অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা লোপা
ইংরেজিতে আমরা সবাই কমবেশি পড়েছি..The more you read,the more you learn,সআমরা কোনো কিছুর গভীরে যত বেশি প্রবেশ করতে পারবো তত বেশি জানতে ও শিখতে পারবো। আসলে জ্ঞান অর্জনের কোনো সীমা নেই।।।জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্তও জানার ও শেখার আছে। ইংরেজি Knowledge শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। Know অর্থ জানা এবং Ledge অর্থ বিভিন্ন স্তর। তাহলে জ্ঞান হচ্ছে মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে জানার মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা।।।
জ্ঞান এক কথায় হল পরিচিতি থাকা, কোন কিছু সম্পর্কে বা কারো বিষয়ে জেনে থাকা বা বুঝে থাকা, হতে পারে কোন কিছুর প্রকৃত অবস্থা, তথ্য, বিবরণ বা গুনাবলী সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, যেটি অর্জিত হয়েছে উপলব্ধির মাধ্যমে, অনুসন্ধানের মাধ্যমে বা শিক্ষা গ্রহণের ফলে অভিজ্ঞ হওয়ায় বা পড়াশুনা করে।
জ্ঞান বলতে কোন বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা থাকাকে বুঝায়। এটা বহিঃপ্রকাশ ধরনের হতে পারে (যেমন ব্যবহারিক গুনাবালী সম্পন্ন বা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন) অথবা বহিঃপ্রকাশ ধরনের নাও হতে পারে (যেমন কোনো বিষয়ে শুধু তাত্ত্বিক দিকটি বোঝা); এটা কম বা বেশি ফর্মাল বা নিয়মানুবর্তিতা সম্পন্ন হতে পারে। দর্শনশাস্ত্রের, জ্ঞান নিয়ে যে অংশটি আলোচনা করে তাকে জ্ঞানতত্ত্ব বলে; দার্শনিক প্লেটো জ্ঞানকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংজ্ঞায়িত করেন “প্রমাণিত সত্য বিশ্বাস” বলে।।
প্লেটোর অনেক ডায়ালগে, যেমন মেনো (Meno) এবং বিশেষ করে থিয়েটেটাস (Theaetetus)- এ ‘জ্ঞান কি’ সংক্রান্ত কিছু মত বিবেচনা করেছেন, এবং শেষে এসে বলেছেন,জ্ঞান হচ্ছে সত্য বিশ্বাস যা কিছু উপায়ে পরীক্ষিত অথবা স্থিরীকৃত অর্থের একটা হিসাব।জ্ঞান হচ্ছে যাচাইকৃত সত্য বিশ্বাস (Justified true belief) – এই তত্ত্ব অনুসারে, প্রদত্ত বচন সত্য, কিন্তু এই প্রাসঙ্গিক সত্য বচনকে কেবল বিশ্বাস করা হবে না, একে বিশ্বাস করার মতো ভালো যুক্তিও থাকতে হবে। এর একটি নিহিতার্থ এই যে, কোনো ব্যক্তি যেটা সত্য হিসেবে ঘটবে তা বিশ্বাস করা দ্বারা কেবল জ্ঞান অর্জন করতে পারে না।
উদাহরণ স্বরূপঃএকজন রোগা লোক, যার কোন ডাক্তারি প্রশিক্ষণ নেই কিন্তু সাধারণভাবে একটি আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আছে, বিশ্বাস করতে পারে যে, সে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে। তার এই বিশ্বাস যদি সত্যে পরিণত হয়, তবু বলা যাবে না- রোগী নিশ্চিত করে ‘জানতো’ সে সুস্থ হবে। কেননা এটি ছিলো রোগীর যাচাইশূন্য বিশ্বাস (Belief lacked justification)।
যা হোক,জ্ঞান কেবল অর্জন করলেই হয় না ইহার স্থানান্তর ও যথাযথ প্রয়োগও অত্যাবশ্যক।
এক্ষেত্রে প্রতীকী উপস্থাপনাকে জ্ঞান স্থানান্তরের এক অধ্যাস প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা যেতে পারে।
জ্ঞান আদান-প্রদানের অন্যান্য রূপ হতে পারে পর্যবেক্ষণ এবং অনুকরণ,মৌখিক বিনিময় এবং অডিও কিংবা ভিডিও রেকর্ডিং।ভাষাবিদ্যা এবং Sign Language দার্শনিকরা জ্ঞান স্থানান্তর বা আদান-প্রদানের তত্ত্ব নির্মাণ এবং বিশ্লেষণ করেন।
