ভারতে বিতর্কিত ৩টি কৃষি আইনের বৈধতা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ফলে এ নিয়ে যতদিন পর্যন্ত পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসছে তত দিন আইনগুলো কার্যকর করা যাবে না।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ভারতের তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন স্থগিত রাখার জন্য সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে দেশটির শীর্ষ আদালত।
এবার আইন তিনটির বৈধতা খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়া ছাড়া পথ নেই, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত একটি বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়া। আইন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের। কিন্তু অনির্দিষ্ট কালের জন্য আইন স্থগিত রাখা যায় না। কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত একটি বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়া, যাতে বিষয়টি সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা মেলে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরোধিতা করে আদালতে যে সব পিটিশন জমা পড়েছিল, মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় তার শুনানি শুরু হয়।
সেখানে আদালত বলে, ‘এর সঙ্গে জীবন ও মৃত্যু জড়িয়ে। আইন তিনটি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন আমরা। একটানা আন্দোলনের জেরে মানুষের জীবনযাত্রা এবং সম্পত্তির ওপরও প্রভাব পড়েছে। যতটা ভালো ভাবে সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা।’
শুনানিতে বিচারকেরা আরও জানিয়েছে, আইনের বৈধতার নিয়ে যেমন উদ্বিগ্ন তারা, তেমনই মানুষের জীবন এবং সম্পত্তি রক্ষার দায়ও রয়েছে, একটানা আন্দোলনের প্রভাব যার ওপর পড়েছে।
কোনও আইন স্থগিত রাখার ক্ষমতাও তাদের হাতে রয়েছে বলে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে। তবে আইনের বৈধতা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষ কমিটি গড়তে পারে আদালত, যেখানে নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন কৃষকেরা।
বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে পুরো বিষয়টি সামলাচ্ছে, তাতে সুপ্রিম কোর্ট যে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ সোমবার বিচারপতিরা সেটাও গোপন করেননি।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কৃষক আন্দোলনের নিষ্পত্তি করার জন্য আরও সময় চাওয়া হলে ভারতের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের আদৌ মনে হচ্ছে না সরকার ঠিকমতো বিষয়টা সামলাতে পারছে। এখন কৃষক আন্দোলনকে ঘিরে রক্ত ঝরলে আপনারা কি দায় নিতে প্রস্তুত?’
তিনটি কৃষি আইন প্রণয়ন করার আগে সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা করেনি বলেও সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে রায় দেওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন?’
জবাবে এস এ বোবডে বলেন, ‘আমাদের ধৈর্য নিয়ে কোনও জ্ঞান দিতে আসবেন না। এতদিন আমরা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছি, আপনারা কিছুই করতে পারেননি।’
সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লি সীমান্তে নজিরবিহীন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কৃষকেরা। তবে এ শুনানির পরও কৃষকদের তাদের আন্দোলন চালানোর অধিকার থাকবে, শীর্ষ আদালত সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে।