মোঃ রাসেল হোসাইন বরগুনা:
আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র অনাস্থা দেওয়ায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপ। অনাকাংখিত ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করেছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১২ টায় বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয় প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করেন আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফোরকান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বরগুনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান, বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটন ও তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবিরসহ আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিরা। একই স্থানে দুপুর আড়াই টায় সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামীলীগের অপর একাংশ মেয়র গ্রুপের আমতলীর সাতজন ইউপি চেয়ারম্যান।
আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আমতলীর মেয়র মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে গত ২১ আগষ্ট সাত চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র বরগুনা জেলা প্রশাসকের দফতরে যে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনেদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযােগ আনা হয়েছে তার একটির ও বিন্দুমাত্র সত্যতা নাই। যদি সত্য হতাে তাহলে এই কথিত অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগে ওই সকল জনপ্রতিনিধিরা মৌখিক ভাবে কিংবা আপনাদের গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে এসবের স্বপক্ষে তথ্য-প্রমান দিয়ে অন্তত কিছু অভিযােগ তুলে ধরতে পারতেন। এমনকি তারা উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভা বর্জন করতে পারতেন।
কিন্তু এ ধরনের কোনাে অভিযােগ ছিল না বলে তারা এটা করার সুযােগ পায়নি। এখন হঠাৎ করে মনগড়া কিছু অভিযোগ তুলে তারা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনছেন। এটা সম্পূর্ন উদ্দেশ্য মূলক। উপজেলা বিধিতে কোন অনাস্থা নেই। আমি যদি কোন দুর্নীতি করি তাহলে তথ্য উপাথ্য দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন। যারা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। তারাও হাই ব্রিড আওয়ামীলী। আমি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। আমার বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে অভিযোগ দিতে পারতেন। আমাকে সমাজে ছোট করার জন্যই আমাকে কথিত অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি জনগণের ভােটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমি দলের দুর্দিনের একজন নিবেদিত কর্মী। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনাে অসত্যতার কালিমা নেই। এজন্য ২০০১ সালে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া বরগুনা-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনােনয়ন দেওয়া হয়েছিল। ভােট গ্রহন শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে দলীয় ভাবে ওই নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির ব্যাপক অনিয়মের কারনে ভােট বর্জন করার পরও আমতলী-তালতলীর জনগণ আমাকে ৩৮ হাজার ভােট দিয়েছিল। এজন্য আমার সব সময় জনগণের প্রতি আস্থা ছিল এখনও তা অবিচল আছে।
অনাস্থা প্রদানকারীরা বিএনপি, জামাতপন্থী ও অনুপ্রবেশকারী দাবী করে গোলাম সারোয়ার ফোরকান আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই এই অনাস্থা প্রদানকারী চক্রের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে অবহিত আছেন। এদের মধ্যে ২০০২ সালের ২৪ মে আমতলী উপজেলা বিএনপি অনুমােদিত কমিটিতে বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমান ৪৪ নম্বর সদস্য, তার আপন ভাই মজিবর রহমান কোষাধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাদল খান ৪৫ নম্বর সদস্য, চেয়ারম্যান মােঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মেয়র মতিয়ার রহমান ও মজিবর রহমানের বােন ফিরোজা বেগম বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, ভাগিনা আবুল কালাম আজাদ স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ছিলেন।
তারা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী। দলে অনুপ্রবেশ করেই অন্য অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে মিলে পুরানাে ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোনঠাসা করে রাখে। এমনকি উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ এর সভানেত্রী পদে নির্বাচিত করেন মতিয়ার রহমান এর স্ত্রী নুসরাত জাহান লিমুকে।
অপর দিকে আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ফোরকানের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই দুপুর আড়াইটায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে অনাস্থা প্রস্তাবকারীরা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আমতলী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিবর রহমানসহ সাত ইউপি চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, গোলাম সারোয়ার ফোরকান আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আইন লঙ্গন করে তার ইচ্ছামত খামখেয়ালী ভাবে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা পরিষদ পরিচালনা করছেন।
এ ছাড়া সকলের পক্ষে তিনি ১০ দফা দাবী জানান। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান দুর্নীতি করে লুটপাট করেছেন। তার পরিষদে কোন সদস্য নেই। আমরা সবাই বয়কট করেছি। তার পরিবারের কোন সদস্য আওয়ামীলীগের সঙ্গে জড়িত নয়। সবাই বিএনপি করেন। এ ছাড়া গোলাম সরোয়ার ফোরকান দলীয় প্রার্থী জিএম দেলোয়ারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচন না করলে দলীয় প্রার্থী জিএম দেলোয়ার হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান হতেন। তিনি আবার আমাদের অনুপ্রবেশকারী বলেন।
সকল ইউপি চেয়ারম্যানরা বলেন, গোলাম সরোয়ার ফোরকান যতদিন আছেন ততোদিনে আমরা আর আমতলী উপজেলা পরিষদে যাব না। তারমত দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানকে উপজেলা পরিষদে দেখতে চাইনা।
বরগুনার অতিরক্তি পুলিশ সুপার মোকারম বলেন, একই দলের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন। দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করেছি।