সব
facebook apsnews24.com
ভৌতিক অণুগল্প - APSNews24.Com

ভৌতিক অণুগল্প

ভৌতিক অণুগল্প

১. রাত ২টা। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছে যুবিন। একটু কাজে চাচার বাসায় গিয়েছিল। বের হতে দেরি হয়ে গেল। ভাগ্যিস ছাতাটা সাথে ছিল, না হলে সমস্যা হয়ে যেত। হঠাৎ একটি পুরুষ কন্ঠ তার কানে এসে বাজলো।

  • আপনার ছাতার নিচে আসতে পারি? এই সামনেই যাব।
    যুবিন পিছন ফিরে দেখলো এক লোক সেখানে দাঁড়িয়ে। বৃষ্টির মধ্যে সাথে কোন ছাতা নেই। সে অনুমতি দিল তার ছাতার নিচে আসার জন্য। এরপর দুই জন হেঁটে বেশ অনেক দূর পর্যন্ত গেল। জানতে পারলো যে, লোকটা তার বাসা পার হয়ে আর একটু দূর পর্যন্ত যাবে। হাঁটতে হাঁটতে যুবিনের বাসা চলে আসলো। বৃষ্টি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যুবিন বাসার গেটে ঢোকার সময় বলল, ‘আপনি বরং ছাতাটা সাথে নিয়ে যান।’ গেটের দারোয়ান শোনা মাত্র এগিয়ে আসলো। মনে করলো যেন তাকে কিছু বলছে। যুবিন বলল, ‘ওনাকে বলছি।’ দারোয়ান বলল, ‘কাকে বলছেন? কাউকে দেখছি না।’ যুবিন পাশ ফিরে দেখলো আসলেই কেউ নেই এবং গেটের পাশের কুকুর গুলো বেশ উত্তেজিত।

২. হঠাৎ অরণ্যের মনে হল কে যেন তাকে দেখছে। ওপাশ ফিরে দেখলো তার রুমের সোফাটায় বসে আছে এক মহিলা। সাদা শাড়ি পরা। মাথায় কালো লম্বা চুল। দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, সে কোন জীবিত মানুষ নয়। মৃত আত্মা। তবে কিছু করছে না। শুধু তাকিয়ে আছে। শুরুতে ভয় পেলেও পরে তেমন এক টা পাত্তা দেয়নি অরণ্য। এরপর হঠাৎ সেই সাদা শাড়ি পরা আত্মা অরণ্যের খাটের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো এবং তার ধারালো দাঁত বের করে গলায় কামড় দিতে উদ্যত হল। এরপরই অরণ্যের ঘুমটা ভেংগে গেল। যাক, তাহলে সেটা স্বপ্ন ছিল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল যে, রাত ২ঃ৩০ টা বাজে। ঠিক সে সময়েই রুমের জানালার স্লাইডিং কাঁচটা নিজে নিজেই খুলে গেল। জানলা দিয়ে কেউ ঢোকার আগে যেভাবে খুলে ঠিক সেভাবে।

৩. আজ রায়হান ও নীলার বিবাহ বার্ষিকী। কিন্তু দুই জনেরই অফিসে যেতে হবে। প্ল্যান হল যে, অফিস শেষে রাতে কোথাও এক সাথে ডিনার করে বাসায় ফিরবে। অনেক চিন্তা করে ঠিক হল ‘বার্ডস আই’ নামে পরিচিত একটি রুফ টপ রেস্টুরেন্টে যাবে যেখানে রাতে candle light ডিনার করা যাবে। সেই অনুযায়ী দুইজন অফিস শেষে যার যার মত রেস্টুরেন্টে পৌঁছাল। রায়হানের পরনে ছিল ফরমাল স্যুট এবং অফিশিয়াল প্যান্ট আর নীলা পড়েছে গাঢ় সবুজ জর্জেটের শাড়ি যার উপরে হালকা সোনালী কাজ, হাতে দুটো চুড়ি ও হীরার আংটি, কানে বড় দুল। যা হোক, সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার অর্ডার করল এবং বেশ অল্প সময়ের মধ্যে টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হল। ফ্রাইড রাইস, টার্কি রোস্ট, বিফ কারি, চপসি, সফট ড্রিংক্স সব কিছু দিয়ে টেবিল ভরে গেল। তবে অর্ডার করার সময় রেস্টুরেন্টের বেয়ারাটা কোন একটা বিষয় নিয়ে বেশ অবাক হচ্ছিল। যা হোক, তারা খাওয়া শুরু করল। খাওয়ার মাঝে বিভিন্ন মন্তব্য করছিল – কোনটা খেতে ভালো হয়েছে, কোনটাতে মসলা কম হয়েছে এসব নিয়ে। এক পর্যায়ে খাওয়া শেষ হল এবং নীলা আয়না দেখবে বলে ওয়াশ রুমের দিকে গেল। রায়হান অপেক্ষা করতে লাগল নীলা ফিরে আসলে আইস্ক্রীম অর্ডার করবে বলে। হঠাৎ তার মোবাইল বেজে উঠলো। স্ক্রিনে দেখল যে, নীলা ফোন করেছে। ধরার পর ওপাশ থেকে নীলার কণ্ঠ – ‘স্যরি, একটা মিটিং ছিল, যার জন্য বের হতে দেরি হয়ে গেল। মাত্র এসে পৌছালাম। তুমি কোন টেবিলে বসেছ?’ রায়হান তাকিয়ে দেখল নীলা মাত্র ঢুকেছে। এদিক ওদিক খুঁজছে। অবশেষে রায়হান যেই টেবিলে বসেছিল সেখানে এসে বসল। বলল, ‘অর্ডারটা এখনই দিয়ে দেই চল। না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।’ রায়হান মনে মনে ভাবল, ‘তাহলে এতক্ষণ আমি কার সাথে ডিনার করলাম?’

