এপিএস আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
উহানের একটি গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, এই দাবি জোরালো করে তুলতে এ বার চিনে মার্কিন দূতাবাসের কর্তাদের সঙ্গে বিদেশ দফতরের আলোচনার একটি গোপন কেব্ল ফাঁস করল আমেরিকা। ২০১৮ সালের ওই গোপন কেব্লে উহানের গবেষণাগারের কর্মীদের দক্ষতা ও এমন ধরনের ভাইরাস নিয়ে কাজের জন্য জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে গত ডিসেম্বরে উহানের বাজার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়ায় বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’)।
উহানের বাজারে বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিন থেকে নয়, উহানের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে এপ্রিল থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে দাবি করা হচ্ছে। মে মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখেও একই কথা শোনা গিয়েছিল। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘আমার কাছে নথিপত্র রয়েছে। আমি নিশ্চিত, উহানের গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছিল। তবে কী ভাবে নিশ্চিত হলাম, সেটা জানাতে পারব না। সেটা আমার উচিতও নয়।’’ একই অভিযোগ করেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োও।
বিদেশ দফতরের ফাঁস করা ওই গোপন কেব্লে দাবি করা হয়েছে, ২০১৮ সালে উহানের ওই গবেষণাগার ঘুরে দেখতে গিয়েছিলেন চিনে মার্কিন দূতাবাসের জনাকয়েক কর্তা। তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখেন, দক্ষ কর্মীর যথেষ্টই অভাব রয়েছে গবেষণাগারে। রয়েছে এমন ধরনের ভাইরাস নিয়ে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থারও অভাব।
সেই গোপন কেব্লে এও অভিযোগ করা হয়েছিল, বাদুড়ের শরীর থেকে পাওয়া সার্সের মতো বিভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করার অনুমতি থাকলেও উহানের গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন ধরনের সার্স করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন।
তবে উহানের গবেষণাগার থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই করোনাভাইরাস বাইরে ছড়ানো হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কিন্তু মানতে চাননি আমেরিকার ভাইরাস বিশেষজ্ঞদেরই একটি অংশ।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি’-র অধিকর্তা ইয়ান লিপকিন বলেছেন, ‘‘এটা ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ছড়ানো হয়েছিল, এমন কোনও নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমার হাতে নেই। কোনও অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে অপরাধী বানিয়ে দেওয়াটা উচিত হবে না। অনুমানটা প্রমাণ করতে হবে।’’
আর উহানের গবেষণাগারে দক্ষ কর্মীর অপ্রতুলতা নিয়ে গোপন কেব্লে যা অভিযোগ করা হয়েছে, তাকেও ততটা গুরুত্ব দিতে রাজি হননি মার্কিন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের হেল্থ ও বায়োসিকিওরিটি বিভাগের অধিকর্তা রব গ্রেনফেল বলেছেন, ‘‘এটা তো পৃথিবীর সব গবেষণাগারেরই সমস্যা। এতে নতুন কিছু দেখছি না।’’
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার অধিকর্তার কার্যালয়ও এই গোপন কেব্লের অভিযোগ ‘সত্য’ বলে স্বীকার করেনি। আবার ‘একেবারেই আজগুবি’ বলে উড়িয়েও দেয়নি।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর হেল্থ সিকিওরিটি’ বিভাগের অধিকর্তা টম ইংলেসবাই বলেছেন, ‘‘গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, এমন দাবি পুরোপুরি মেনে নেওয়ার মতো কিছু ওই গোপন কেব্লে নেই। আবার এমন দাবি উড়িয়েও দেওয়া হয়নি।’’ আনন্দ বাজার