বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনার আমতলীতে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার নামে এক ডিলারের বিরুদ্ধে মৃত ব্যক্তি ও কার্ডধারীদের নামে চাল উঠিয়ে আত্মসাৎ করা এবং ওজনে কম দেওয়ারও অভিযোগ ওঠায় তার বিরুদ্ধে স্বত্বঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, ‘মৃত ও কার্ডধারীদের নামে চাল উঠিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ ডিলারের বিরুদ্ধে’ শিরোনামের একটি সংবাদ গত ১৬ মে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সংবাদটি আমলে নিয়ে আমতলী আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাকিব হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১)(সি) ধারার ক্ষমতাবলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু করেছেন।
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডে সরকার ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল বিতরণের জন্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদারকে গরীব, অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণের জন্য ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু তিনি শুরু থেকেই চাল বিতরণে অনিয়ম করে আসছিলেন। জনপ্রতি ৩০ কেজি চালের বিপরীতে তিনি ২২ থেকে ২৫ কেজির বেশি চাল কখনোই দেন না। আবার কেউ ওজনে কম দেওয়ার প্রতিবাদ করলে তার চাল রেখে খালি হাতে পাঠিয়ে দেন এই ডিলার।
এছাড়া অনেক মৃত ব্যক্তি ও বৈধ কার্ডধারী পরিবারকে চাল না দিয়ে তিনি তা আত্মসাৎ করে ভূয়া মাস্টাররোল জমা দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় কার্ডধারী মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়েও তাদের নামে চাল আত্মসাৎ করেন এই ডিলার।
অভিযোগ আছে, ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল বিতরণ তালিকায় নাম থাকা ক্রমিক নং ৩৮৪ ঘোপখালী গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর হাওলাদার, ক্রমিক নং ৩৭৯ মৃত মো. মোনসের আলী হাওলাদার ও ক্রমিক নং ২১২ চরকগাছিয়া গ্রামের মৃত লাল মিয়া মাঝিসহ অসংখ্য মৃত ব্যক্তির চাল তার পরিবারের কাউকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। অপরদিকে, কার্ডধারী ক্রমিক নং ৩৭৮ ঘোপখালী গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার, ক্রমিক নং ৫৪ খলিল গাজী ও ক্রমিক নং ৩১২ নূর মোহাম্মদসহ অনেক কার্ডধারীকে চাল না দিয়ে তিনি নিজেই তা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগকারী আবুল কালাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘তালিকায় নাম থাকা আমার বোন জামাই জাহাঙ্গীর গত এক বছর আগে মারা যায়। সেই থেকে আমার বোন নাজমা বেগম খুবই অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন। যত বার আমার বোন চাল আনতে গেছেন ততবার তাকে চাল না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন ডিলার জাহাঙ্গীর। অথচ জমা দেওয়া মাস্টাররোলে দেখা গেছে মৃত জাহাঙ্গীর চাল উত্তোলন করেছেন। মৃত ব্যক্তির চাল তার পরিবারের কাউকে না দিয়ে তিনি তা আত্মসাৎ করেছেন।’
তালিকায় নাম থাকা নিজাম ও আব্বাস বলেন, ‘ডিলার জাহাঙ্গীর একবার আমাদের চাল দিয়ে আমাদের নামের সুলভ মূল্য কার্ডটি (বই) তিনি রেখে দিয়েছেন। জমা দেওয়া মাস্টাররোলে দেখা গেছে প্রতি মাসে আমাদের তিনি চাল দিয়েছেন। তিনি আমাদের চাল উঠিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।’
সুলভ মূল্য কার্ডে দেখা যায় তালিকায় নাম থাকা মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদের পরিবারকে এক বছর ধরে কোনো চাল দেননি, অথচ তাদের চাল দিয়েছেন মর্মে মাস্টাররোল জমা দিয়েছেন কীভাবে- জানতে চাইলে এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এই ডিলার।
সংবাদটিকে আমলে নিয়ে ডিলার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম-এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করার জন্য আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (স্বয়ং)-কে নির্দেশ দিয়েছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাকিব হোসেন। একইসঙ্গে তদন্তকাজে সহায়তা করার জন্য দৈনিক কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিবেদককেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে সবিস্তার উল্লেখপূর্বক আগামী ৮ জুলাই-এর মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওসি, আমতলীকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রঃ কালের কন্ঠ।
এপিএস/২৩মে/পিটিআই