৪. রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখে সবজি কাটছে প্রমিলা। আর পাশে ছায়ার সাথে খেলা করছে তার তিন বছর বয়সের ছেলে সিয়াম। এক পর্যায়ে সে বলে উঠল, ‘মা, তোমার ছায়া আজকে তোমার মত না চলে তার নিজের মত চলছে।’ প্রমিলা তাকিয়ে দেখল, আসলেই তার ছায়া অন্য রকম অঙ্গভঙ্গি করছে। তার সাথে মিল নেই। সে বসে সবজি কাটছে। কিন্তু তার ছায়া কাউকে ইশারায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

৫. টিং টিং টিং
মনে হচ্ছে কেউ জানালায় নক করছে। এরকম আগে কখনও হয়নি। তাও ভাবলাম গিয়ে একটু দেখি। এরপর ই মনে পড়লো যে আমি দশ তলায় থাকি।

৬. ঠক ঠক ঠক
শব্দটা শুনে সুমি মনে করলো কেউ দরজা নক করছে। কিন্তু ঘড়িতে রাত ১টা বাজে। এই সময়ে কে আসবে? তবুও দেখতে গেল। দেখলো সেখানে কেউ নেই। এরপর আবার শব্দটা হল। তখন বোঝা গেল যে, শব্দটা দরজা থেকে না, কাঠের আলমারি থেকে হচ্ছে।

৭. রাতে হঠাৎ ঝুমার মনে হল কে যেন তার কামরায় আছে। বাতি জ্বালিয়ে দেখল, একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে। বয়স আনুমানিক চার বা পঁাচ হবে। এখানে কিভাবে এলো জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে, পথ হারিয়ে ফেলেছিল। এই বাড়িটি দেখতে পেয়ে জানালা দিয়ে ঢুকে এখানে এসেছে। ঝুমা ভাবলো যে, আজকে রাতটা গেলে কাল সকালে তার ঠিকানা খুঁজে তাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে। রাতে মেয়েটি তার বিছানাতে তার পাশেই ঘুমালো। সকালে উঠে নাস্তা খেলো। মেয়েটার জন্য রুমে নাস্তা নিয়ে আসলো যাতে বাড়ির কেউ টের না পায়। এরপর ভাবলো, পত্রিকাটা পড়ে তারপর বের হবে। পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক জায়গায় দেখলো যে, ‘ভবনের তিন তলা থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু’ শিরোনামে একটি খবর ছাপা হয়েছে এবং তার নিচে সেই মেয়েটির ছবি দেয়া। এরপর সারা বাড়ি খুঁজেও সেই মেয়েটির আর দেখা মেলেনি।

৮. দুপুরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল নীলা। হঠাৎ নীচে রাস্তায় দেখলো যে, ছোট একটি মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে। নীলাও পাল্টা হাত নাড়লো। এরপরই ফোনে অনলাইন পত্রিকায় দেখলো যে, সড়ক দুর্ঘটনায় সাত বছর বয়সী ক্ণার মৃত্যুর তিন বছর হল আজ। আর সেই মেয়েটির ছবি সেখানে ছাপা হয়েছে। নীচে তাকিয়ে দেখলো, মেয়েটি তখনও তার দিকে তাকিয়ে দঁাত কেলিয়ে হাসছে।

নাজিয়া আমিন
আইনজীবী ও লেখক

আপনার মতামত লিখুন :

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj