নিজস্ব প্রতিবেদক
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোর্টে থাকতে হয় বিভিন্ন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনী লড়াই করতে। শুধু তাই নয় নিজের কিছু মামলা করেন তারা। দিন শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও ব্যাক্তগত চেম্বারেও সময় দিতেন মামলা মোকাদ্দমা নিয়ে। অংশ নিতেন বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে।
সব কিছুই যেন এলোমেলো। একদম ঘরবন্দী হয়ে সময কাটাতে হচ্ছে। বই পড়ে মামলার ফাইল ঘাটাঘাটির পাশাপাশি টিভি দেখে। কিছুটা চিন্তা ও আতঙ্ক কাজ করছে।
এরকমই বলছিলেন সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত কয়েকজন বিজ্ঞ আইনজীবী, ব্যারিষ্টার ও সরকারি আইন কর্মকর্তা।
এদের মধ্যে অনেকে প্রায় ১০ দিন ধরে ঘরবন্দী। বের হচ্ছন না করেনা ভাইরাস কোভিট-১৯ এর ভয়ে। সচেতন থাকতে। পরিবার পরিজন নিয়ে আছেন সতর্কতার সঙ্গে।
শনিবার দুপুরে এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জনাব খুরশিদ আলম।
তিনি বলেন, গত ১৮ মার্চ কোর্টে গিয়েছিলাম। ১৯ মার্চ থেকে ঘরেই আছি। বের হচ্ছি না। পরিবার পরিজন নিয়ে সময় পার করছি। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস আনুষ্ঠানিক ভাবে পালন করতে পারিনি।
বসায় থাকতে আনইজি লাগছে। একঘেয়েমিও কাজ করছে কিছুটা।
বাসায় বসে সময় পার করছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বই পড়ছি। গৃহের কাজে সময় দিচ্ছি। টিভি দেখছি। মামলার কিছু ফাইল বাসায় নিয়ে এসেছি। সেগুলো নড়াচড়া করেই সময় পার করছি। আসলে কিছু করার নেই। করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী যেভাবে আক্রমণ করেছে তাতে ঘরে বসে থাকাই লাভ। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ঘরে বসে থাকার জন্য বলেছেন। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট ১০দিনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। আগামী ৫ এপ্রিল কোর্টে যাব ইনশাআল্লাহ ।
গৃহে থেকে মনে হচ্ছে বন্দি আছি কোন কারাগারে। যদিও কোনদিন জেলে যাইনি। কিন্তু করোনা ভাইরাস কোভিট-১৯ কে ঘরে বসে মোকাবেলা করতে জেলের কষ্টটা বুঝতে পারছি। টেলিভিশনে দেশের খবরাখবর দেখছি। তবে কোরান তেলাওয়াত ও নামাজ পড়ছি বেশির ভাগ সময়। এমন কথা জানালেন সুপ্রিম কোটের আরেক বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব এবিএম ইলিয়াস কচি।
তিনি বলেন, দুর্বিষহ মনে হচ্ছে। বাইরে না যেতে পেরে ভালো লাগছে না। অলস হয়ে গেছি। শুয়ে বসে সময় কাটছে না। বোরিং লাগছে। সবই করছি করোনা ভাইরাস কোভিট-১৯ থেকে সাবধানে থাকার জন্য। সবাই সচেতন থাকতে হবে।
আশা করছি আর কিছু দিন গেলে সমস্যা অনেক কমে আসবে আল্লার রহমতে।
বই পড়ার ভালো সুযোগ পেয়েছেন মন্তব্য করে ব্যারিষ্টার মুসতাসিম তানজির বলেন, করোনা ভাইরাস কোভিট-১৯ কে কেন্দ্র করে বাসাতেই সময় পার করছি। বই পড়ছি। বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স দেখছি। ঘাটাঘাটি করছি বিভিন্ন আইন নিয়ে। আমার বাসায় লাইব্রেরি আছে। এখানে অনেক বই রেখেছি। আইনের বইসহ অন্যান্য বইও। এই মুহূর্তে আমি আরব জাতির ইতিহাস নামেন একটি বই পড়ছি। সময় পেলেই আমি বই পড়ি। আমার বই পড়ার অভ্যাস অনেক আগে থেকেই।
২১ মার্চ থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না ডেপুটি অ্যাটর্নি শেখ সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, আমি ঘরবন্দী হয়ে আছি। সময কাটছে বই পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের সব কিছুই বন্ধ। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত ১০ বছর ওকালতির পর একজন আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
এই আইনজীবীরা বার কাউন্সিলে তালিকা ভুক্তি লাভের পর দীর্ঘদিন দিন ধরে ওকালতি করছেন। তাদের কর্মজীবনে ব্যস্ততা থাকা স্বাভাবিক। রাষ্ট্রীয় মামলায় আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি অনেক ব্যক্তিগত মামলাতেও সময় দিতে হয়। কিন্তু প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস কোভিট-১৯ থেকে সতর্ক থাকতে সবাই এখন ঘরবন্দী। তবে সামনে সরকারি নিদর্েশনা না আসা পর্যন্ত সকলেই যেন ঘরে থাকে এবং নিরাপদে থাকে এই আশা রাখি।
এপিএস ২৮মার্চ/এআইটি/এসন)