সব
facebook apsnews24.com
গাজায় সৈন্য পাঠাতে এরদোয়ানকে চাপ, বাস্তবতা ও আশার কথা - APSNews24.Com

গাজায় সৈন্য পাঠাতে এরদোয়ানকে চাপ, বাস্তবতা ও আশার কথা

গাজায় সৈন্য পাঠাতে এরদোয়ানকে চাপ, বাস্তবতা ও আশার কথা

গাজায় সৈন্য পাঠাতে বা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে সরাসরি সাময়িক সহায়তা দিতে এরদোয়ান সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে সে দেশের কট্টরপন্থী মুসলিম ও ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের একটি অংশ। অনেক তুর্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার চাইলে গাজায় গিয়ে যুদ্ধ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে! তারা বলছে আর চুপ থাকা যায় না। আমাদের সীমিত সামর্থ্য আর ভয়াবহ পরিণতির কথা মাথায় রেখেই ফিলিস্তিনি মজলুমদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তবে কট্টরবাদীদের এমন প্রস্তাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে সাধারণ তুর্কিদের মধ্যে। অনেকেই বোঝাতে চাচ্ছেন এটা সম্ভব না। প্রধান বিরোধী গোষ্ঠী যারা দেশটির জাতির পিতা কামাল আতাতুর্কের আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদের কোনো মতামত আমার চোখে পড়েনি এ বিষয়ে।

ইসরায়েল নামক সন্ত্রাসের হিংস্র থাবার নখরে গাজা আবার রক্তাক্ত বধ্যভূমি। সেখানে মানবতা কাঁদছে আর কথিত সভ্য ও মানবাধিকারের ধ্বজাধারী পশ্চিমারা তামাশা দেখছে। পশ্চিমাদের এই নির্লিপ্ততা সারাবিশ্বের সাধারণ মুসলমানের মনে আরও বেশি আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। যেমনটা হচ্ছে তুর্কিদের বেলায়ও। ফলে তুর্কিরা গাজার যুদ্ধে সশরীরে অংশ নিতে চায়, তারা চায় এরদোয়ান সরকার গাজায় গিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করুক।

কিন্তু কথা হচ্ছে, তুরস্ক কি গাজায় সামরিক সহায়তা দেয়ার মতো ঝুঁকি নেবে? বা দেয়ার সামর্থ্য কি তাদের আছে? এমনিতেই দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটা টালমাটাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

তুরস্ক এমন কিছু করতে চাইলে পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা এবেলা কী হবে! দেখা যাবে শেয়ালের মতো হুক্কাহুয়া শুরু করেছে তখন। তুর্কি-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হলে কে দাঁড়াবে রাষ্ট্রটির পাশে? ইরানকে আমার কাছে একটা কাগুজে বাঘ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। বড় বড় কথা বলা, আর হুমকি-ধমকি দেয়ার বাইরে ইরানি নেতাদের আর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়া দায়। বাগাড়ম্বরের বাইরে ইসরায়েলকে মোকাবেলায় তাদের সামর্থ্য বা সদিচ্ছার কোনোটা আছে বলা কঠিন।

আর গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন প্রতিরোধে সরাসরি জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে তুরস্ককে সিরিয়ায় তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনায় নিতে হবে। সিরিয়ার যুদ্ধে তুরস্ককে নামিয়ে দিয়ে পেছন থেকে সরে গিয়েছিল পশ্চিমা ও আরব দেশগুলো। শুধু পাশে ছিল এক কাতার। এরদোয়ান একাই নিঃসঙ্গ শেরপার মতো লড়াই করেছিল চীন-রাশিয়া ও ইরান অক্ষের বিরুদ্ধে। যে ইসরায়েল ইরানের চিরশত্রু তারাও কিন্তু তুরস্কের সহায়তায় সে সময় এগিয়ে আসেনি। আসলে পশ্চিমা বিশ্ব রং দেখছিল- সিরিয়ার মতো তুর্কি সীমান্তের ভেতরেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ুক। ওই অঞ্চলের একমাত্র স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে তুরস্কের পতন মানে ছিল মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা শাসনের এক খোলা লাইসেন্স।

সেটা হয়নি আঞ্চলিক রাজনীতির হিসাব নিকাশ এবং এরদোয়ান ও পুতিনের পারস্পরিক সমঝোতার কারণে। তারা একে অপরের শত্রু। কিন্তু কেউই চায় না এ অঞ্চলে অভিন্ন শত্রু পশ্চিমা শক্তির প্রভাব বড়ুক। এই একই বিবেচনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর টালমাটাল সময়ে তুরস্ককে যখন খণ্ডবিখণ্ড করতে মরিয়া পশ্চিমা শক্তি, তখন চিরশত্রু দেশটির প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল রাশিয়া। রাশিয়া সেবার চায়নি তুরস্ক খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যুদ্ধটা তার উঠোনে এসে আছড়ে পড়ুক। এখনো চায় না। ফলে সিরিয়া যুদ্ধ থেকে পশ্চিমারা নির্বাসনে গেছে। আর খেলা ও সমঝোতায় তুরস্ক ও রাশিয়া লাভের গুড় ঘরে তুলেছে।

ফিলিস্তিন বা গাজা প্রসঙ্গটা আমার কাছে ভিন্ন মনে হয়। এখানে প্রকাশ্য সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেয়া মানে একরকম খ্রিস্টানশাসিত পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। পুরো দুনিয়ার মুসিলম ও মুসলিম দেশের শাসকেরা এক হলেও তাদের সে যুদ্ধ জয়ের সামর্থ্য আছে বলে মনে হয় না। মুসলিমদের সে নৈতিক শক্তি আছে কি-না সেটাও বিবেচনায় রাখা দরকার। আরব কোনো দেশ কি পশ্চিমা চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে যুদ্ধ তো দূরের কথা, ২/৪টা কথা বলার সাহস রাখে? তাহলে ইসরায়েলের এই চলমান হত্যাযজ্ঞই কি ফিলিস্তিনের অপরিবর্তনীয় নিয়তি? উত্তর হচ্ছে- না।

জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকার পরও প্রতিবাদ জারি রাখতে হয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। নয়া ফ্যাসিবাদকে উপড়ে ফেলার কথা বলতে হয়। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। যা দীর্ঘ বছর ধরে করে আসছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র মুক্তি আন্দোলন হামাস। পুরো বিশ্বশক্তি বিরুদ্ধে পুচকে হামাসের এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া আর বছরের পর বছর টিকে থাকাটা প্রমাণ করে কোন কিছুই অজেয় নয়।

অত্যাধুনিক ইসরায়েলি বিমান-বোমা আর বন্দুক হামলার সামনে হামাসের সামান্য রকেট বা ফিলিস্তিনি তরুণের গুলতি ছোড়ার অদম্য সাহস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় একদিন বন্দুকের নল উল্টোদিকে ঘুরে যাবে। আজ বা কাল জয় হবে মজলুমের। বাইতুল আকসা সেদিন প্রাণ খুলে হাসবে।

লেখকঃ সরোজ মেহেদী ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।

আপনার মতামত লিখুন :

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

ইরান-ইসরায়েল সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে কি

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন ভোগান্তি ও যাত্রীদের শোচনীয় অবস্থা

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

রাশিয়ার মস্কো হামলার ঘটনা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ঘটেছে

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের এক কমান্ডার বললেন গাজা যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী হামলায় নিহত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ড. ইউনুস ইস্যুতে যা বললো

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj