তামাদি আইন (Limitation Act) :
তামাদি একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল কোন কিছু বিলুপ্ত হওয়া বা বাধা প্রাপ্ত হওয়া। এটি মূলত একটি পদ্ধতিগত আইন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আইনগত আধিকারের বিলুপ্তি ঘটায়।
তামাদি আইন উপমহাদেশে প্রথম প্রণীত হয় ১৭৯৬ সালে। লর্ড কর্নওয়ালীশ প্রতিষ্ঠা করেন।তামাদি আইন, ১৯০৮ (১৯০৮ সালের ৯ নং আইন) ১৯০৮ সালের ৭ আগস্ট এই আইনটি প্রণীত হয়।তামাদি আইন ১৯০৯ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর বা বলবৎ হয়।
এই আইনের ধারা ২৯ টি।তফসিল ৩ টি, প্রথম তফসিলে অনুচ্ছেদ আছে ১৮৩ টি। ২য় ও ৩য় তফসিল অন্তর্ভুক্ত।এটি বিধিবদ্ধ আইন। তামাদি শুধু দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্র আপীল, রিভিউ , রিভিশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে ও স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবস্থা না করলে উক্ত স্বত্বাধিকারী নষ্ট হয়েছে বলে আইনে বিবেচিত হয়, আর এটি ই তামাদি আইন।
ক্রোম ওয়েলস বলেছেন-“ তামাদি আইন হলো শান্তির আইন”। তাই বলা যায় যে, তামাদী আইন কোন স্বত্ব উদ্ভব করেনা, তা শুধু স্বত্ব আদায়ের সময়কাল স্থির করে দেয়।
তামাদী আইন সর্বোশেষ সংশোধিত হয় ২০০৪ সালে। ১১৩ ও ১১৪অনুচ্ছেদ সংশোধিত হয়।
ক। চুক্তি প্রবলের মামলার তামাদী কাল আগে ছিল ৩ বছর, এখন ১ বছর( ১১৩ অনুচ্ছেদ)
খ। চুক্তি প্রত্যাহের তামাদিকাল আগে ছিলো ৩ বছর, এখন ১ বছর(১১৪ অনুচ্ছেদ)
তামাদি কাল শুধু হয় Cause of action বা মামলার কারন থেকে তামাদি গননা করা হয় বাদীর বিরুদ্ধে। বিবাদী যদি তামাদীর প্রশ্ন নাও তুলে তার পরে ও মামলা খারিজ হবে না। মামলা বলতে দেওয়ানী মামলা কে বুঝাবে।
তামাদী আইনের সময় গণনা করা হয় ইংরেজী ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা অনুযায়ী। যা গ্যাগ্রিয়ান বর্ষ্পঞ্জী নামে পরিচিত(ধারা ২৫)। তামাদীর নির্ধারিত সময় সীমার পর মুল মামলা দায়ের করা যায় না। আর একেই মামলা তামাদী হয়ে যাওয়া বলে। প্রথম তফসিলে বর্ণিত নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে কোন মামলা, আপিল, রিভিউ , রিভিশন , আপিল করার অনুমতির দরখাস্ত বা লিভ টু আপিল অথবা অন্য যে কোন দরখাস্ত দাখিল না করা হলে আদালত তা খারিজ করে দেবেন।
উদাহরনঃ
সালাম স্থাবর সম্পত্তি হতে দখলচ্যুত হয়ে সাড়ে ৬ মাস পর মামলা করল।রহিমের মামলাটি তামাদি দোষে খারিজ হলো।কারন স্থাবর সম্পত্তি হতে দখল চ্যুত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে মামলা করতে হয়।
আদালত যদি বন্ধ থাকে এবং ঐ বন্ধের সময় যদি তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রথম কার্য দিবসে অর্থাৎ আদালত খোলার দিন উক্ত মামলা দাখিল, আপীল কিংবা দরখাস্ত দায়ের করা যাবে যদি বিচারক ছুটে থাকে তবে সেদিন আদালত বন্ধ বলে ধরা হবে ( ধারা ৪)
যেমনঃ দলিল বাতিলের মামলা ৩ বছরের মধ্যে করতে হয়। যেদিন ৩ বছরের মধ্যে করতে হয়। যেদিন ৩ বছর পুর্ন হয় সেদিন আদালত বন্ধ থাকলে , খোলার দিন অর্থাৎ প্রথম কার্যদিবসে মামলা দায়ের করা যাবে।
তামাদি আইনে প্রণীত বিধানসমূহের মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে দূর অতীতের কোন বিবাদীকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা। তামাদি আইন বিধান দেয় যে, নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে দাবী আদায়ের তৎপরতা না দেখালে তা নষ্ট হয়েছে বলে পরিগণিত হওয়া উচিত। তামাদি আইনের এই সাবধান বাণী মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন রাখে।
পরিশেষে বলা যায় যে, তামাদি আইন স্বত্ব সৃষ্টি করে না, শুধু স্বত্ব আদায়ের সময়সীমা স্থির করে দেয়।
খন্দকার সুমাইয়া লামিসা হক স্রোতস্বিনী
সেশন : ২০১৭-১৮
বিভাগ : আইন ও ভূমি প্রশাসন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়