মৃত্যু আসন্ন, আর বাঁচবেন না, আপনি কেমন শুকিয়ে গেছেন, হাড্ডি বের হয়ে গেছে বা হায় হায় করেন তবে তার মানসিক অবস্থা কেমন হবে বলুন? সে বেঁচে থাকার উৎসাহ, মানসিক মনোবল দ্রুত হারিয়ে ফেলবে না?
ওই রোগীকেই যদি ভালো রাখতে বলেন, আপনাকে ভালো লাগছে দেখতে, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন, আপনার ইচ্ছে শক্তি প্রখর, আপনি সংগ্রামী। তাতে কঠিন দুরারোগ্য ব্যধিও তাকে ভালো থাকতে সহায়তা করবে।
মানুষের মস্তিষ্ক এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেটি পুরো শরীরকে বিভিন্নভাবে কমান্ড দিয়ে সক্রীয় রাখে।
বৈজ্ঞানিক যুক্তি হচ্ছে আপনি যে কথাটা মস্তিষ্কে বেশি শুনাবেন সেই কমান্ডটাই মস্তিষ্ক তার শরীরে বেশি করে পৌঁছে দিবে। সেটি নেতিবাচক হলে নেতিবাচক পদ্ধতিতে, ইতিবাচক হলে ইতিবাচক পদ্ধতিতে।
এবার আপনি ভাবুন- করোনা ভাইরাস পৃথিবী তছনছ করে দিবে, লন্ডভন্ড করে দিবে, কোটি মানুষ মারা যাবে, বাংলাদেশেও লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে।আমরাও এই বুঝি আক্রান্ত হচ্ছি, মারা যাচ্ছি।
আসুন বিদায় নিয়ে রাখি, ক্ষমা চেয়ে রাখি। এসব করে আপনার সাথে সাথে ঘরের নাজুক অবস্থায় বৃদ্ধ বাবা মা, কঠিন রোগে শয্যাশায়ী পারিবারিক অন্য সদস্যকেও কি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিবেন? নাকি আল্লাহ উপর পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে সচেতনভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে প্রস্তুত করবেন?
আপনার উপর ছেড়ে দিলাম। তবে সামান্য কয়েকটি দিন উদ্বেগ উৎকন্ঠায় যাবে হয়তোবা তারপর একটি সতেজ নির্মল সুস্থ সুন্দর ভোর আসবেই আপনার উঠোনে।
সবাই ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন। শুভকামনা।
নাহিদ শাহীন, আইনজীবী ও লেখক