রোহিঙ্গা জেনোসাইড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্ভাব্য বিচারে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট, সংক্ষেপে আইসিসি) বসানোর ভাবনা নাকচ করেনি আইসিসির নিবন্ধকের দপ্তর, বরং তারা সম্ভাব্য বিচারপ্রক্রিয়ার এক থেকে পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা বাংলাদেশে করার বিষয়ে পাঁচটি প্রেক্ষাপট ধরে নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ আইসিসির কাছে তুলে ধরেছে। আইসিসির নিবন্ধক পিটার লিউইসের পক্ষে জুডিশিয়াল সার্ভিস বিভাগের পরিচালক মার্ক ডুবিসন গত সোমবার দ্য হেগে আইসিসির প্রাক-বিচারক আদালত-৩-এ তাঁদের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন।
আপনিও লিখতে পারেন আমাদের ক্যাম্পাস, শিক্ষা পরিবার, সাহিত্য ও মতামত পাতায় ।
আাপনার লেখার মাধ্যমে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হোক।
আপনার লেখা পাঠাতে আমাদের ইমেল করুন editor@apsnews24.com এই ঠিকানায়।
লেখার সাথে আপনার পরিচয়, ফোন নাম্বার ও ছবি দিবেন। প্রয়োজনে ফোনও করতে পারেন।
উল্লেখ্য, আইসিসির কৌঁসুলির দপ্তর রোহিঙ্গা জেনোসাইডের অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত চালাচ্ছে। এখনো বিচার শুরু বা শুরুর সিদ্ধান্ত না হলেও বিচারের সম্ভাবনাকে ঘিরে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রস্তুতি চলছে। গত মাসে রোহিঙ্গাদের পক্ষের দুটি আইনজীবীদল রোহিঙ্গা জেনোসাইডের সম্ভাব্য বিচার হেগের পরিবর্তে কক্সবাজারে বা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি কোনো স্থানে করার জন্য আবেদন করেছিল। তবে আইসিসির কৌঁসুলি ফাটু বেনসুডা এই পর্যায়ে আইসিসিকে এমন আবেদন মঞ্জুর না করার জন্য অনুরোধ জানান। এরপর আইসিসির প্রাক-বিচারক আদালত-৩ অন্যত্র আদালত বসানোর আবেদনের বিষয়ে আইসিসির নিবন্ধকের দপ্তরের মতামত চেয়েছিলেন। ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের মতামত দিতে বলা হয়।
আইসিসির নিবন্ধকের দপ্তর গত ২১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ গত সোমবার আদালতকে পাঁচটি প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনে বাংলাদেশে ‘ফিজিবিলিটি মিশন’ (সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সফর) করার কথা জানিয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম প্রেক্ষাপটটি হলো কক্সবাজারে ‘শরণার্থী শিবিরে জুডিশিয়াল ভিজিট’। নিবন্ধকের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই সফরে সম্ভবত সর্বোচ্চ দুই দিন সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে আলাদা করে আদালতের তথ্য-প্রযুক্তি সেবা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় প্রেক্ষাপটটি হলো আইসিসির আদালত বা নিযুক্ত একক বিচারক হেগেই থাকবেন এবং বাংলাদেশ থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সাক্ষী তাঁর সাক্ষ্য উপস্থাপন করবেন। নিবন্ধকের দপ্তরের মতে, এ ক্ষেত্রে প্রায় তিন কর্মদিবস লাগতে পারে।
তৃতীয় প্রেক্ষাপট হিসেবে নিবন্ধকের দপ্তর বলেছে, আইসিসির আদালত বা নিযুক্ত একক বিচারক বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করবেন। এতে অন্তত এক দিন লাগবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তাঁদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য শুনানি হতে পারে।
চতুর্থ প্রেক্ষাপট হিসেবে বাংলাদেশে একটি অভিযোগ গঠনের পূর্ণ শুনানির কথা বিবেচনায় নিয়েছে আইসিসির নিবন্ধকের দপ্তর। এ ধরনের শুনানি প্রায় পাঁচ দিন ধরে চলে। অতীতের শুনানিগুলোর আলোকে ধারণা করা হয় যে এ ক্ষেত্রে একজন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে বলা হবে। গ্রেপ্তার হওয়া একজন ব্যক্তি থাকবেন। বিচারপ্রক্রিয়ায় সহায়তায় জন্য আদালতের অন্তত ২৫ জন কর্মী থাকবেন। এ ক্ষেত্রে আদালত এলাকা ও সদস্যদের সার্বক্ষণিক পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং এ জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে অগ্রসরমূলক যোগাযোগ ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে।
পঞ্চম প্রেক্ষাপট হিসেবে আইসিসির নিবন্ধকের দপ্তর একটি অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশেই হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। এতে প্রায় এক দিন সময় লাগবে।
আদালতে উত্থাপিত পর্যবেক্ষণে নিবন্ধকের দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আদালতের কাজকে সহায়তা করতে নিবন্ধকের দপ্তর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার কাজ করছে। এ ধরনের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে কয়েক মাস লাগতে পারে।
নিবন্ধকের দপ্তর আরো বলেছে, বাংলাদেশ এখনো আইসিসি সদস্যদের সুবিধা ও দায়মুক্তি দেওয়ার চুক্তি সই করেনি। বাংলাদেশে আসবেন এমন আইসিসির কর্মীদের সুবিধা ও দায়মুক্তি দিতে নিবন্ধকের দপ্তর বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আইসিসির প্রাক-বিচারিক আদালত-৩ রোহিঙ্গাদের পক্ষের আইনজীবীদের আবেদন, কৌঁসুলি ও নিবন্ধকের মতামত বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণ দেবে।
উল্লেখ্য, আইসিসির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত হেগের বাইরে আদালত বসার কোনো নজির নেই। রোহিঙ্গা জেনোসাইড বিষয়ক মামলায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থান মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়। আইসিসি মিয়ানমারের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না। তা ছাড়া কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিচারের দাবি নিয়ে হেগে যাওয়ার ক্ষেত্রেও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রোম সংবিধিতে বর্ণিত অপরাধগুলোর অন্যতম ‘গণবাস্তুচ্যুতি’ সংঘটিত হয়েছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ আইসিসি সদস্য হওয়ায় এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ওপরও আইসিসির বিচারিক এখতিয়ার আছে।
অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আরেকটি আন্তর্জাতিক আদালত আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, সংক্ষেপে আইসিজে) রোহিঙ্গা জেনোসাইডের অভিযোগে রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।