অনেকে সম্মত হবে যে, জ্ঞান হস্তান্তরের জন্য সবচেয়ে সার্বজনীন এবং উল্লেখযোগ্য সরঞ্জাম হল পড়া (বিভিন্ন ধরনের)ও লেখা ।
মিডিয়া তত্ত্ববিদ, যেমন অ্যান্ড্রু রবিনসন জোর দেন চাক্ষুষ জ্ঞান বিবরনের উপর, আধুনিক বিশ্বে যা মৌখিক জ্ঞানের চেয়ে প্রায়শই ‘অধিক সত্য’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের ঐতিহ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশ্লেষণমূলক জ্ঞান ধারণায় আঘাত করে, যেখানে মৌখিক জ্ঞান প্রচার সাধারণ ভাবে হারিয়ে যাচ্ছিল লিখিত জ্ঞান প্রচারের মিথ্যা বিস্তারে। কী বলা হয়েছে তার প্রমাণ বা কে প্রকৃতপক্ষে বলেছে তা সংরক্ষণ করা কঠিন।সাধারণত এসব তথ্যের উৎস কিংবা বিষয়বস্তু যে কোনটাই যাচাই করা সম্ভব হয় না। উদাহারণস্বরূপঃপরচর্চা এবং গুজব উভয়ই মিডিয়াতে প্রচারিত হয়। জ্ঞানের ব্যপ্তিতে লেখার মূল্যমান এখন মানুষের কাছে অনেক বেশি এবং সময় ও স্থান থেকে আলাদা এক টুকরা লেখায় থাকা জ্ঞান অর্জনে তাই মানুষ আজও আগ্রহী।
ইসলামে জ্ঞানকে (আরবি: علم, ইলম) বিবেচনা করা হয় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হিসাবে। “মহাজ্ঞানী” (আল-ʿআলিম) হল কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর ৯৯টি নামের একটি। কুরআন অনুসারে ধর্মীয় জ্ঞান প্রাপ্তি সম্ভব হয় আল্লাহর বাণী থেকে এবং বিভিন্ন হাদিসে জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।পবিত্র কোরআন শরীফে জ্ঞান-চর্চার উপর তাগিদ দেয়া হয়েছে ৯২ জায়গায়।নবী করীম(সঃ)এর প্রতি মহান রাব্বুল আলামীনের প্রথম আদেশই হল (ইক্বরা) অর্থাৎ পড়। মহান আল্লাহ তায়ালা “সুরা আলাক” এ এরশাদ করেন——–
“পাঠ কর,তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি (সকল কিছু) সৃষ্টি করেছেন তিনি মানুষকে ঘনীভূত রক্ত হতে সৃষ্টি করেছেন পাঠ কর,আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।”
জানা যায় যে মুহাম্মদ (সঃ)বলেছিলেন “দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর”এবং তিনি আরও বলেছিলেন “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয”।ইসলামিক পণ্ডিতগণ, ইসলামিক বিশ্লেষক এবং কাজীগণকে প্রায়শই ডাকা হয় আলিম বলে,যার অর্থ “জ্ঞানী”।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে
♣There is no alternative to reading..♣
যত বেশি পড়া যায় তত বেশি জ্ঞান অর্জন করা যায়।।।জ্ঞান অর্জন আমাদের অন্ধকার জগৎ ও অজ্ঞতা থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে।।
জ্ঞান আর অজ্ঞতার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো
অজ্ঞতা পশুর সমতুল্য।।।
বস্তুত জ্ঞান হল মানুষের জীবন চলার পথে আলো। আলো ছাড়া যেমন কেউ পথ চলতে পারে না, তেমনি জ্ঞান ছাড়াও প্রকৃত মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করা যায় না।জ্ঞান অর্জন ছাড়া অজ্ঞতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।
শিখা পত্রিকার একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি দিয়ে ইতি টানতে চাই…জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ,বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট,মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
লেখকঃ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী।