সব
facebook apsnews24.com
সুখাধিকার (Right of Easement) এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা - APSNews24.Com

সুখাধিকার (Right of Easement) এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সুখাধিকার (Right of Easement) এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান

সুখাধিকারের ইতিহাসঃ

মানুষ যখন সমাজবদ্ধ হয়ে একে অপরের প্রতিবেশী হয়ে বা এক অপরের অধিকারকে মেনে নিয়ে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করতে শুরু করল ও অভ্যস্ত হল তখন থেকেই সুখাধিকার বা Right of Easement এর উদ্ভব হয়। স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অধিকারের প্রয়োজনীয় ফলশ্রুতি হলো সুখাধিকার বা Right of Easement. মানুষ যখনই এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলো যে, ব্যক্তিকে সম্পত্তির পূর্ণ মালিকানা দেওয়া আবশ্যক, প্রায় তখন থেকেই অথবা তার অব্যবহিত পরই এই ন্যায়নীতি স্বীকৃতি লাভ করল যে, ব্যক্তি বিশেষের সম্পত্তি ভোগের পশ্চাতে সর্বজনের কল্যাণের ব্যাপারটি রয়েছে এবং তার প্রতিবেশী যাতে তার সম্পত্তি নির্বিঘ্নে নির্বিবাদে শান্তিতে উপভোগ করতে পারেন তাও তার দেখা আবশ্যক।এই সম্মান প্রদর্শক নীতির উপরই সুখাধিকার নামক অধিকার প্রতিষ্ঠিত।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অধিকারের স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় ফল হলো সুখাধিকার বা Right of Easement. সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সুখাধিকারের ধারনা বিকাশ লাভ করেছে। যদি দুটি বাড়ি পাশাপাশি অবস্থিত থাকে তাহলে অনেক সময় সুখাধিকার প্রয়োগ করার আবশ্যকতা পরিদৃষ্ট হতে পারে। এই কারনে যে, তাতে উভয় বাড়ির মানুষের হিতকর উপভোগ (Beneficial enjoyment) সুনিশ্চিত হয়।ভারতে হিন্দু শাসনামলে ও পরে মুসলমান শাসনামলে কোন না কোন আকারে সুখাধিকার স্বীকৃত হত। নর্দমা,কুয়া,জানালা,সেচকার্য নির্বাহের জল,অন্যের চত্তরে জল নিক্ষেপ ইত্যাদি সংক্রান্ত অধিকার ইহার উজ্জল দৃষ্টান্ত। ভারতে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর ইংল্যান্ডের নীতি সমূহের দ্বারা আইনের এই শাখাটি আরও শক্ত সামর্থ্য ও পরিপুষ্ট হয়েছে।

সর্বপ্রথম যে আইন সুখাধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে তাহলো তামাদি আইন ১৮৭১ (অর্থাৎ ১৮৭১ সালের নং আইন) কিছুদিন পরই এর স্থলে ১৮৭৭ সালের ১৫ নং আইন প্রবর্তিত হয় এরপর  সুখাধিকারের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং সুখাধিকার আইন,১৮৮২ প্রণীত হয় আইনটি সুখাধিকার (Easement) অনুমতি (License) সম্পর্কিত আইন পুরাতন আইনের অবসান ঘটাইনি ইহা শুধু তামাদি আইন ১৮৭৭ এর ২৬ ২৭ ধারাকে এবং সুখাধিকারেরর সভ্যতা থেকে নিরসিত করে

সুখাধিকারের সংজ্ঞাঃ

১৮৮২ সালের Easement বা সুখাধিকার আইনে সুখাধিকারের নিম্নরুপ সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে

সুখাধিকার হলো এমন অধিকার যা কোন জমির মালিকের বা দখলকারীর উক্ত জমির হিতকর উপভোগের জন্য থাকে এবং যে অধিকারবলে তিনি এমন কিছু করতে বা করতে থাকতে পারেন অথবা এমন কিছুকে বাধা দিতে বা দিতে থাকতে পারেন যা তার নিজের নহে এরুপ অন্য কোন জমির মধ্যে উপরে বা সম্পর্কে করা হচ্ছে।“

