গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। ১৬ শিশুসহ হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত সোমবার থেকে দখলদার ইসরায়েলি জঙ্গি-বিমানগুলো গাজার বিভিন্ন এলাকায় অব্যাহত বোমাবর্ষণে এ হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ইসলামী জিহাদের তিনজন প্রতিরোধ যোদ্ধা রয়েছেন।
এদিকে, ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ বুধবার (১২ মে) জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের ছয় জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এশকেলন শহরে দুইজন, তেল আবিবের রিশন এলাকায় একজন প্রাণ হারিয়েছে। ট্যাংক বিধ্বংসী রকেটের হামলায় একজন নিহত হয়েছে বলেও পত্রিকাটি জানিয়েছে, তবে কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে তা উল্লেখ করেনি।
গাজায় হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি কেবল শুরু। আমরা তাদের এমনভাবে আঘাত করব, যা তারা স্বপ্নেও ভাবেনি। আমরা সামরিক অভিযানের মধ্যবর্তী অবস্থায় রয়েছি। হামাস ও ইসলামী জিহাদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা অরাজকতা বন্ধ করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ইসরায়েলের শহরগুলোতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঠেলে সাজানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও নির্মমভাবে ও নৃশংস উপায়ে সমস্ত বাহিনী দিয়ে এই অরাজকতা বন্ধ করা হবে।’
তবে গাজা জানিয়েছে, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত থাকবে, তারা কোনোভাবেই পিছু হটবে না। গাজা থেকে ইসরায়েলে এক হাজার ৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে।
গত সোমবার থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বুধবারও (১২ মে) হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে সেখানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এমন অবস্থায় অবিলম্বে ফিলিস্তিনে সব ধরনের দমনমূলক কার্যক্রম থেকে সরে আসতে আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। আর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বিরত থাকতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার কঠোর নিন্দা এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন পুর্নব্যক্ত করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। সম্প্রতি তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওআইসি ফিলিস্তিনী জনগণের ওপর ইসরায়েলি দখলদারি কর্তৃপক্ষের বারংবার হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে। একইসঙ্গে সংস্থাটি ফিলিস্তিনী জনগণকে তার ভূমি থেকে উচ্ছেদ, জোর করে তাদের জমি দখল এবং ইহুদি বসতি নির্মাণেরও নিন্দা জানাচ্ছে।
গত শুক্রবার থেকে আল আকসা মসজিদকে ঘিরে উভয়পক্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। মূলত এ থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। আল আকসা প্রাঙ্গণে গত কয়েক দিনে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩শ’রও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ জেলা থেকে ৭০টির বেশি ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তা নিয়েই সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা শুরু হয়। সোমবার ভোরে আবারও ইসরায়েলি বাহিনী আল আকসায় ঢুকে পড়ে। সেখানে তারা ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও বোমা ছুঁড়েছে। এতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।
ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের একটি সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছিলো ইসরায়েলি আদালত। এর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টে আপিল শুনানিকে সামনে রেখে দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে রোববার ওই মামলার শুনানি পিছিয়ে গেছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নতুন তারিখ দেওয়া হবে।
এদিকে সৌদি আরব ইসরায়েলের এ হামলাকে নির্মম হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এর পরই ওআইসি ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
পবিত্র নগরী মক্কায় মঙ্গলবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেভলাত কাভুসগুলুর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।