সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
হযরত বেল্লালঃ থামছে না তিস্তার ভাঙন। বৃষ্টির পানি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পুটিমারী, লালচামার গ্রামে হাজারও একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনের মুখে পরে বেসামাল হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। বিশেষ করে কাপাসিয়া, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তানদীর গতিপথ এখন পরিবর্তন হয়েছে। পলি জমে তিস্তার মুলনদী একাধিক শাখা নদীতে রুপ নিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোতের কারণে ভাঙনের ফলে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে।
বর্তমানে তিস্তার চরাঞ্চলে বেগুন, মরিচ, পটল, করলা, শশা, তোষাপাটসহ নানাবিধ ফসলের সমাহার দেখা দিয়েছে। কিন্তু সর্বনাশা তিস্তা সেসব ফসল ঘরে তুলতে দিচ্ছে না। কথা হয় শ্রীপুর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের আব্দুল মতিন মিয়ার সাথে। তিনি বলেন তিস্তার ভাঙনে চরাঞ্চলবাসি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় তীব্র আকারে নদী ভাঙার কথা নয়। অথচ দীর্ঘদিন থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙন চলছে। যার কারণে শ্রীপুর ইউনিয়নের প্রায় হাজারও বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। চরের মানুষ তরিতরকারির আবাদ করে ৬ মাস সংসার চালায়।
কিন্তু এ বছর নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। তিনি আরও বলেন তার এক বিঘা জমির তোষাপাট ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া এক বিঘা জমির বেগুন ক্ষেতের প্রায় বেশিভাগ নদীতে বিলিন হওয়ার পথে। শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান- নদী ড্রেজিং এবং খনন করা ছাড়া নদীভাঙন রোধ করা কোন ক্রমে সম্ভব নয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।গত শুক্রবার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরের ভাঙন কবলিত আবাদি জমি পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা নিবার্হী অফিসার কাজী লুতফুল হাসান জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি তিনি জানেন। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, নদীভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। তবে নদী সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে গত বছর ২ মে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার তিস্তানদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন তিস্তা নদীকে রক্ষা এবং ভাঙন রোধ করতে হলে নদীর গতিপথ একমুখি করতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেছেন। অপরদিকে গত বছর ২০ মার্চ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি কুড়িগ্রাম হতে নৌ-পথে স্প্রিড বোর্ডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং কাপাসিয়া ইউনিয়নের কছিম বাজার খেয়াঘাটে স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন পর্যায়ক্রমে নদী ভাঙনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এপিএস/৭জুন/বেল্লাল/প্রতিনিধি সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।০১৭৫৪-৩২৫৩৮১তারিখঃ ০৭/০৬/২০২০ খ্রিঃ।