রামিম হাসান, ঝিনাইদহ থেকে-
এশিয়ার বৃহত্তম হিসাবে খ্যাত দত্তনগর বীজ ফার্মে এবার আড়াইশো একর জমির ১০লক্ষাধীক টাকার ধানের বিচালী ও খড় গোপনে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে এক উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে। কোন প্রকার কোটেশন,নিলাম, টেন্ডার ছাড়াই বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে এসব বিক্রি করা হয়েছে । এর আগে প্রায় ৩ কোটি টাকার ধানবীজ গোপনে পাচার করার দায়ে ফার্মটির ৪উপ-পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত হয়। এদিকে ধানের বিচালী ও খড় বিক্রি করার ব্যাপারে মথুরা বীজ উৎপাদন খামারের অভিযুক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মজিবর রহমান খান জানিয়েছেন নিজস্ব মেশিনে পানিতে পড়া ধান কাটতে না পারায় ভাড়া মেশিনে ধান কাটার মূল্য পরিশোধ করতে খড়-বিচালী নামাত্র মূল্যে কিছু বিক্রি করা হয়েছে, যা জুনে সমন্বয় করা হবে ।
ঝিনাইদহের মহেশপুরের দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামার এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম হিসাবে খ্যাত । প্রায় ৩হাজার একর জমির উপর এ খামারটিতে ৫টি ফার্ম রয়েছে । কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে এখানে ধান, আলু সহ বিভিন্ন শস্যবীজ উৎপাদন করা হয়। অফিস, বাসভবন সহ বিশাল অবকাঠামো রয়েছে এখানে। একজন যুগ্ম পরিচালক, ৫জন উপ-পরিচালক, ম্যানেজার সহ কর্মচারী রয়েছে এ খামারে। তবে ইতিহাসখ্যাত এ খামারে দুর্ণীতি যেন ক্রমেই আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এখানকার ৪ উপ-পরিচালক প্রায় ৩ কোটি টাকার ধানবীজ গোপনে পাচার করার দায়ে বরখাস্ত হয় । আর এবার ৫টি খামারের একটি মথুরা বীজ খামার থেকে চলতি মৌসুমের আড়াইশো এক জমির ধানের বিচালী ও খড় ৪ হাজার টাকা একর দরে বিক্রি করা হয়েছে স্থানীয়দের কাছে।
স্থানীয়রা বলছে কোনরকম কোটেশন, নোটিশ, টেন্ডার ছাড়াই ইচ্ছামাফিক এসব করা হয়েছে। দত্তনগর ফার্ম এলাকার বসতী মারুফ হোসেন জানান, ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এবার মথুরা ফার্মের উপ-পরিচালক মজিবর রহমান খানের কাছ থেকে বিচালী কিনেছেন তবে ৫হাজার টাকা বাকী থাকায় তাকে হয়রানী করার চেষ্টা করে চলেছে । স্থানীয় আরো কয়েকজন জানিয়েছেন, নানা অনিয়ম চলে আসছে ফার্মে। এতবছর শুনেননি যে খড়-বিচালীও বিক্রি করা হয় তবে এবার সে কান্ডই ঘটেছে। তারা এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ এসব খড়-বিচালী ফার্ম এলাকার মানুষের মধ্যে ফ্রী দেবার কথা। ফার্ম স্থাপনের সময় যাদের জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে তখনই শর্ত ছিল জনস্বার্থে স্থাপিত এ ফার্মে স্থানীয়রা অগ্রাধিকার পাবে, অথচ এর কিছুই মানেন না কর্মকর্তারা
এলাকাবাসী বলছে খড়-বিচালী গরুর খাবার, পানের বরজ, তামাক পোড়ানো সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ ব্যবহার করে । স্থানীয়ভাবে এর বেশ চাহিদা রয়েছে।
এশিয়ার বৃহত্তম খ্যাত দত্তনগর বীজফার্মের মথুরা খামারের উপ-পরিচালক মজিবর রহমান খােেনর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ উঠেছে তিনি নিজে বাসাতে গরু পালন করেন, যা খুবই মোটা তাজা অথচ ফার্মের গরুগুলো রুগ্ন ও মরনাপন্ন অবস্থায় বেঁচে আছে । তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাখে খারাপ আচরনের অভিযোগও উঠেছে। এমনকি সংবাদকর্মীদের সাথেও তিনি কথা বলতে চান না বলে সংবাদকর্মীদের অভিযোগ ।
এদিকে খড়-বিচালী বিক্রি সহ নানা অভিযোগ ওঠা মথুরা বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: মজিবর রহমান খান দাবি করছেন জরুরী ভিত্তিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটতে নিজস্ব মেশিনে সমস্যা হওয়ায় ভাড়া মেশিনে ধান কাটার মূল্য পরিশোধ করতে খড়-বিচালী নামাত্র মূল্যে কিছু বিক্রি করা হয়েছে, আরো বিচালী পড়ে আছে। যা সাধারণ মানুষ ফ্রী নিয়ে যাচ্ছে ।
অন্যদিকে নানা অনিয়মে জর্জরিত মথুরা খামারের পাশ্ববর্তী খামারটির সহকারী পরিচালক মাইনুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের খামার সবচেয়ে নীচু হওয়া স্বত্তেও এবার খামারের ধান নিজস্ব মেশিনেই কেটেছেন এবং কোন খড়-বিচালী বিক্রি করেন নি । এসব বিক্রি করা হয় না
এপিএস/৭জুন/রামিম হাসান, ঝিনাইদহ