আজাহার ইসলাম, ইবি প্রতিনিধি :
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) এলাকা থেকে শাহরিয়ার নাফিস হিমেল (১৫) নামে এক কিশোর চোরকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার পিতা পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া এলাকার চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ মন্ডলের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ‘অপরাধীর বয়স খুবই অল্প (১৫) হওয়ায় আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। তবে পরবর্তীতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ না করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে ঘটনায় অভিযুক্ত অন্যান্যদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বেড়িয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। সাথে উঠে এসেছে তাদের ‘কিশোর গ্যাং’ এর গল্প। তবে গ্যাং এর পরিচালনায় কতিপয় পেশাদার প্রাপ্তবয়স্ক চোরদেরও নাম শোনা গেছে আটক হওয়া হিমেলের মুখে। যাদের পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই চুরি প্রথমবারের মতো নয় বলেও জানায় ওই কিশোর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে ভ্যানে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের পাশে রাখা নির্মাণ সামগ্রী চুরি করতে আসে হিমেল। পরে ভবনের দায়িত্বরত আনসার সদস্য তাকে দেখতেই সে ভ্যানচালককে রেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে।
তবে আনসার মোহাম্মদ দাউদ তার পিছু নিয়ে একপর্যায়ে তাকে ধরে ফেলেন। পরে সেখান থেকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি ও আনসার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে চুরির কথা স্বীকার করে হিমেল।
এছাড়াও কয়েকমাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল থেকে সাবমারসিবল পাম্প চুরিতে সংশ্লিষ্টতা এবং কিছুদিন আগে একই ভবনের পাশ থেকে দুই ভ্যান টাইলস ও আট কার্টন ক্যাবল চুরি করার কথাও স্বীকার করে অভিযুক্ত ওই কিশোর। তবে এসব কাজে সে একা নয় বরং তাদের ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে মুখ খুলে হিমেল।
এসময় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী তোজামের ভাগ্নে সাব্বির হোসেন, শৈলকুপার সাতগাছী এলাকার সাগর আলী, পদমদী গ্রামের জবার আলীর ছেলে তরিকুল, একই গ্রামের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝালমুড়ি বিক্রেতা জামালসহ রঞ্জু মিয়া, আকাশ ও সুমনের নাম বলেন। তবে এদের মধ্যে সাগরের শৈলকুপা উপজেলায় ভাঙ্গারির দোকান রয়েছে বলেও জানায় হিমেল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চুরি করার অধিকাংশ মালামাল এই সাগরের দোকানে বিক্রি কর হয়।
হিমেল জানায়, প্রথম ঘাস কাটা ও কাগজ কুড়ানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সে। তখন থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মালামালের সন্ধান করতে করতে নিয়মিত তার সহপাঠীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতো। তাছাড়া তার সহপাঠী সাব্বিরের মামা বিশ^বিদ্যালয়ে চাকরি করার সুবাদে এবং সাগর শেখ রাসেল হলে কাজ করায় খুব সহজেই এসবের খোঁজখবর রাখত ওরা।
পরে সারাদিনের অনুসন্ধান শেষে রাতের বেলায় সুযোগ পেয়ে ভ্যান নিয়ে মালামাল ভর্তি করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতো তারা। তবে চুরির এ মালামাল বিশ^বিদ্যালয়ের থানা গেট, লালন শাহ ও বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেট দিয়ে বের করতো বলে জানা যায়। কেননা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ গেইটগুলোতে কোন নিরাপত্তা কর্মী নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কিশোর হিমেলকে আটক করার পর থানায় প্রেরণ করা হয়েছিল। আর এসব ঘটনা রোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হবে।’