একদিকে দেশ হারানোর যন্ত্রণা, আরেক দিকে প্রেমিকাকে হারানোর ভয়। ১৩ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করা আবদুল্লাহ আহমেদ নামের এক রোহিঙ্গা তরুণ এভাবে হাহাকার করছেন সাত-সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে।
আবদুল্লাহর বাগ্দত্তা ওমি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আরো অনেকের মতো আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরে। এখানে এসে আইনগত বাধার কারণে চারবার চেষ্টা করেও আবদুল্লাহকে বিয়ে করতে পারেননি ওমি। এখন তার দিন পার হয় চোখের জলে ভেসে।
আবদুল্লাহ অস্ট্রেলিয়ায় করোনাযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মহামারীর দিনগুলোতে একটি হাসপাতালে কাজ করার সময় মানুষের বাড়ি-বাড়ি ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন। সেই তিনি এখন নিজের হবু স্ত্রীকে দেশটিতে নিতে পারছেন না।
ফার্মাসিস্ট আবদুল্লাহ ২০ বছর বয়সে ২০০৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া যান। ভর্তি হন সিডনির মেনাই হাই স্কুলে। অস্ট্রেলিয়ানরা তাকে দূরে ঠেলে দেয়নি। বেশ কয়েক জন মানুষের সাহায্যে লেখাপড়াটা শেষ করতে পারেন।
সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই অনুভূতি জীবনের সেরা পাওয়া। এই দেশ আমার স্বপ্নকে সত্যি করতে পাশে ছিল।’
‘করোনার সময় আমার মনে হয়েছে এখনই প্রতিদান দিতে হবে। অসংখ্য কভিড-১৯ টেস্ট করিয়েছি আমি। আমার নাক-গলা শেষ করেছি মাস্ক পরতে পরতে। তবু এখানকার মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করে গেছি।’
আবদুল্লাহর হবু স্ত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের বিস্তারিত পরিচয় দিতে চাননি। জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে চেষ্টা করছেন অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার। কদিন আগে শুনেছেন, অন্যদের সঙ্গে তাকেও ভাসানচর নেয়া হবে।
‘আমি তাকে হারানোর ভয়ে আছি,’ বাধ্য হয়ে প্রিয়জনকে দূরে রাখা আবদুল্লাহ বলেন, ‘ওমি ভয় আর উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয়া করোনার কারণে সব ধরনের অভিবাসন স্থগিত রেখেছে। কিন্তু এর আগেও ওমি ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আর এখন আটকা পড়েছেন করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের বেড়াজালে।
আবদুল্লাহ প্রায়ই হাসপাতালে থাকেন। সুযোগ পেলেই হবু স্ত্রীকে আনার দরখাস্ত লেখেন। আবার মনের কষ্টে ছিঁড়ে ফেলেন! কষ্ট ভুলতে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে ওমিকে ফোন করেন। কখনো কখনো ইংরেজি শেখান।
আবদুল্লাহ অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয়েছে, ওমি তার স্ত্রী না হওয়ায় এই মুহূর্তে আনা সম্ভব নয়।
আবদুল্লাহ’র মতো করোনাযোদ্ধার কথা ভেবে বিশেষ ব্যবস্থায় ওমিকে নেয়া যায় কি না, এমন দাবিও উঠেছে দেশটিতে। তবে প্রশাসন কোনো সাড়া দিচ্ছে না।