প্রধান অধিকার মালিক এবং পশ্চাৎ অধিকার মালিকঃ

যে জমির হিতকর উপভোগের জন্য অধিকারটি বিদ্যমান উহাকে প্রধান অধিকার এবং উহার মালিক বা দখলদারকে প্রধান মালিক বলা হয়; যে জমির অধিকারটি প্রয়োগ করা হয় উহাতে পশ্চাৎ অধিকার এবং উহার মালিক বা দখলকারকে পশ্চাৎ মালিক বলা হয়। সাধারনত কোন ব্যক্তি তার নিজ সম্পত্তির সর্বময় কর্তা। কোন ব্যক্তি তার নিজের সম্পত্তির উপর যে অধিকার থাকবে,তার প্রতিবেশীরও তার নিজের সম্পত্তির উপর সেই অধিকার থাকবে অর্থাৎ বলা যায় যে, কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর সম্পত্তি উপভোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করার কোন অধিকার নেই। ক  তার জমির উপর একটি কাঠামো (স্ট্র্যাকচার)গড়ে তুলতে পারেন; তিনি উহার উপর গর্ত খুঁড়তে পারেন;কিন্তু তিনি খ কে তার জমির উপর কাঠামো গড়ে তুলতে বাধা দিতে পারেন না। তবে লক্ষণীয় যে,সুখাধিকার আইন সাধারন মালিকানা অধিকারের সাথে আরও কয়েকটি অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়,যে অধিকার তার প্রতিবেশীর সম্পত্তির উপর প্রয়োগ করা যায়। উদাহরণস্বরুপ, কোন ব্যক্তি তার জমির সাথে সংলগ্ন তার প্রতিবেশীর জমি হতে তার নিজের বাড়ির জানালা দিয়ে মুক্ত আলো বাতাস পাওয়ার অধিকারী। অনুরুপভাবে,কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর জমির উপর দিয়ে নিজ জমিতে যাওয়ার অধিকার থাকতে পারে।

সুখাধিকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

সুখাধিকার আইনের ধারার সংজ্ঞামতে সুখাধিকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরুপঃ

() কোন এক খন্ড জমির একজন মালিক বা দখলদার থাকবেন

() এই মালিক বা দখলকারীর অধিকার থাকবে (এরুপ মালিক বা দখলকারী হিসেবে) কোন কিছু করতে বা করতে থাকতে কিংবা কোন কিছুকে বাধা দিতে বা বাধা দিতে থাকতে যা অন্য কোন জমির মধ্যে,উপরে বা সম্পর্কে কৃত হচ্ছে

() এই অধিকার তার জমির হিতকর উপভোগের জন্য

() অন্য যে জমির মধ্যে বা উপরে এই অধিকার প্রয়োগ করা যেতে পারে,তার মালিকানা তাতে থাকবে না,অন্য কারও থাকবে

ভোগদখলজনিত স্বত্বঃ

কিছুকাল অব্যাহতভাবে ভোগদখলের ফলে প্রাপ্ত অধিকার হতে সুখাধিকারের উদ্ভব সুখাধিকার আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে,ভোগদখলী স্বত্ব হতে সুখাধিকার আসে এভাবে সুখাধিকার অর্জন করতে হলে উপভোগের কাল ২০ বছর হতে হবে সরকারের বিরুদ্ধে এই অধিকার পেতে হলে উপভোগকাল ৬০ বছর হতে হবে ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের (),২৬ ২৭ ধারায় সুখাধিকারের সংজ্ঞা উহা অর্জনের উপায় সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু এই আইনের ২৯() ধারায় বলা হয়েছে যে, যে সকল এলাকায় ১৮৮২ সালের সুখাধিকার আইনের আওতা আপাতত সম্প্রসারিত করা হবে;সেই সকল এলাকা হতে উদ্ভূত মামলার ক্ষেত্রে আইনের ২৬ ২৭ ধারা এবং ধারায় বর্ণিত সুখাধিকার এবং সংজ্ঞা  প্রযোজ্য হবে না

সুখাধিকার অর্জনঃ

সুখাধিকার আইনের ১৫ হতে ১৯ ধারায় সুখাধিকার অর্জনের উপায়সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে নিম্নে উহাদের বিবরণ দেওয়া হলঃ

() ব্যক্ত প্রদান করা (By express grant)

() অব্যক্ত প্রদান বা স্বত্ব সংরক্ষনের মাধ্যমে (BY implied grant or reservation)

() অনুমতি প্রদান বা ব্যবহার স্বত্ব দ্বারা (BY Presumed grant or prescription)

() প্রথা বলে (By virtue of custom)

() আইনের বিধান দ্বারা (By statutory provision)

() বাদবন্ধ দ্বারা (By estoppel)

সুখাধিকারের অবসান (Termination of Easement):

নিম্নলিখিত উপায়ে সুখাধিকারের অবসান ঘটতে পারেঃ

() দায়গ্রস্ত মালিকের অধিকারের অবসান দ্বারা (By dissolution of right of the serviont owner) ধারা৩৭

() মুক্তি দ্বারা (By release) ধারা৩৮

() সংহরন দ্বারা (By revocation) ধারা৩৯

() সীমাবদ্ধ সময় অতিক্রান্ত হলে (On expiration to limited period) ধারা৪০

() প্রয়োজন ফুরালে (On termination of necessity) ধারা৪১

() অকার্যকর হয়ে গেলে (When useless) ধারা৪২

() সুবিধাভোগী জমি স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হলে (By permanent change in dominant heritage) ধারা৪৩

() উচ্চতর শক্তি দ্বারা দায়গ্রস্ত জমির স্থায়ী পরিবর্তন সাধিত হলে (On permanent alteration of serviont heritage by superior force) ধারা৪৪

() যে কোন স্থাবর সম্পত্তি ধ্বংস প্রাপ্ত হলে (By destruction of either heritage) ধারা৪৫

(১০) মালিকানা একত্রিত হলে (By unity of ownership) ধারা৪৬

(১১) ভোগ করা না হলে (By non-enjoyment) ধারা-৪৭

লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান

কলামিস্ট আইনজীবী,

ইমেইল:mizanmpur06@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj