মোঃ আলাউদ্দীন মজুমদার শাহীন,গাইবান্ধা থেকেঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার খাদেমুল ইসলামের দুর্নীতির তদন্ত না হওয়ায় জনমনে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুন উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার খাদেমুলের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মভাতা বিল সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত দাবীর খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এতে নড়েচড়ে বসে যুব উন্নয়ন অফিসার খাদেমুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকরা বেশ সরব হয়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি রহস্যজনক ভাবে আজও তার কোন তদন্ত করা হয়নি। যার কারণে নিচে ভাটা পড়ে গেছে তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী লুতফুল হাসানের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন- ” এই অভিযোগটা ছিল ডিসেম্বর মাসের। যার কারণে তদন্ত করা হয়নি। তদন্ত চাইলে আপনি লিখিত অভিযোগ দেন।” অথচ সেই থেকেই একিই কায়দায় ধারাবাহিকভাবে বিল উত্তোলন করে আসছেন যুব অফিসার খাদেমুল।
দ্বিতীয় ব্যাচের বেকার যুবক আশরাফুল ইসলাম(রোল নং-১৬৭৭) এ প্রতিনিধিকে বলেন,আমি ৩ মাস (অক্টোবর,নভেম্বর ও ডিসেম্বর) এর প্রত্যয়ন না দেয়ায়। আমার ৯ মাসের বিল আটকে দিয়েছে যুব উন্নয়ন অফিস। উল্লেখ্য- সুন্দরগঞ্জে ৫০৩৭ জন শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীর ৬ষ্ঠ পর্যায়ের ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। গেল বছরের ডিসেম্বর মাসের কর্মভাতা বিলে এর মধ্যে ৭০০ জনের নামের স্বাক্ষর ও স্ট্যাম্প ছাড়াই বিল সীটে খাদিমুল ইসলাম স্বাক্ষর করে ট্রেজারী অফিসে জমা দেন। বিল সীটের প্রতিটি পৃষ্ঠায় ২ হতে ৪ চারটি করে নামে কোন স্বাক্ষর ও ষ্ট্যাম্প নেই। অথচ খাদেমুল ইসলাম ১০ টি করে নামের প্রত্যেকটির ৬ হাজার করে মোট ৬০ হাজার করে টাকার স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি হিসেব রক্ষক অফিসারের দৃষ্টিতে পড়লে তিনি সমুদয় বিল আটকে দেন। পরে তদানীন্তন ইউএনও সোলেমান আলীর নির্দেশে রাতের অন্ধকারে যুব উন্নয়ন অফিসার তার স্টাফদের নিয়ে ষ্ট্যাম্প ও নকল স্বাক্ষর দিয়ে বিল সই করান। ৭০০ নামের বিপরীতে ৪২ লক্ষ টাকা যুব উন্নয়ন অফিস একাউন্টে জমা হয়। পরে সুবিধাভোগী বেকার যুব- যুবতীদের যারা ষ্ট্যাম্প ও স্বাক্ষর সই করেছেন কেবল তাদেরই একাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। যাদের নামে তারা ষ্ট্যাম্প ও স্বাক্ষর করেছেন তাদের অনেকেই বিভিন্ন গার্মেন্টস,এনজিও, কোম্পানি,সংস্থা ও সরকারি বেসরকারিসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরিতে কর্মরত। যার কারনে তারা টাকার খোঁজ – খবর রাখেন না।
এছাড়া বাদ পড়াদের মধ্যে কেউ অফিসে যোগাযোগ করলে বলা হয়,আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?প্রত্যয়ন কোথায়? এই বলে বিদায় দেয়া হয়। এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে,যেখানে প্রত্যয়ন ছাড়া স্বাক্ষরেই এ্যালাউ করা হয়না।সেখানে কিভাবে একজনের স্বাক্ষর আরেকজনে দিয়ে বিল পাস করা হলো। আর ৭০০ নামের প্রত্যেকের ৩টি ষ্ট্যাম্পের বিপরীতে ৩০ টাকা করে মোট ২১০০০ টাকা কে দিল।
এনিয়ে তদন্ত করে খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশ হওয়ার পরও তদন্ত হয়নি। যার কারণে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জনসাধারণ প্রত্যেকের দাবী বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা হোক। তা না হলে মানুষের আইন ও প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস হারিয়ে যাবে।