বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে অরাজকতা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল ধর্মকে অবমাননা করা। ধর্ম অবমাননা নিয়ে অনেক সময় অনেক ঘটনা ঘটেছে। দাঙ্গা, নৈরাজ্য সহ আগ্রাসন পর্যন্ত হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এসব ঠেকানোর জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য প্রফেসর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফ্রান্সে নবীজিকে কটুক্তি করে নতুন করে মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। গনমাধম্যে চোখ রাখলে দেখা যায় যে এসব আচরণে মানুষ কতটা বিরক্ত ও অতিষ্ঠ।
ধর্ম হল বিভিন্ন প্রাণীর আচার-আচরণ, বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিক, কার্যকলাপ ইত্যাদি যে তাদের কাজের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু এখানে ধর্ম হল সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রেখে তার প্রদত্ত বিধিবিধান পালন করা। পৃথিবীতে অনেকগুলো ধর্ম ও ধর্মানুলম্বীর মানুষ আছে। অনুসারীর দিক দিয়ে পৃথিবীতে চারটি বৃহৎ ধর্ম দেখা যায় তা হল খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ইসলাম ও সনাতন ধর্ম। এদের মধ্যে সনাতন ধর্মই প্রাচীন ধর্ম এবং ভারতীয় উপমহাদেশে এদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এর বাহিরে ইহুদি, শিখ সহ আরও কিছু সংখ্যালঘু ধর্মানুলম্বীরা ও নাস্তিকরা ( যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নয় ) আছে। সুতরাং একে অপরকে যখন কটাক্ষ করে তখন সেটি বিকট রূপ নেয়।
আধুনিক বিশ্বে ডিজিটাল প্রযুক্তি হবার ফলে এক জায়গার খবর অন্য জায়গাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পরে এবং ভাইরাল হয়। সেখানে ধর্মীয় ইস্যুতে কথা বলা কিংবা কটাক্ষ করা খুব সহজে ভাইরাল হয়। ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা আজকের বিষয় নয়। এটা প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সমাজের একটি খারাপ দিকে আছে তা হল সবলেরা দূর্বলদের উপর অত্যাচার করে। সেখানে ধর্মানুলম্বীরা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তবে তাদের মধ্য হতেও হয়। যদিও ধর্মশিক্ষায় বরাবরই নৈতিকতার বিষয় থাকে কিন্তু তবুও কিছু স্বার্থান্বেষী লোকজন ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। তার মধ্যে অন্যতম হল ধর্মকে অবমাননা করা। ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-মহাযুদ্ধ ও হয়েছে। আবার অনেক জায়গা ইসলামকে সরাসরি কটাক্ষ করা হয়েছে । অথচ মদিনা সনদ, হিলফুল ফুজুলের মত সংগঠনের আদর্শে আজ বিশ্বের বড় বড় সংস্থা দাড়িয়ে আছে। ইতিহাসে মানবতার জন্য এর পূর্বে এমন কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব দেখা যায় নি। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। ইসলাম ধর্মে নবীজি বিদায় হজ্বে মুসলিমদের যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হল কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী জীবন যাপন করা এবং ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও জোরজবরদস্তি করতে নিষেধ করেছেন। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও অন্যদের আঘাত করা ও কটাক্ষ করার নিষেধাজ্ঞা আছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে ২ক তে ইসলাম সহ অন্যান্য ধর্মগুলোকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়েছে, ১২ অনুচ্ছেদে সাম্প্রদায়িকতাকে সাংবিধানিক ভাবে বয়কট করা হয়েছ এবং ২৮ অনুচ্ছেদে ধর্ম নিয়ে কোনো প্রকার বৈষম্য আচারণের নিষেধ করা হয়েছ । এছাড়াও ধর্মীয় অবমাননা করা, কটুক্তি করা, আঘাত করা কিংবা ক্ষতি করা আইনত অপরাধ করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ২৯৫ থেকে ২৯৮ পর্যন্ত ধর্মীয় অবমাননার শাস্তির বিধান করা হয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারা ধর্মীয় অবমাননাকে শাস্তি যোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও সাথে অনধিক ১ কোটি টাকার অর্থদণ্ড ও আছে। ধর্মীয় অবমাননার দায়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলা হয়েছে এবং শাস্তি ও দেওয়া হয়েছে। বিএলআর ও ডিএলার দেখলে পাওয়া যায়।
সুতরাং ধর্মীয় অবমাননা আইনত যেমন শাস্তি যোগ্য অপরাধ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শাস্তি বিনষ্ট করে। ফ্রান্সের এই কৃতকর্মের জন্য অনেক দেশই তাদের পণ্য বয়কট করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরাও আছেন যা ফ্রান্সের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। অথচ ফ্রান্স জাতিসংঘের পাচঁটি স্থায়ী সদস্যের একটি এবং যাদের উদ্দেশ্য বিশ্ব শান্তি স্থাপনা করা। ঢাবি প্রফেসরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে যা তার সুখকর নয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে ও বহিস্কারের মত শাস্তিও দিয়েছে। প্রত্যেকে মতামতের অধিকার কাছে কিন্তু সেটা অপব্যাখ্যা কিংবা কটাক্ষ করে নয় বরং যুক্তিপূর্ণ কথা বলে। তাছাড়া কোনো ধর্ম সম্পর্কে কথা বলার পূর্বে ঐ ধর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখা উচিত এবং এটি দীর্ঘ সময়ের বিষয়। প্রতিটি দেশে সংবিধান আছে, আইন আছে, আদালত আছে, সংসদ আছে সুতরাং কোনো সমস্যা হলে সেখানে গিয়ে মোকাবেলা করা উচিত।
ধর্ম অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এটা কোনো প্রতিবাদ হতে পারে না বরং প্রতিহিংসা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। বর্তমানে করোনাকালে যেখানে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা দায় সেখানে নৈরাজ্য সৃষ্টিকরা মোটেও কাম্য নয়। কেউ কাউকে অবমাননা করে কোনো লাভবান হয় বলে মনে হয় না বরং সম্পর্ক নষ্ট হয়। প্রত্যেক মানুষের নিজের প্রতি ও ধর্মের কাজের প্রতি মনোযোগ থাকা উচিত পাশাপাশি অন্য ধর্মকে সম্মান করা উচিত । এটাই যথেষ্ট পৃথিবীতে শান্তি বজায়ের জন্য।
লেখক
জিসান তাসফিক
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ ( পঞ্চম ব্যাচ )
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।